শিরোনাম
রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানের গুরুত্ব বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

রমজানের গুরুত্ব বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

রমজান মাস সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা যারা ইমান এনেছ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি করে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, আশা করা যায় তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য নেয়ামতের মাস। এই মাসে আল্লাহ রব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ কোরআন নাজিল করেন। রসুল (সা.) এ মাসকে শাহরুন আজিম ও শাহরুন মোবারক বলেছেন। এ মাসেই লুক্কায়িত রয়েছে পবিত্র মহামূল্যবান রজনী লাইলাতুল কদর। আল্লাহ বলেন,  অবশ্যই আমি এ গ্রন্থটি একটি মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি, তুমি কি জান সেই মর্যাদাপূর্ণ রাতটি কী? মর্যাদাপূর্ণ সেই রাতটি হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। (সুরা আল কদর, আয়াত ১-৩)।

রমজান মাস হলো কোরআন, সিয়াম ও তাকওয়া অর্জনের মাস। একজন মুমিন এ মাসে সবচেয়ে বেশি ইবাদত, উত্তম আমল ও সার্বিক কল্যাণ লাভের সুযোগ পায়। এ সময়ের প্রতিটি নেক আমল এত কল্যাণকর যে, তার আমলনামায় সওয়াব অনেকগুণ বৃদ্ধি করে। সুবহানাল্লাহ। এই মাস রহমত, বরকত ও জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির মাস। রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলে বন্দি করা হয়। যাতে আল্লাহর মুমিন বান্দাগণ বেশি বেশি নেক আমল করতে পারেন। রসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে, কেয়ামত দিবসে এ দরজা দিয়ে শুধু রোজা পালনকারী বান্দারাই প্রবেশ করতে পারবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে এবং এই দরজা দিয়ে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি শরিফ, ১৮৯৬)।

আল্লাহ বলেন, রোজার মাস, এমন একটি মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, আর এ কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য পথের দিশা, সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী।  অতএব তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজেই সিয়াম পালনকারীর পুরস্কার হয়ে যাবেন। মানুষের প্রতিটি নেক আমল তার নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু সাওম শুধু আমার জন্য, তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (বুখারি শরিফ ১৯০৪)

তাই মাহে রমজানে আমাদের সবার উচিত মানুষের কল্যাণে কাজ করা আর বেশি বেশি নেক আমল করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। যা কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। যারা এই কাজগুলো করেন তারা যে কত বড় গুনাহের কাজ করছেন তা তারা কখনো ভেবে দেখেন না। অথচ রমজান হলো সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত করা, কিয়ামুল লাইল, তারাবি ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিচারের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় রমজানে রাতে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি ও তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে, তার সারা জীবনের সগিরা গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি শরিফ, ৩৭)।

এ মাসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা,  বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা মুমিন বান্দার কর্তব্য। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করা সবার উচিত। কারণ তিনিই দয়াময়। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসা অধিক সওয়াবের কাজ।

রমজানে আমাদের বেশি বেশি দান সদকা করা উচিত। গরিব আত্মীয়স্বজন, এতিম, অসহায়, বিধবাদের প্রতি সহমর্মী হওয়া ও তাদের এ মাসে বেশি করে দান সদকা করা সবচেয়ে উত্তম। এ মাসে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে মিথ্যা কথা না বলা, সুদ-ঘুষ বর্জন করা, গিবত না করা, ধোঁকাবাজি না করা, অশ্লীল কাজ না করা, গালিগালাজ না করার মতো সব নিন্দনীয় ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। রমজানের উত্তম সুন্নত হলো সাহরি ও ইফতার। রসুল (সা.) বলেন, ইহুদি খ্রিস্টানদের সিয়ামের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (মুসলিম শরিফ ১০৯৬)। আর সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত। রসুল (সা.) সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতেন। (বুখারি শরিফ, ১৯৫৭)। খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। রমজান এলে আমরা ইফতার পার্টির আয়োজন করি। খাওয়ার অপচয় করি। যা নিন্দনীয়। ইসলামে সর্বাবস্থায় অপচয় নিষিদ্ধ। ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় আমাদের সবার বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের রোজা রেখে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

 

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর