শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাহরি, ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

সাহরি, ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত

পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক মুসলমানদের জন্য মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে একটি বরকতময় মাস। এ মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত দিয়ে ভরপুর। অপর ২০ দিন মহান রব্বুল আলামিনের সর্বোচ্চ ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিশেষ ঘোষণা এবং ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এ মাস কোরআন নাজিলের মাস। এ মাস তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস। এ মাস জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাস দুনিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা, সুস্থতা ও হালাল রিজিক চাওয়ার মাস। এক কথায় বারোটি মাসের মধ্যে মুসলমানদের জন্য এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি রোজা শুরু হয় সাহরির মাধ্যমে এবং সমাপ্তি হয় ইফতারের মাধ্যমে। তাই রোজার শুরুতে সাহরি খাওয়া সুন্নত। সাহরি খাওয়াতে বরকত রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরির মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে। হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আমাদের ও আহলে কিতাবের (ইহুদি নাসারা) রোজার মধ্যে তফাৎ হলো সাহরি খাওয়া। সাহরির সময় হলো, শেষ রাত সুবহে সাদিক পর্যন্ত। ফকিহ আবুল লাইস (রা.) বলেন, সাহরির সময় হলো রাতের শেষ ষষ্ঠাংশ। অনেকে অলসতাবসত অথবা ঘুমের অতিরিক্ত চাপ থাকার কারণে, অথবা সাহরি খাওয়ার প্রয়োজন না থাকার কারণে, সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার নিয়ত করেন। এটা কখনো উচিত নয়। এটা সুন্নতের খেলাফ। সুন্নত হলো সাহরি খেয়েই রোজা রাখা। যদি কারও প্রয়োজন নাও হয়, তদুপরি একটু পানি খেয়েও সাহরির সুন্নত আদায় করে নেওয়া উত্তম। সাহরি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরুহ। অর্থাৎ এমন সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যে, সে সময় সাহরির সময় আছে কি না তাতে সন্দেহ জাগে। কোনো কোনো মানুষ মনে করে, আজান না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া জায়েজ। এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। কেননা এতে আপনার রোজা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। কারণ যদি কোথাও একটু দেরি করে আজান হয়, তাহলে আপনার খাওয়া হয়ে যাবে সুবহে সাদিকের পরে, ফলে আপনার রোজাটি সহিহ হবে না। কেননা রোজাদারের জন্য সুবহে সাদিকের পরে কোনোক্রমেই পানাহার বৈধ নয়। রেডিওতে অথবা মহল্লায় আজান হোক বা না হোক। তাই এ ব্যাপারে ঘড়ির সময় দেখে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। রমজান মাসে সাহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত যদি সময় থাকে, এ সময়ে স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ। অতঃপর সুবহে সাদিকের পরেও গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করে নেবে। এতে রোজা সহিহ হবে, কোনো প্রকারের ক্ষতি হবে না (আলমগীরী, প্রথম খন্ড-২০৭)। অনেকে মনে করেন, রোজার নিয়ত একবার করার পর সাহরির সময় বাকি থাকলেও আর কোনো প্রকার কিছু খাওয়া উচিত নয়, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্বে, পানাহার ইত্যাদি সবকিছুই জায়েজ আছে। পূর্বে নিয়ত করুক বা না করুক। (কাওয়াইদুল ফিকহি-১৮৪) ঘুমের ঘোরে যদি সাহরির সময় চলে যায়, এমনকি ফজরের নামাজ ও চলে যায়, অথচ রোজার নিয়ত করারও সুযোগ হয়নি, তদুপরি তার রোজা সহিহ হয়ে যাবে। তাই রোজা হবে না মনে করে, রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ হবে না। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেন : ‘আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ওই বান্দাগণ, যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে।’ অন্য হাদিসে আছে, সে পর্যন্ত দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে, যতদিন মানুষ শিগগিরই ইফতার করবে। কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিলম্বিত ইফতার করত (আলমগীরী)। মাগরিব নামাজের পূর্বে ইফতার করা মুস্তাহাব। সূর্যাস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে গেলে, বিলম্ব না করে ইফতার করা মুস্তাহাব। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে কিছু বিলম্বে ইফতার করা উচিত। তবে যখন সূর্যাস্ত যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণমাত্রায় নিশ্চিত হবে, তখনই ইফতার করবে। খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম, তা না থাকলে কোনো ফল বা মিষ্টি জাতীয় জিনিস দ্বারা ইফতার করবে। তাও না থাকলে পানি, শরবত বা অন্য কিছু দিয়ে ইফতার করবে। রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত : হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবিগণ আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করাতে সক্ষম নই। রসুলুল্লাহ বললেন, পানি মিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকেও এ পরিমাণ সওয়াব দান করবেন, আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে আমার হাউসে কাউসার হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। আল হাদিস। আল্লাহ আমাদের পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের রোজা সঠিকভাবে রাখার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব; কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর