রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোহিনুর হীরা

কোহিনুর হীরা

কোহিনুর হীরার ইতিহাস প্রায় ৫০০০ বছরের কাছাকাছি পুরনো। কোহিনুর অর্থ আলোর পাহাড় বা অপূর্ব আলোর ঝলকানি। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গোলকুন্ডা খনি থেকে এই বহুমূল্যবান হীরাটি প্রথম পাওয়া যায়। বলা হয়, এটি নাকি শ্রীকৃষ্ণকে দেওয়া ভগবান সূর্যের একটি উপহার। যা বহুদিন শ্রীকৃষ্ণের কাছে ছিল। এরপর প্রায় ৪ হাজার বছর এই হীরার কোথাও কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। আবার এটি ১৩০৪ সালে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। সে সময়ে এটি মালওয়ার রাজা মেহেলাক দেবের সম্পত্তি ছিল। এরপর আবার ২০০ বছর এর কোনো উল্লেখ ইতিহাসের কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে এর উল্লেখ আবার পাওয়া যায় বাবরনামাতে। সেখানে বলা হয়েছে ১৫২৬ সালে পানি পথের যুদ্ধের সময় গোয়ালিয়রের রাজা বিক্রম জিৎ সিং তার সমস্ত সম্পত্তি সুরক্ষার জন্য আগ্রার কেল্লায় রেখেছিলেন। যার মধ্যে তিনি এই বহু মূল্যবান রত্ন কোহিনুর হীরাটিকেও রেখে ছিলেন। যুদ্ধে জিতে বাবর এই হীরাটিকে নিয়ে নেন।

সে সময়ে এই হীরার চমক এবং সৌন্দর্য দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট বাবর। তখন তিনি এটির নাম দিয়েছিলেন বাবর হীরা। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৩০০ বছর এই হীরা মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পত্তি ছিল। ১৭৩৮ সালের দিকে ইরানি শাসক নাদির শাহ মুঘল সাম্রাজ্যের ওপর আক্রমণ করে। এক বছর পর ১৭৩৯ সালে তিনি মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহকে হারিয়ে তাকে বন্দি করে সমস্ত রাজ্যের সম্পত্তি লুট করে। আর এর মধ্যে সেই মহামূল্যবান হীরাটিও ছিল। কোথাও বলা হয় তিনি  মোহাম্মদ শাহের সঙ্গে নিজের রাজমুকুট অদলবদল করার সময় ছলনার মাধ্যমে এই হীরা নিজের কবজায় করে ফেলেছিলেন। এই হীরা নিয়ে তিনি চলে যান ইরানে। তারপর তিনি এর নাম দেন কোহিনুর।

এরপর এই কোহিনুর হীরা হাতবদল হয়ে পৌঁছে যায় নাদির শাহের নাতি শাহরুখ মির্জার হাতে। তার কাছ থেকে এ হীরা পৌঁছে যায় নাদির শাহের সেনাপতি আহমেদ আবদালির কাছে। আহমেদ আবদালি পরবর্তীকালে আফগানিস্তানে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করলে এই কোহিনুর হীরা তার বংশের কাছেই থেকে যায়। কিন্তু যখন তার বংশধর সুলতান শাহ সুজা এই হীরা লাহোরে নিয়ে যান তখন এ খবর পৌঁছে যায় শিক সাম্রাজ্যের রাজা রণজিৎ সিংয়ের কাছে। এরপর ১৮৩৯ সালে সুলতান শাহ সুজাকে যুদ্ধে হারিয়ে এই হীরা নিজের কবজায় নিয়ে নেন মহারাজা রণজিৎ সিং। মহারাজা রণজিৎ সিং এই হীরাকে তার মুকুটে ব্যবহার করেন। তবে তার মৃত্যুর পর কোহিনুর হীরা চলে আসে তার নাবালক ছেলে দিলীপ সিংয়ের কাছে। তবে ততদিনে ভারতের মাটিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসন শুরু হয়ে গিয়েছিল। ১৮৪৯ সালে মহারাজা দিলীপ সিংয়ের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় দিলীপ সিং ও তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সঙ্গে লাহোর সন্ধি হয় এবং সেই সন্ধিতে বলা হয় দিলীপ সিংয়ের কাছ থেকে কোহিনুর হীরা ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়াকে দেওয়া হবে। এরপর ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসি এই মূল্যবান হীরাটিকে লাহোর থেকে মুম্বাই নিয়ে আসেন এবং সেখান থেকে লন্ডনে পাঠানো হয়। এরপর তেসরা জুলাই ১৮৫০ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়া এই হীরাটিকে নিজের পছন্দমতো ডিজাইনের কাটিং তার মুকুটে ব্যবহার করেন। যা এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজপরিবারেই আছে।

 

                গ্রন্থনা : আরসান আজাদ

সর্বশেষ খবর