মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মানব পাচার

প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে

মানব পাচারের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিত হয়ে উঠছে বাংলাদেশের নাম। এ জঘন্যতম অপরাধে কারা জড়িত তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। জনপ্রতিনিধি ও সমাজনেতাদেরও তা জানা। কিন্তু অধঃপতিত এ সমাজে সৎ মানুষের চেয়ে অসতের কদর ও কৃতিত্ব বেশি। ফলে মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যেই চালায় তাদের তৎপরতা। সারা দেশে এমন শকুনদের অপতৎপরতা রয়েছে। তবে মাদারীপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় পাচারকারীদের জাল বিছানো ব্যাপকভাবে। লিবিয়া হয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাঠানোর ‘মরণযাত্রা’র জন্য মাদারীপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। তারা জেলার বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে তারা। ইতালি পাঠানোর কথা বলে তারা জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে মানুষ তাদের জমিজমা বিক্রি করে দিচ্ছে। ঢাকা ও দুবাইয়ে অবস্থান করে লিবিয়া-বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় দালালরা। ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে প্রথমে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে দালালরা বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে লিবিয়া পাঠায়। এরপর সেখান থেকে নৌপথে ইউরোপের ইতালি পাঠানোর কথা বলে। বাস্তবে বহু ক্ষেত্রে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিদেশগামীরা স্থানীয় মাফিয়া চক্রের খপ্পরে পড়ে। টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেককেই প্রাণ হারাতে হয় ভূমধ্যসাগরে। কৌশলে আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য লিবীয় মাফিয়া চক্রের কাছে বিদেশগামীদের ধরিয়ে দেয় দেশি দালাল চক্র। মাফিয়ারা তাদের লিবিয়ার বিভিন্ন টর্চার সেলে নিয়ে বন্দি করে রাখে। সেখানে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তারপর ১০-১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বিদেশবিভুঁইয়ে হারাতে হয় প্রাণ। ব্যর্থ রাষ্ট্র লিবিয়ায় কার্যত কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই। ফলে মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মানব পাচার বন্ধে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে হবে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে নিতে হবে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা।

সর্বশেষ খবর