রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইতিকাফের গুরুত্ব ও বিধান

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

ইতিকাফের গুরুত্ব ও বিধান

ইতিকাফ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অবস্থান করা। মসজিদে অবস্থান করাকে ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়। মসজিদে ইতিকাফ যে কোনো সময়, যে কোনো দিন করা যায়। তবে রমজানের শেষ ১০ দিন কিছু শর্ত সাপেক্ষে পুরুষগণ মসজিদে এবং নারীগণ নিজেদের ঘরে অবস্থান করা সুন্নত। ইতিকাফের মাধ্যমে রোজাদার একাগ্রচিত্তে ইবাদতের সুযোগ পেয়ে থাকে। লাভ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বিশেষ সুযোগ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো- দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করা। রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন নিয়মিতভাবে ইতিকাফ করতেন। কখনো পুরো রমজান মাস ইতিকাফ করতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যু অবধি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারি)।

সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (সা.) প্রতি রমজানে শেষ দশক ইতিকাফ করতেন, যে বছর তাঁর ওফাত হবে ওই বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি)। উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন- মূলত অতিরিক্ত সাধনার লক্ষ্যেই জীবনের শেষ মুহূর্তে রসুলুল্লাহ (সা.) ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। এতে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হলো, বয়স যতই অতিবাহিত হবে আল্লাহর ইবাদত ও অধ্যাত্মিক সাধনায় তত বেশি মগ্ন হওয়া জরুরি। জরুরি ইহকালীন চিন্তা-চেতনা ও কর্ম ব্যস্ততা গুটিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতি অগ্রসর হওয়া। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ইতিকাফের গুরুত্ব এত বেশি ছিল যে, এক বছর সফরে থাকার কারণে তিনি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতে না পারায় ওই ইতিকাফ তিনি পরবর্তী শাওয়াল মাসে ১০ দিন পালন করেন। (সহিহ বুখারি)। ফরজ ইবাদত ব্যতীত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যেসব ইবাদত করা হয় তার মধ্যে ইতিকাফ অন্যতম ইবাদত। আল্লাহর ইবাদতের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করা এবং পাপাচার বর্জনের জন্য একটি অন্যতম সহায়ক হলো ইতিকাফ। অনর্থক কাজ, অশ্লীল কথাবার্তা, কুপ্রবৃত্তি ও ইহকালীন চিন্তা-চেতনা পরিত্যাগ করে আল্লাহমুখী হওয়ার উত্তম পদ্ধতি এ ইতিকাফ। ইতিকাফের মাধ্যমে শবেকদর লাভ করা সহজ। কেননা শবেকদর শেষ দশকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আর বলতেন, রমজানের শেষ ১০ দিন তোমরা শবেকদর অন্বেষণ কর।’ (সহিহ বুখারি)।

২০ রমজানুল মোবারক সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ঈদের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ ইতিকাফের জন্য নিয়ত ও রোজা পালন করা জরুরি শর্ত। এ ইতিকাফ কোনো কারণে ভঙ্গ করা হলে যেদিন ভঙ্গ করা হয় সেদিনের কাজা আদায় করতে হবে। ইতিকাফের জন্য মান্নত করার ফলে ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এ ছাড়া যে কোনো সময়ে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা, মুস্তাহাব ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। রমজানের শেষ দশকে মহল্লার মসজিদে কেউ না কেউ ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফ করার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় সবার ওপর এ দায়িত্ব থেকে যাবে, সবাই গুনাহগার হবে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর