শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বখে যাওয়া তরুণদের আলোর পথে ফেরাতে করণীয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বখে যাওয়া তরুণদের আলোর পথে ফেরাতে করণীয়

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে যতই ভাবি ততই অবাক হই। ছোট্ট একটি দেশে কী নেই। আল্লাহ যেন নিজ হাতে প্রাকৃতিক ধনভান্ডারের মুখ কাত করে রেখেছেন আমাদের দিকে। নদীবিধৌত বাংলাদেশের প্রতিটি দৃশ্যপটই কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনখোরাক। যেদিকে চোখ যায় সবুজের দেখা মেলে। মেলে প্রাণের কল্লোল। কলম ধরলেই কবি মনের সব ভাব গড়িয়ে আসে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ এবং ফররুখ আহমদ পর্যন্ত সবাই বাংলার প্রাকৃতির ধরভান্ডার নিয়ে এত এত লিখেছেন যে, একজীবনে সবগুলো পড়ে বিশ্লেষণ করা প্রায় অসম্ভব। হে আল্লাহ! আপনার দুয়ারে লাখো কোটি অগণিত শোকরিয়া বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে আমাদের কবুল করেছেন। শোকরিয়া বাংলার প্রকৃতির মতো এত প্রাণচাঞ্চল্য সম্পদ আমাদের দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র কোরআনে সুরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আল্লাহ তোমাদের ভিতর সৃজনক্ষমতা দিয়েছেন। সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে তোমরা উন্নতির শিখরে আরোহণ করো। কোনো জাতি যদি হেলায়ফেলায় নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় আল্লাহ সে জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবেন না।’ হে আমার প্রিয় ভাই! একটু গভীরভাবে এ আয়াতটি নিয়ে ভাবুন। এ আয়াতের আলোকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি নিজের সৃজনশীলতার যথাযথ প্রয়োগ করছে? আমাদের শিশুরা কি ফুলের মতো ফুটছে? সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই খবর পাই, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের কিশোর-তরুণরা মাদকের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। মাদকের টাকার জন্য বন্ধু-বান্ধব এমনকি বাবা-মাকেও খুন করতে দ্বিধা করে না। রাজধানীসহ মফস্বলে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর কিশোর গ্যাং। পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে এই কিশোর গ্যাং। একে তো এরা এখনো ছোট। কিন্তু এদের অপরাধ খুনখারাবিতে গিয়ে পৌঁছেছে। কেউ কেউ নারী পাচারও করছে পাশের দেশে। এ অবস্থায় আমাদের প্রজন্মকে খাদের কিনারে দাঁড়ানো ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পার। আমরা যারা অভিভাবক আছি, অনেক দেরি হয়ে গেলেও এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশে ৩ লাখের বেশি মসজিদ আছে। প্রতি শুক্রবার এ দেশে ৩ লাখ মিম্বর থেকে খুতবা দেওয়া হয়। প্রজন্মকে বাঁচাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি ইমামদেরও গুরুত্বপর্ণূ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া মিম্বরের খতিবও তো একজন অভিভাবক। তিনিও তো কারও না কারও পিতা, জেঠা, ভাই। তার আদরের সন্তান, ছোট ভাই, ভাতিজাও আজ মাদকের বিশাল ধ্বংসাত্মক খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। যে কোনো মুহূর্তেই কলিজার টুকরো সন্তান ভয়ংকর রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। জাতির এমন নাজুক সময়ে আলেম সমাজকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ইসলামের স্বর্ণযুগের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, তরুণদের মানস গঠনে আলেম-ইমামদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তরুণরা কী চায়, কীভাবে বললে, উপস্থাপন করলে তারা ইসলামের সুন্দর আদর্শে নিজের জীবন রাঙাবে এসব নিয়ে অভিজ্ঞ আলেমরা গভীরভাবে ভাবতেন। নিজেদের তারুণ্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ সময়ের তরুণদের জন্য পথনির্দেশনা ঠিক করতেন। তবেই সে যুগের তরুণরা হতে পেরেছিল রাজি-গাজালি-জাবির বিন হাইয়্যানের মতো জগদ্বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী।

তরুণ প্রজন্মের বখে যাওয়ার জন্য, মাদক-কিশোর গ্যাং এবং প্রযুক্তি নেশার জন্য দায় সবচেয়ে বেশি আমাদের। আমরা যারা অভিভাবক আছি, সমাজের নেতৃস্থানীয় আলেমসমাজ যারা, তারা কেন যেন তরুণদের মানস বোঝার জন্য ভাবেন না। তাদের ভাব দেখলে, কথা শুনলে মনে হয়, তারুণ্য এবং যৌবনের মতো সোনারাঙা সময় পার না করেই এক লাফে বয়োবৃদ্ধের বন্দরে এসে ভিড়েছে তাদের জীবনের তরী। ফলে এমন মানুষদের কথাবার্তায় তারুণ্যের প্রশংসা থাকে না। থাকে না তরুণদের জন্য দরদ। যে কারণে আজকের তরুণরা দিন দিন ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যারা ধর্মের পথে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে, তারাও কৌতূহলী মনের নানান প্রশ্নকে চুপ করিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে তো বেশি দিন বেশিদূর যাওয়া যায় না। তাই আসুন! আমরা তরুণদের নিয়ে ভাবি। একটি সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলতে সময়-মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করি। মহান আল্লাহ আমাদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা বাড়িয়ে দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর