মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বায়ুদূষণের নগরী

এ লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

এক সময় ঢাকাকে বলা হতো মসজিদের শহর। কালের বিবর্তনে মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে বই কমেনি। সে বিবেচনায় বলা যায় ঢাকায় যত মসজিদ আছে তা বিশেষ আর কোনো নগর মহানগরে নেই। মসজিদের নগরী এ অভিধায় গর্ব থাকলেও তা ঢেকে গেছে যানজটের নগরী হিসেবে ঢাকার পরিচিতিতে। নোংরা আবর্জনাময় নগরী হিসেবেও দুর্নাম কম নয়। বায়ুদূষণের নগরী হিসেবে বছরে বারবার শিরোপা লাভ করছে বাংলাদেশের রাজধানী। ইট সিমেন্ট কংক্রিটের এই নগরীতে গাছপালার সংখ্যা দিন দিন কমছে। ভয়াবহ দূষণে ধুলার পুরু আস্তর জমে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে গাছের পাতা। বদলে গেছে দালানকোঠার রং। দোকানের সাইনবোর্ডের লেখা ঢেকে গেছে ধুলায়। পথে বের হলে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে জমছে ধুলাবালি, ঢুকছে নাক-মুখ দিয়ে। রাস্তার ধুলা ঢুকছে ঘরে। দিনে একাধিকবার মুছতে হচ্ছে ফ্লোর-আসবাবপত্র। দূষিত বায়ুতে ঘরে ঘরে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশির রোগী। বর্ষা মৌসুম শেষ হওযার পর গত অক্টোবর থেকে টানা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে এই বিষবায়ু সেবন করছে রাজধানীবাসী। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত দুই মাসে এক দিনও নির্মল বাতাস পায়নি ঢাকাবাসী। ৩১ দিনের মধ্যে ছয় দিন ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর, ২৪ দিন ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর ও এক দিন ছিল বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত। জানুয়ারিতে বাতাসে দূষণের মূল উপাদান অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার গড় ছিল সহনশীল মাত্রার চেয়ে ৩৭ গুণ বেশি। কখনো কখনো তা ৫০ গুণ ছাড়িয়ে গেছে। বায়ুদূষণ নগরবাসীর আয়ু কেড়ে নিচ্ছে নির্দয়ভাবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বায়ুদূষণের নির্দয় শিকার। রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ অন্যতম দায়ী। দায়ী রাজধানী ঘিরে থাকা অসংখ্যা ইটভাটা। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া গিলে খাচ্ছে মানুষের আয়ু। বায়ুদূষণ বন্ধ করতে হলে এসব দিকে নজর দিতে হবে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ধুলাবালি যাতে না ওড়ে সে ব্যাপারে থাকতে হবে সতর্ক। এ লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর