শিরোনাম
সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানের তাৎপর্য করণীয় ও বর্জনীয়

মো. আমিনুল ইসলাম

রমজানের তাৎপর্য করণীয় ও বর্জনীয়

পবিত্র মাস মাহে রমজান চলমান। আমরা সবাই ভোররাতে সাহরি খেয়ে সন্ধ্যায় ইফতার করে রোজা ভঙ্গ করি। এ মাস তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথম ১০ দিন রহমত, মাঝের ১০ দিন ক্ষমা আর তৃতীয় ১০ দিন আগুন থেকে মুক্তির জন্য বরাদ্দ। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, শাবান মাসের শেষ দিনে রসুল (সা.) মিম্বরে বসে বললেন, ‘তোমাদের সামনে এক মহা বরকতময় মাস আগতপ্রায়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ মাসে দিনের বেলা রোজা ফরজ করেছেন আর রাতের ইবাদতকে করেছেন নফল। এ মাসে যে ব্যক্তি নেক আমলের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য ইবাদত করবে তার অবস্থা এরূপ যে সে অন্য মাসে ফরজ আদায় করছে। অর্থাৎ নফলের সওয়াব ফরজের সমান হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে সঠিকভাবে ফরজ আদায় করবে সে ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে।’ সুবহানাল্লাহ। রমজান মাসে একটি ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি পায়। এ মাসটি হলো কল্যাণ ও নেক আমল বেশি বেশি করে তাকওয়া অর্জনের মাস। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে এটা তার জন্য গুনাহ মাফের কাফফারা হয়ে যাবে এবং তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির সহায়ক হবে। এতে তার সওয়াবের কিছুই কমতি হবে না। এ কথা শুনে উপস্থিত সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রসুল (সা.) আমাদের মধ্যে অনেকেরই সামর্থ্য নেই যে রোজাদারকে ভালোভাবে ইফতার করাবে। আর এমন সওয়াব ও লাভ করবে। এ কথা শুনে আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এসব ব্যক্তিকে এমন সব পুরস্কার দেবেন যারা এক ঢোক দুধ, একটি খেজুর, এমনকি এক ঢোক পানি দিয়েও যদি রোজাদারকে ইফতার করান। আর যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন আমার হাউসে কাওসার থেকে এমন পানি পান করাবেন যে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করার আগে তার আর পিপাসা লাগবে না। এটা এমন একটি মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমত, মাঝের ১০ দিন ক্ষমা ও শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি রমজানে তার অধীনস্থ কর্মচারীদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকি, কিতাবুস সাওম)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ। (মুসনাদে আহমদ)। রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত। (বুখারি শরিফ)। রোজার দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- সাহরি খাওয়া ও ইফতার করা। রসুল (সা.) বলেছেন, সাহরি খাওয়া বরকত। একে পরিত্যাগ কর না, যদিও এক ঢোক পানির মাধ্যমেও হয়। আল্লাহ ও ফেরেশতারা সাহরি ভক্ষণকারীদের জন্য দোয়া করেন। (মুসনাদে আহমদ)।

আর সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আল্লাহ এ সময় বান্দার আরজ কবুল করেন। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ বলেন, ‘আমার কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে শিগগিরই ইফতার করে।’ সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে একজন বান্দা তার জীবনে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জীবনকে সাজাতে সামর্থ্য লাভ করে।

রোজা ভঙ্গ না হওয়ার কারণগুলো : ১. ভুল করে কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না। ২. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে, এমনকি বমি পেটের ভিতর ঢুকে গেলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। ৩. রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে। তবে রোজা আছি এ কথাটা মনে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। ৪. ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন নিলে। ৫. থুতু কফ গিলে ফেললে ৬. নাক দিয়ে রক্ত পড়লে ৭. ইনসুলিন, ইনহেলার, নেবুলাইজ, ডায়ালাইসিস করলে ৮. কোনো মন্দ কাজ করলে, মন্দ কথাবার্তা বললে বা মন্দ কিছু দেখলে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে এসব থেকে বিরত থাকা উচিত। ৯. টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে। ১০. রক্ত পরীক্ষা করতে দিলে সাওম নষ্ট হয় না।

রোজা ভঙ্গের কারণগুলো : ১. ইচ্ছাকৃত পানাহার বা ধূমপান করা। ২. গুল ব্যবহার করা ৩. ইচ্ছাকৃত বমি করা ৪. যৌন মিলন করা ৫. এমন ইনজেকশন পুশ করা যাতে ক্ষুধা নিবৃত্ত হওয়া। ৬. মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়া।  রমজান মাসের অন্যতম নফল ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। এ নামাজে ৪ রাকাত করে ২০ রাকাত সালাত আদায় করা অতি উত্তম। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রব্বুল আলামিন রমজানের রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি সুন্নতরূপে তারাবির নামাজ চালু করেছি। রসুল (সা.) তারাবির নামাজ পড়েছেন, কিন্তু প্রতি রাতে তিনি তা আদায় করেননি। তিনি নিজেই বলেছেন, রোজার মাসে এই নামাজ তোমাদের প্রতি ফরজ হয়ে যায় কি না তার ভয় আমি করছি। তারাবির নামাজ মুস্তাহাব। ফরজ বা ওয়াজিব নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে, যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে সে পরবর্তী সময়ে গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন আদায় করে নেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের রোজার গুরুত্ব তাৎপর্য বুঝে সাওমগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর