প্রতিটি বিপর্যয়ের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তারা। বেইলি রোড গণহত্যার পর হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান। কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্বহীনতায় তাদের চোখের সামনে বেইলি রোড শুধু নয়, রাজধানীতে যে অসংখ্য মরণকূপ গড়ে উঠেছিল তা ওপেন সিক্রেট। জনস্বার্থে তা দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের থাকলেও তারা দেখে না দেখার ভান করেছেন। এজন্য সংশ্লিষ্টদের পকেট স্ফীত হয়েছে এমন সন্দেহও করা যায়। চারদিকের সমালোচনার মুখে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এসব অভিযানে ধানমন্ডিতে গাউছিয়া টুইন পিক ভবনের ১২টি রেস্টুরেন্ট সিলগালা ও একটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজউক। জিগাতলার সাতমসজিদ রোডে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজার ১১টি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা হয়েছে। কেয়ারি ক্রিসেন্ট ও রূপায়ণ জেড আর প্লাজার চার প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে তিনজনকে আটকও করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিটে সোমবার ১৬টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওইসব রেস্তোরাঁর সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার, কোনোটিতে রান্নার সামগ্রী। আবার কোনোটির ছিল না অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়িও ছিল না কোনো কোনোটির। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁই চলছিল আবাসিক ভবনে। একই দিন সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের অনিয়ম পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। ৪৬ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পর যে অভিযান শুরু হয়েছে তা আরও আগে শুরু হলে বেইলি রোড ট্র্যাজেডির উদ্ভব যে ঘটত না তা সহজে অনুমেয়। তবে এ অভিযান ভোক্তাদের জীবন ঝুঁকিমুক্ত করার; না নিছক লোকদেখানো তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। মানুষের আবেগ থিতিয়ে এলে আবার যে ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টগুলো চালু হবে না তার নিশ্চয়তা চায় সাধারণ মানুষ। তারা আশা করে, রাজউক ও সিটি করপোরেশনের অভিযানগুলো নিছক লোকদেখানো হবে না।
আর কখনো ঘটবে না বেইলি রোডের মতো কোনো ট্র্যাজেডি।