শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাকাতের গুরুত্ব ও মাসায়েল

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

জাকাতের গুরুত্ব ও মাসায়েল

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক সম্পদশালী ব্যক্তির পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করা ফরজ। অধিকাংশের মতে, দ্বিতীয় হিজরি সন থেকে জাকাত ফরজ হয়েছে। জাকাতের আভিধানিক অর্থ বর্ধিত ও পবিত্র। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তির ধন সম্পদ পবিত্র হয় ও বৃদ্ধি পায়। জাকাত ও ওশর দেওয়ার ফলে মালে বরকত হয় ও দোষ-ত্রুটি মুক্ত হয়ে পবিত্র হয়। জাকাত না দেওয়া কুফুরির শামিল। পবিত্র কোরআনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৮২ আয়াতে জাকাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাকাত শব্দ দ্বারা ৩০ বার, ইনফাক শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং সদাকা শব্দ দ্বারা ৯ বার। মোট ৮২ বার জাকাতের আদেশ আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন।

আল কোরআনের বাণী : নিশ্চয় যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করেছে, জাকাত আদায় করেছে, তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না। (সুরা আল বাকারা, আয়াত-২৭৭)। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ (রা.)-কে ইয়েমেন প্রদেশে (গভর্নর রূপে) প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর তাদের মালের মধ্যে জাকাত করেছেন, তা তাদের সম্পদশালীদের কাছ হতে আদায় করে গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। (বুখারি মুসলিম)। জাকাত অস্বীকারকারীদের বিষয়ে হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব। (বুখারি) জাকাত অনাদায়ে শাস্তি : আর যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’। (সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত : ৩৫, ৩৬)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যাকে আল্লাহতায়ালা ধন সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এ মালের জাকাত আদায় করেনি,  কেয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া হবে, সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড় দিয়ে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ’। (বুখারি)

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক, সাড়ে ৭ ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা তার সমমূল্য যদি এক বছর কারও মালিকানায় থাকে তার ওপর জাকাত দেওয়া ফরজ।

ঁজাকাত আদায়ের খাত : নিশ্চয়ই সদাকা (জাকাত) হচ্ছে ১. ফকির ২. মিসকিনদের জন্য এবং ৩. এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, ৪. আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য (তা বণ্টন করা যায়) ইসলামের জন্য আকৃষ্ট, নওমুসলিম ৫. দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে (ইসলামের প্রথম যুগে যখন দাস প্রথা ছিল) ৬. ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, ৭. আল্লাহর রাস্তায় এবং ৮. মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৬০)

আত্মীয়স্বজনকে জাকাত দেওয়া যাবে কি না? মূলত সহোদর ভাই-বোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামি যেহেতু উসুল বা ফুরু- অর্থাৎ জাকাতদাতার মূল বা শাখা নয়। তাই তাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা জাকাত গ্রহণের উপযোগী হয়। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হেদায়া : ১/২০৬)। কোনো নর বা নারী কর্তৃক জাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুফুসহ সব দরিদ্র আত্মীয়স্বজনকে দিতে কোনো ধরনের আপত্তি নেই। তবে পিতা ও মাতা ব্যতীত তাদের বংশীয় স্তর যত ঊর্ধ্বে হোক না কেন (অর্থাৎ দাদা, পরদাদা, নানা, পরনানা, দাদি, পরদাদি, নানি, পরনানি) এবং ছেলে ও মেয়ে সন্তান ব্যতীত, তাদের বংশীয় স্তর যত নিচে হোক না কেন, এরা গরিব হলেও এদের জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না; বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের খরচ চালানো আবশ্যিক কর্তব্য যদি নিজেদের খরচ চালানোর মতো তাদের অন্য কেউ না থাকে। সোনা, রুপা নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য, খনিজদ্রব্য, দামের শতকরা আড়াই ভাগ, কৃষি উৎপাদন সেচের মাধ্যমে হলে শতকরা ৫ ভাগ, বৃষ্টির পানিতে হলে শতকরা ১০ ভাগ ওশর দিতে হবে। ব্যক্তিগত বাড়ি, বাড়ি তৈরির প্লট, ব্যবহারের গাড়ি, ফার্নিচার, ফ্রিজ ইত্যাদিতে জাকাত দিতে হবে না। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিকভাগে জাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

♦ লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

 

 

 

সর্বশেষ খবর