রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নেক আমলের মাস পবিত্র মাহে রমজান

মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

নেক আমলের মাস পবিত্র মাহে রমজান

আল্লাহতায়ালার অপার নেয়ামত পবিত্র রমজান মাস। এ মাহে রমজান ইবাদতের বসন্তকাল। নেক আমলের সওয়াব অর্জন করার ভরা মৌসুম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা আয়াত-১৮৫)। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাস। প্রিয় রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। এ মাসে আল্লাহ একটি রাত দান করেছেন, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো আল্লাহর মহাকল্যাণ থেকে।’ (ইবনে মাজাহ)। এ মাসে রোজা রাখা ফরজ। এ মাসে রয়েছে অনেক নেক আমল। আমরা কয়েকটি বিশেষ আমল উল্লেখ করছি। আমলগুলো কবুল হবে যদি নিচের এ দুটি শর্ত পাওয়া যায়।

এক. সহিহ নিয়ত আর ইখলাস। একনিষ্ঠতার সঙ্গে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নেক আমল করা।

দুই. ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুকরণ ও অনুসরণ করা। আল কোরআন বলছে, ‘আর রসুল (সা.) তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও।’ (সুরা হাশর, আয়াত ৭)।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের অনুকরণ অনুসরণে আমাদের রোজা পালন করতে হবে। আসুন, তাহলে রমজানের বিশেষ আমলগুলো জেনে নিই।

১. পূর্বশর্ত হালাল রুজি : আহার ও রুজি হারাম হলে আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তির কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। মাহে রমজানে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। রসুল (সা.) রমজানে হালাল রুজির প্রতি যত্নবান ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যার রমজান নিরাপদে কাটল, তার পুরো বছরই নিরাপদে কাটল।’ (তিরমিজি)।

২. ফরজ ইবাদতের দিকে মনোনিবেশ করা : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, জাকাত আদায়সহ ফরজ ওয়াজিব সুন্নত নফল ইবাদতের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

৩. বেশি বেশি দোয়া ও ইশতিগফার করা : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়।’

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না তার ওপর লানত, ধ্বংস।’ (বুখারি)। এ মাসে বেশি করে দোয়া ইশতিগফার, দরুদ শরিফ মিলাদ কিয়াম পালন করতে হবে।

৪. পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা : মাহে রমজান কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসে কোরআন তেলাওয়াত, অর্থ বোঝা, তাফসির বোঝা, যারা কোরআন পড়তে পারে না তাদের সহযোগিতা করা একান্ত কর্তব্য। কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে ব্যক্তিগত পারিবারিক, সামাজিকসহ সবখানে।

৫. তারাবির নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া : পবিত্র রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এ তারাবির নামাজ। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ২০ রাকাত তারাবি নামাজে পবিত্র কোরআনের খতমে মনের প্রশান্তি আসে। অনেকে ৮ রাকাত ২০ রাকাত নিয়ে মতানৈক্য করেন। আমরা ২০ রাকাতই পড়ব। এটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামগণের আমল।

হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-২/২৯৪, হাদিস নম্বর-৭৬৯২)।

হজরত সায়েব ইবন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, ‘হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সময় আমরা রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি পড়তাম।’ (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, খন্ড ২, পৃ. ৪৯৬)

৬. দান সদকা করা : মাহে রমজানে দান সদকা করে অনাথ, এতিম, দুস্থ, গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। মাহে রমজানে প্রিয় নবীজি প্রবাহিত বাতাসের ন্যায় দান সদকা করতেন। এক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীদের প্রাধান্য দিতে হবে।

৭. ইতিকাফ করা : বুখারিতে বর্ণিত, ‘হুজুর (সা.) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছরও ২০ দিন ইতিকাফ করেন। রসুল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীরা নিয়মিত ইতিকাফ করতেন।’

৮. শবেকদর তালাশ : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান, সওয়াব ও ইখলাসের সঙ্গে শবেকদরে ইবাদত করল তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)।

৯. বিজোড় রাতে ইবাদত : মাহে রমজানের বিজোড় রাত তথা ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রাতে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করতে হবে।

১০. সদকাতুল ফিতির আদায় করা : মাহে রমজানে সদাকাতুল ফিতির আদায় করা ওয়াজিব। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সদাকাতুল ফিতিরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। আমরা সর্বোচ্চ টাকার পরিমাণ দিয়ে আদায় করার চেষ্টা করব। আল্লাহতায়ালা আমাদের সিয়াম কিয়ামসহ সব ইবাদত বন্দেগি কবুল করুন। আমিন।

লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২ ঢাকা

সর্বশেষ খবর