সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত

তাওয়াক্কুল অর্থ আল্লাহর ওপর ভরসা করা। যেসব গুণে গুণান্বিত হলে মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তাওয়াক্কুল সেসব গুণের মধ্যে বিশেষভাবে অন্যতম। তাওয়াক্কুল অবলম্বন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা মায়েদা আয়াত-২৩)।  আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারী লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান আয়াত-১৫৯)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তলাক আয়াত-৩)। একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ‘আল্লাহতায়ালার প্রতি যে রূপ তাওয়াক্কুল করা উচিত, তোমরা যদি তাঁর প্রতি সে রূপই তাওয়াক্কুল করতে পার, তবে তিনি তোমাদের রিজিক দান করবেন, যেমন পশু-পক্ষীকে রিজিক দিয়ে থাকেন। পশু-পক্ষীরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেরিয়ে যায় এবং দিন শেষে পূর্ণ উদরে, তৃপ্তি সহকারে খুশি মনে নিজ নিজ বাসস্থানে শান্তি ও নিরাপত্তায় ফিরে আসে’ (তিরমিজি শরিফ)। প্রকান্ড উত্তপ্ত মরুভূমির ওপর দিয়ে অতিক্রমকারী একদল বণিক যখন পথ হারিয়ে পানি পিপাসায় কাতর হয়ে গিয়েছিল, জীবনে বেঁচে থাকার সব রকমের উপকরণ শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন দেখতে পেল জঙ্গলের পাশে একটি পরিত্যক্ত কূপ। কিন্তু একি, পানি যে অনেক নিচে। সেখান থেকে পানি উঠিয়ে পান করার মতো কোনো বালতিও তাদের সঙ্গে নেই। চোখের সামনে কূপের মধ্যে স্বচ্ছ, টলটলে ঠান্ডা পানি থাকা সত্ত্বেও, সামান্য একটি বালতির অভাবে পানি পান করা থেকে তারা ব্যর্থ হলো। জীবন বুঝি আর বাঁচানো গেল না। তাই প্রচ- পিপাসার্ত অবস্থায় কূপের অদূরে একটি গাছের নিচে তারা অন্য কোনো আগমনী বণিক দলের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে লাগল। হয়তো তাদের কাছে বালতি পাওয়া যেতে পারে এ আশায়। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরই জঙ্গল থেকে একদল হরিণ পানি পান করার জন্য সেই একই কূপের কাছে এলো এবং তারা যখন দেখল পানি অনেক নিচে, তখন ওপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল এবং তারপরই নিচের দিকে তাকিয়ে উদর পূর্তি করে পানি পান করে সবাই নাচতে নাচতে বনে অদৃশ্য হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে পিপাসার্ত ক্লান্ত বণিক দল আশ্চর্য হয়ে গেল এবং দৌড়ে এসে দেখল যে, হরিণের পান করার জন্য পানি ওপরে উঠেছিল, সেটা আবার নিচে নেমে গেছে। যার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। বিষয়টি দেখে তাদের বুঝতে বাকি রইল না। বনের হরিণ একমাত্র তাদের সৃষ্টিকর্তা, রিজিকের মালিক আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করে তার কাছে সাহায্য চেয়েছে। তাই আল্লাহপাক তাদের জন্য পানি তাদের মুখের কাছে এনে দিয়েছেন। আর আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে বালতির ওপরে ভরসা করেছি, তাই আল্লাহতায়ালা আমাদের বিমুখ করেছেন। বণিক দল অত্যন্ত অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তওবা করে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য কামনা করল। আল্লাহতায়ালা তাদের তওবা কবুল করলেন এবং সাহায্য করলেন। সেজদা থেকে উঠে দেখে একদল বণিক বালতি নিয়ে কূপের পাশেই হাজির। সুবহানাল্লাহ।

যখন খোদাই দাবিকারী নমরুদ কর্তৃক নির্মিত প্রকান্ড অগ্নিকান্ডে তারই নির্দেশে কাফেররা আল্লাহর প্রিয় খলিল হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে চড়ক গাছে বেঁধে নিক্ষেপ করছিল, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো সাহায্যকারী ফেরেশতাদের বিমুখ করে দিয়ে তিনি শুধুই বলছিলেন : একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি আমার উত্তম কর্ম নির্ধারক। আল্লাহতায়ালা হজরত ইব্রাহিমের তাওয়াক্কুল ও পূর্ণাঙ্গ ভরসাপূর্ণ উত্তর শুনে বড়ই খুশি হলেন। ইব্রাহিমের সাহাযার্থে সরাসরি আগুনের প্রতি নোটিস জারি করলেন।

হে আগুন! তুমি ইব্রাহিমের প্রতি শান্তিদায়ক ঠান্ডা হয়ে যাও (সুরা আম্বিয়া আয়াত-৬৯)। সুবহানাল্লাহ। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ওপর তাওয়াক্কুল করলে, তার বিনিময় এরূপই হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি মুসলিমের জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে, সব সময়, সর্বাবস্থায়, সুখে-দুঃখে, সচ্ছলতা অসচ্ছলতায়, আল্লাহর ওপরই একমাত্র ভরসা রাখা উচিত।

কেননা ভালোমন্দ সবকিছুই একমাত্র তাঁর নির্দেশে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণেই হয়ে থাকে। মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- একমাত্র আল্লাহতায়ালা ছাড়া তোমার দুঃখ-দুর্দশা গোছানোর কেউ নেই, আর যদি তিনি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ রোখার ক্ষমতা কারও নেই। তিনি যার জন্য যা চান তাই তার জন্য হবে। তাই সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া এবং তাঁর ওপরে তাওয়াক্কুল করা কর্তব্য। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (আল হাদিস)

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলার বাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর