বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোন উদ্দেশ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

কোন উদ্দেশ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা

কদিন আগে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবির কথা শুনে অবাক হইনি এ জন্য যে, দলটির শুরুই হয়েছিল ভারত বিরোধিতা এবং হিন্দু বিদ্বেষের ওপর ভর করে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং মুখোশধারী খোন্দকার মোশতাক যে পাকিস্তানি প্রভু এবং কিসিঞ্জার-নিক্সনের আজ্ঞাবাহী হয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলেন, সে কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বন্দুকের জোরে ক্ষমতা পেয়েই জিয়া-মোশতাক গং বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করে ভারত বিদ্বেষে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, তার অকট্য সাক্ষী ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমানকে ত্রাণকর্তা হিসেবে পেয়ে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম এবং যাদু মিয়াসহ কট্টর চীনপন্থি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন তারা সবাই জিয়াউর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় একত্রিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি নামক দলে যোগ দিয়েছিলেন। বিএনপির বর্তমান নেতাদের মধ্যে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা অথবা যাদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। তাদের পারিবারিক পরিচয় খুঁজলে সে কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ভারত যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অপরিহার্য সহায়কশক্তি ছিল, সে কথা জিয়া-মোশতাক এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া কখনো না বলে ভারতবিরোধী প্রচারণাকেই তাদের উপজীব্য হিসেবে ধরে নিয়ে কাজ করেছেন। সুতরাং ভারত বিদ্বেষ তাদের মজ্জাগত।

ইদানীং ভারত হটাও কথাটির সূত্রপাত ঘটে মালদ্বীপে। অতীতে সে দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজ্জু নামক ঘোর চীনপন্থি ব্যক্তি অল্প ব্যবধানে দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই দৃশ্যত চীনের প্ররোচনায় ভারতবিদ্বেষী নীতি অনুসরণ শুরু করে ভারতীয় দ্রব্যাদি বর্জনের ডাক দিয়ে সে দেশেরই সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। এর ফলে ধস নেমেছে মালদ্বীপের অর্থনীতিতে। মালদ্বীপের অর্থনীতি বহুলাংশে পর্যটকনির্ভর। পর্যটকদের একটা বড় অংশ ভারতবাসী। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ভারতবিরোধী পদক্ষেপ শুরু করে ভারত সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বললে ভারতের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে সে দেশ থেকে মালদ্বীপগামী পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পেলে সে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি নিশাদ দিল্লি গমন করে ভারতবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনুরোধ করেন তারা যেন আগের মতো মালদ্বীপ ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন। মালদ্বীপের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে চলে গেলে দেশটিকে আন্তর্জাতিক তহবিলের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এখন মালদ্বীপ ভারতের কাছে তাদের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধরনা দিচ্ছে। এরই মধ্যে মালদ্বীপের সংসদের বেশ কিছু সদস্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে অপসারণের জন্য ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে মুইজ্জু সমর্থক এবং বিরোধী নেতাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে। দেশটির বহু লোক মুইজ্জুর ভারতবিরোধী অবস্থানের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন, রাস্তায় নেমেছেন।

একটি অখন্ডনীয় সত্য হচ্ছে এই যে, প্রতিবেশী বদল করা যায় না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিটি দেশের জন্যই অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশও খুদে এবং অপেক্ষাকৃত দরিদ্র প্রতিবেশী মেক্সিকোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। এ কথাগুলো ভারত-বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার হাত না বাড়ালে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ অনেক দীর্ঘস্থায়ী হতো, আরও অনেক প্রাণহানি ঘটত, অনেক বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হতো-এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে কমবেশি ১৫ হাজার ভারতীয় সৈন্য শহীদ হয়েছিলেন, লাখ লাখ বাস্তচ্যুত মানুষকে ভারত নিজের নিরাপত্তা বাজি রেখে আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা, প্রশিক্ষণ, খাবার, অস্ত্র দিয়েছিল। আজ যারা প্রতিনিয়ত ভারত বিরোধিতায় সোচ্চার, তারা বা তাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সালেও ভারতবিদ্বেষী ছিল শুধু এই কারণে যে, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়কশক্তি ছিল। পাকিস্তান ভেঙে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের অভ্যুদয় তারা মোটেও মেনে নিতে পারেননি বলেই ভারত বিদ্বেষ। আজ যারা ভারতবিরোধী কথা বলছেন বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশের পারিবারিক পরিচয় নিলে দেখা যাবে যে তাদের পিতা-মাতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। রিজভী সাহেবের পিতা ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে, যখন মুক্তিযুদ্ধ তুঙ্গে, তখন পাকিস্তান পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। টেলিভিশনে এসে বা বিদেশি পত্রিকায় ভারতবিদ্বেষী কথা বলা এবং লেখার কাজে ব্যস্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক শাহেদ এনাম খানের পিতা মেজর এনামুল হক মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসকাল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত আধিকারিক হিসেবে বাংলাদেশে ছিলেন এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া তাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক পদে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অন্যদের পারিবারিক ইতিহাস ঘাটলেও একই ছবি পাওয়া যাবে। তারা যে ধর্মীয় কারণে ভারত বিদ্বেষী ভূমিকায় রয়েছেন, তা নয়। তাহলে তারা চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন কেননা চীনের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত মসজিদ ভাঙা হচ্ছে, মুসলমানদের আটক করা হচ্ছে, তাদের বন্দিশালায় নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, মুসলমান মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, তাদের বন্ধ্যা করা হচ্ছে। এসব যে শুধু উইঘুর এলাকায়ই হচ্ছে তা নয়, চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও মসজিদ ভাঙাসহ ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নির্দেশে। এসব ব্যক্তিকে মজ্জাগত ভারতবিরোধী বলাই সমীচীন। ভারত বিরোধিতার কারণে যে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার স্বপ্নে তারা এখনো বিভোর। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা ভারতবিরোধী অবস্থান না নিলে বহু দশক আগেই গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, দেশ অনেক আগেই উন্নয়নের পথ ধরে এগোতে পারত। আজ যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবি তুলছেন, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ফলে বাংলাদেশ এবং তার জনগণ মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ ভারত থেকে আমদানিকৃত পিঁয়াজ এবং চিনির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এগুলো বর্জন করা হলে দেশবাসীকে মহাসংকট পোহাতে হবে। করোনাকালে ভারতীয় টিকা বর্জন করলে বহু লোককে কভিড রোগে প্রাণ দিতে হতো। যে ডাক্তার জাফরুল্লা ভারতের করোনা টিকাকে বুড়িগঙ্গার পানি বলে উল্লেখ করেছিলেন, তিনিও ভারতীয় টিকা নিতে ভুল করেননি। খালেদা জিয়াও একই ধরনের কথা বলে অবশেষে ভারতীয় টিকাই নিয়েছিলেন। ভারত কিছু কিছু দ্রব্য রপ্তানি বন্ধ করলে যে বাংলাদেশের মানুষ কঠোর সমস্যার সম্মুখীন হবে, সে কথাও রিজভী সাহেবদের মতো মজ্জাগত ভারত বিরোধীদের অজানা নয়। রুহুল কবির রিজভী তার ভারতে তৈরি চাদরটি ফেলে দিলেও, তার বাড়িতে প্রচুর ভারতীয় বস্ত্রাদি এবং পিঁয়াজ চিনিসহ বহু ভারতীয় পণ্য রয়েছে বলে রব রয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মন্তব্য খুবই গুরুত্ববাহী। তারা বলেছেন, ঈদের আগে দেশে দ্রব্য ঘাটতি সৃষ্টি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলা। ভারতীয় পণ্য বর্জন দাবির আরও বহুবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর ফলে ভারতবাসীদের মনে এমন ভাব জন্মাতে পারে যে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিদ্বেষী আর তাই তাদের মধ্যেও বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব জাগতে পারে যার ফলে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে একের প্রতি অন্যের বিদ্বেষ সৃষ্টি হলে সৌহার্দ বিনষ্ট হতে পারে, অথচ উভয় দেশের স্বার্থেই সৌহার্দ খুবই প্রয়োজন। বর্জনের দাবি করা মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য হলেও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এগুলোকে এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যা থেকে মনে হতে পারে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বর্জনের পক্ষে। সামাজিক মাধ্যমে যারা ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া লোক, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পণ্য বর্জন করলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বৈকি। আমাদের দেশে তৈরি প্রচুর পরিমাণ খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। তাছাড়া ভারতে উৎপন্ন পিঁয়াজ, চিনি এমনকি চালও প্রায়ই আমাদের আমদানি করতে হয়। ভারত এসব পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলে, বাংলাদেশের মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এ মুহূর্তেই ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পিঁয়াজ এবং চিনি আমদানি করতে হচ্ছে, যা না হলে ইফতারে পিঁয়াজনির্ভর খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে যেত। উল্লেখযোগ্য, ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম পিঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ। দেখা গেছে যে, ভারত বাংলাদেশে ব্যবহার্য কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা করলেই সে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আজ যারা বর্জনের দাবি করছেন বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দিলে তারাই আবার ভারতের সমালোচনায় সোচ্চার হন। যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছে, তারা কিন্তু ভারতের পিঁয়াজ দিয়ে তৈরি খাবার ঠিকই খাচ্ছেন, পিঁয়াজু ছাড়া তাদের ইফতার হয় না। আমাদের রেলগাড়ির ইঞ্জিন এবং বগিসমূহের বিরাট অংশ আসছে ভারত থেকে। ভারতের টাটা কোম্পানির গাড়ির কাফেলা রাস্তায় বেরোলেই দেখা যায়। ভারত থেকে না এনে অন্য দেশ থেকে এগুলো আমদানি করা হলে ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে। সিমেন্ট তৈরির জন্য যে পাথর অপরিহার্য তা আমরা ভারত থেকেই আমদানি করে থাকি। যারা বর্জনের স্লোগান দিচ্ছেন, তারা কি ভারতীয় ট্রেনের বগি বা গাড়িতে চড়া বা মালামাল বহন বন্ধ করেছেন বা করবেন, ভারতের পাথর দিয়ে তৈরি সিমেন্টের ব্যবহার বন্ধ করবেন? ড. জাফরুল্লা, খালেদা জিয়াসহ অন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দ ভারতের করোনা টিকার বিরুদ্ধে কথা বলার পর সেই টিকা গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে যারা বর্জনের কথা বলছেন, তারাও ব্যাপকভাবে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করছেন। তাদের স্ত্রী-কন্যাদের গায়ে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় শাড়ি, তাদের গায়ে ভারতীয় পাঞ্জাবি। বিএনপি নেতা মেজর হাফিজ ভারত বর্জনের কথা বললেও তিনি নিজে ঠিকই সম্প্রতি ভারত গিয়েছিলেন চিকিৎসা গ্রহণের জন্য। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অপরিহার্য। এ সম্পর্ক যারা নষ্ট করতে চান তাদের দেশের শত্রু বলে আখ্যায়িত করাই সঠিক। তবে তাদের উদ্দেশ্য যে ভিন্ন তা কারও অজানা নেই। তারা পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশেই এসব করছেন। মজার ব্যাপার হলো এই যে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা কয়েক মাস আগেও ভারতীয় নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তাদের কাছে ধরনা দিয়ে, নাকে খত দেওয়ার মতো বলেছিলেন তারা আর ভারত বিরোধিতা করবেন না। সৌভাগ্যের কথা হলো এই যে বাংলাদেশের সিংহ ভাগ মানুষ তাদের কথায় কর্ণপাত করছেন না, পণ্য বর্জন করছেন না। এমনকি যারা বর্জনের কথা বলে মুখে ঢেউ তুলছেন, তারা নিজেরাও ভারতীয় পণ্য বর্জন করছেন না। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মজ্জাগত ভারতবিদ্বেষী নয়। ভারত বর্জনের কথা বলে কিছু লোক যে বাংলাদেশেরই ক্ষতি সাধন করছেন এ কথা জনগণের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। প্রতিদিন যে হারে মানুষ ভারতীয় ভিসা নিচ্ছেন, তা প্রমাণ করে মানুষ ভারতবিরোধী নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান প্রয়োজন, আর সে জন্য ভারতের সাহায্যের বিকল্প নেই। ভারতবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা যেন মালদ্বীপের অবস্থায় না পড়ি, সেদিকে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সচেতন রয়েছেন।

                লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

সর্বশেষ খবর