মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কবরের আজাব ও মুক্তির উপায়

মো. আমিনুল ইসলাম

কবরের আজাব ও মুক্তির উপায়

এই মায়ার পৃথিবী ছেড়ে একদিন আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। এ অমোঘ সত্য। মৃত্যুর পর মুসলমানের প্রথম ঠিকানা হলো কবর। কিংবা বলা যায় পরকালের প্রথম আবাসস্থল হলো কবর। মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত সময়টুকু হচ্ছে কবরের জগৎ। এই অন্তর্বর্তী সময়টুকুকে বলা হয় বারযাখ। কবরের আজাব বা শাস্তি চরম সত্য। রসুল (সা.) কবরের আজাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করতেন। ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি শরিফ, ২৮২২)।

বারযাখের জীবন শুরু হয় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর থেকেই। মৃতের আত্মীয়স্বজনরা যখন দাফন শেষ করে ফিরে আসেন তখন দুজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করবেন। এই দুই ফেরেশতার নাম ‘মুনকার- নাকির’। মুনকার নাকির শব্দের অর্থ হলো অপছন্দনীয়। এই তিনটি প্রশ্ন আরবিতে করা হবে। প্রথমে জানতে চাওয়া হবে, মান রাব্বুকা? অর্থাৎ তোমার রব বা প্রভু কে? আমরা মনে করছি এটি একটি সহজ প্রশ্ন, ব্যাপারটি তা নয়। দুনিয়ার বুকে আমরা যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একাত্মবাদকে স্বীকার না করি এবং তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে না চলি তাহলে সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করেছে সেদিন তারা বলবে, ‘লা আদরি’ অর্থাৎ আমি কিছুই জানি না। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে ওয়া মা দীনুকা? তোমার দীন কী? এবং শেষ প্রশ্নটি করা হবে ওয়ামান নাবিয়্যুকা? তোমার নবী কে? কিংবা আল্লাহর রসুল (সা.) এর অবয়বের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে এই ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তখন প্রকৃত মুমিন বান্দা সঠিক উত্তর দেবে এবং বলবে, আমার রব আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম আর আমার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আর যারা পাপী বা গুনাহগার ও অবিশ্বাসী তারা উত্তরে বলবে, হা, লা আদরি। হায়, আমি কিছুই জানি না। আর পুণ্যবানদের সঠিক উত্তরের জন্য বলা হবে, তাকে জান্নাতি লেবাস পরিয়ে দাও এবং জান্নাতি শয্যা বিছিয়ে দাও এবং তার কবরকে জান্নাতের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দাও। আর পাপী ও অবিশ্বাসী বান্দার জন্য তখন জাহান্নামের শাস্তি শুরু হয়ে যাবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মউত।’ অর্থাৎ প্রত্যেক জীবনকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৮৫)

আমাদের মনে রাখতে হবে দুনিয়ার জীবন হলো আখেরাতের জীবনের পরীক্ষাস্থল। আল্লাহ বলেন, ‘পুণ্যময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে রয়েছে সার্বভৌমত্ব, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। যিনি মৃত্যু ও জন্ম সৃষ্টি করেছেন এই জন্য যে, তিনি তোমাদের পরীক্ষা করবেন কে তোমাদের মধ্যে আমলের বিবেচনায় উত্তম?  তিনি পরাক্রমশালী ও তিনি ক্ষমাশীল।’ (সুরা আল মুলক, আয়াত ১-২)।

একজন বান্দা হয়তো ভাবতে পারেন এই ইহজীবনে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দুনিয়ার বুকে মুখস্থ করে গেলেই কবরের জীবনে সহজেই প্রশ্ন তিনটির উত্তর দেওয়া যাবে। আসলে তা নয়। এই তিন বিষয়বস্তুর ওপর যার আমল যত বেশি তার জবান থেকে সেই কঠিন সময়ে তার উত্তর সহজভাবে উচ্চারিত হবে। কারও কবর হলো জাহান্নামের একটি গর্ত আর নেককার বান্দার জন্য তা জান্নাতের বাগিচা। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কবরের চেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি।’ (ইবনে মাজাহ, ৪২৬৭)। এই জন্য নবীজি রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তোমরা কবরের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি কামনা করো।’ (তিরমিজি শরিফ, ৩৪০৪)। বর্তমান মানব রচিত জীবন ব্যবস্থায় আমরা সবাই নামধারী মুসলমান। ইসলাম ধর্মকে আমরা উৎসব আর লৌকিকতায় পরিণত করেছি। বাস্তব জীবনে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে আমরা অনুসরণ করছি, যা মুসলমান হিসেবে কাম্য নয়। এ জন্য আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে তা কখনো কবুল করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৮৫)। সুতরাং কবরের জীবনে শান্তি পেতে হলে আমাদের সবার উচিত আল্লাহর আদেশ মেনে চলা। তা না হলে কঠিন শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর