সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংবাদপত্রের ক্রমবিকাশ : ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের ভূমিকা

অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান

সংবাদপত্রের ক্রমবিকাশ : ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের ভূমিকা

অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি ২৩ মার্চ শনিবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ লেখাটি তাঁর জীবনের শেষ লেখা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য তিনি লেখাটি তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন।

 

ইতিহাসের পরিক্রমায় বিভিন্ন চিন্তাবিদ অপরাধ এবং অপরাধের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তাদের মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্লেটো ও এরিস্টটল ছিলেন দুজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ, যাদের ধারণা আধুনিক অপরাধবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করে। প্লেটোর মতে, অপরাধের মূল কারণ হলো শিক্ষা ও সম্পদের অভাব। তিনি বিশ্বাস করতেন, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া উচিত, তবে শাস্তি নির্ধারণ করার সময় অপরাধের তীব্রতা বিবেচনা করা উচিত। প্লেটোর মতে, শাস্তির উদ্দেশ্য হলো অপরাধীদের সংশোধন করা এবং তাদের আবার অপরাধ করার হাত থেকে বিরত রাখা। অন্যদিকে এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন, অপরাধের শাস্তি যথেষ্ট কঠোর হওয়া উচিত। তিনি মনে করতেন, কঠোর শাস্তি অপরাধীদের ভবিষ্যতে অপরাধ করার হাত থেকে বিরত রাখবে এবং সমাজের বাকি অংশকে সতর্ক করবে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, Cesare Beccaria অপরাধবিজ্ঞানের ক্লাসিক্যাল মতবাদ প্রদান করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, অপরাধ দূরীকরণ অপরাধের শাস্তি প্রদানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে, Cesare Lombroso, Enrico Ferri, Raffaele Garofalo পজিটিভিস্ট মতবাদ প্রদান করেন। Lombroso বিশ্বাস করতেন, অপরাধীদের মধ্যে বংশগত বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাদের অপরাধ করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তিনি আরও মনে করতেন, অপরাধীরা অন্যদের চেয়ে কম উন্নত এবং তাদের অপরাধ তাদের নৈতিক চরিত্রের প্রতিফলন। Lombroso আবিষ্কার করেছিলেন, শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অপরাধ করার সম্ভাবনা কম, তবে তাদের সংঘটিত অপরাধগুলো অনেক বেশি ভয়ংকর। অপরাধবিজ্ঞানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় এসব মতবাদের মাধ্যমে। আধুনিককালে Modernization theory বিশ্লেষণ করে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় এমন কিছু সামাজিক পরিবর্তন ঘটে, যা অপরাধপ্রবণতা বাড়ায়। এ পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে- নগরায়ণের প্রসার, শিল্পায়নের অগ্রগতি, জাতীয় আয় বৃদ্ধি। এ তত্ত্ব অনুসারে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রবণতা কমিয়ে দেয়, ফলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

প্রাগৈতিহাসিক সমাজে, সংঘবদ্ধ রীতিনীতি অপরাধের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবে কাজ করত। ওই সময়ে সম্পত্তির ধারণা সীমিত ছিল এবং ব্যক্তিগত সম্পদের পরিবর্তে গোষ্ঠীগত সম্পত্তির ওপর জোর দেওয়া হতো। এ কারণে অপরাধ মূলত ব্যক্তিগত বিরোধ বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কালক্রমে কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সম্পত্তির ধারণার বিবর্তনের ফলে সমাজে শ্রেণিবিভাগের সূচনা হয়। সম্পদের অসম বণ্টন শ্রেণিগত পার্থক্য তৈরি করে এবং শাসক ও শাসিত শ্রেণির মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। কার্ল মার্কস অপরাধকে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়, সম্পদের অসম বণ্টন এবং শ্রেণিগত শোষণ অপরাধের মূল কারণ। প্রাচীনকালে অপরাধ মূলত ব্যক্তি বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দাস প্রথা প্রচলিত থাকায়, দাসদের বিরুদ্ধে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো না। মধ্যযুগে, সামন্ততন্ত্রের অধীনে, অপরাধের ধারণা সম্পত্তির ধারণার সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে জড়িত হয়ে ওঠে।

সম্পত্তির চুরি এবং সম্পত্তির ক্ষতির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। আধুনিক সময়ে পুঁজিবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে, অপরাধের ধারণা আরও বিকশিত হয়েছে। সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অপরাধ, হোয়াইট-কলার অপরাধ এবং সংঘটিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরনও পরিবর্তিত হতে শুরু করে। ইন্টারনেটের উত্থান আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্যাকিং, ফিশিং, ডেটা চুরি, অনলাইন প্রতারণা, সাইবার স্টকিং এবং আরও অনেক কিছু আজকের দিনে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল কন্ট্রোল তত্ত্ব অনুসারে, সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অভাব অপরাধের ঝুঁকি বাড়ায়। ইন্টারনেটে, নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা সাইবার অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। রেশনাল চয়েস তত্ত্ব অনুসারে, যখন অপরাধ করার সুযোগ থাকে তখন অপরাধ সংঘটিত হয়। ইন্টারনেট অপরাধীদের জন্য অপরাধ করার সহজ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ইন্টারনেটের উত্থান সন্ত্রাসবাদীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তারা অনলাইন প্ল্যাটফরমকে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসবাদীরা অনলাইন ভিডিও, ছবি এবং বার্তা ব্যবহার করে তাদের ধারণা প্রচার করে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং সমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা করে। জিহাদি ওয়েবসাইট এবং ফোরাম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী বিষয়বস্তু প্রচার করে। সন্ত্রাসবাদীরা অনলাইন প্রচারণা ব্যবহার করে তরুণদের জঙ্গিবাদে যোগদানের জন্য প্ররোচিত করে। তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে, সন্ত্রাসবাদীরা অনলাইন ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে তহবিল সংগ্রহ করে। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করে, যা ট্র্যাক করা কঠিন। মানবসভ্যতার ভোর থেকেই অপরাধের বীজ বপিত। যুগ যুগ ধরে অপরাধের রূপ বদলেছে, কিন্তু এর কালো ছায়া মানবজাতিকে কখনোই ছেড়ে যায়নি। আধুনিক যুগে অপরাধের নতুন নতুন রূপ আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল অস্ত্র হলো সচেতনতা। অপরাধের বিষয়ে সচেতন হলে আমরা এর ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব। এ সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা, ঝুঁকি এবং প্রভাব সম্পর্কে খবর প্রকাশের মাধ্যমে সংবাদপত্র জনগণকে সচেতন করে তোলে। অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল শেখানোর জন্য সংবাদপত্রে বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। অপরাধ থেকে নিজেদের রক্ষা করার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে জনগণ নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে পারে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশের মাধ্যমে সংবাদপত্র অপরাধ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করে। অপরাধীদের মানসিকতা, তাদের কৌশল এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে জনগণ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। অপরাধের শিকার সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে সংবাদপত্র অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরে। অপরাধের বেদনাদায়ক দিক সম্পর্কে সচেতন হলে জনগণ অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত হয়। অপরাধীদের গ্রেফতারে সহায়তা করার জন্য সংবাদপত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে থাকে। সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা অনেক সময় গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অপরাধীদের গ্রেফতারে সহায়তা করেন। সংবাদপত্রে যদি একটি মানব পাচার চক্রের তথ্য প্রকাশ করে, তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারে।

ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম এবং টেলিযোগাযোগব্যবস্থার অগ্রগতি খবরের দ্রুত প্রচারণায় বিপ্লব এনেছে। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। এই দ্রুত প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার প্রতি দায়িত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। সঠিক তথ্য প্রচার করা এখন সাংবাদিকদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব। অতীতে একজন রিপোর্টার সব ধরনের খবরই কাভার করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির কারণে সাংবাদিকতায় বিশেষত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ক্রাইম রিপোর্টিং, স্পোর্টস জার্নালিজম, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কলাম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক দেখা যায়। বিশেষত্ব সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করে। বিশেষত্ব সাংবাদিকতার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে ক্রাইম রিপোর্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অপরাধের জগতের জটিলতা ও গভীরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে, ক্রাইম রিপোর্টাররা তাদের স্পষ্ট, নিরপেক্ষ এবং তথ্যবহুল রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্রাইম রিপোর্টাররা সমাজের অপরাধমূলক দিকগুলো তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করে তোলেন। তাদের সাহসী ও নিরপেক্ষ রিপোর্টিং অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে মাদকদ্রব্যের সিন্ডিকেট, খুনের রহস্য, জালিয়াতির খেলা- এমন অসংখ্য অপরাধের কাহিনি। সাংবাদিকরা নিয়মিত কলাম এবং তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে জনগণকে অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতন করছেন। খুনের মামলার তদন্ত শুরু থেকে শেষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থার বিশ্লেষণ- সবকিছুই আমরা ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারি। বর্তমানে অনেক ক্রাইম রিপোর্টার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন মাদক চক্র ও সিন্ডিকেটের মূলহোতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সমাজের এমন কিছু তৃণমূল রয়েছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৌঁছানো কঠিন। সেখানে সাংবাদিকরা সমাজের উচ্চ শ্রেণি থেকে শুরু করে তৃণমূলের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সাধারণ জনগণের সামনে তুলে ধরেন। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, সমাজের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন সেখানে অভিযান চালায়, তখন মাদক চক্র আগে থেকেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। ফলে মূলহোতাদের খুঁজে বের করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা ওই এলাকার পথশিশুদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, যারা মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সাংবাদিকদের বিশ্লেষণধর্মী লেখার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সাধারণ জনগণও তাদের নিকটবর্তী স্থানে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে জানতে পারেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের জটিলতা বাড়ার সঙ্গে অপরাধ সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের প্রবণতা ও কারণ উন্মোচন করে অপরাধ সাংবাদিকতা। অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অপরাধ সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে অপরাধের শিকার ব্যক্তি তাদের মনোভাব প্রকাশ করার জন্য একটি মঞ্চ পায়। বর্তমান বিশ্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাংবাদিকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিন অথবা ইউক্রেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অবস্থান করে সারা বিশ্বের জনগণের কাছে খবর সম্প্রচার করছেন। ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকরা শুধু অপরাধের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন না বরং যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সাহায্য করেন। কিশোর অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িয়ে পড়েছে, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সাহায্য করে।

বছরের পর বছর ধরে গণমাধ্যম এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, এটি ‘Fourth Estate’ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে, যেমনটি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এডমান্ড বার্ক বর্ণনা করেছেন। একটি সংবাদপত্র কেবল কাগজের টুকরা নয়, এটি বিশ্বের দরজা। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই অপরাধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অপরাধ সমাজের এক অন্ধকার দিক, যা মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপরাধ সাংবাদিকতাও বিকশিত হচ্ছে।

সংবাদপত্রে বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে অপরাধের বৃদ্ধির হার সম্পর্কে সচেতন করা হয়, যা সাধারণ জনগণকে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে সচেতন হতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, করোনা মহামারির ক্রান্তিকালে সমাজের আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ফলে অপরাধের ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদান, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ভেজাল, বিভিন্ন হাসপাতালে জালিয়াতি সাংবাদিকদের তথ্যচিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে। সঠিক তথ্য অপরাধ সাংবাদিকতার মাধ্যমে উঠে আসার কারণে সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে একটি চক্র অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। অপরাধের প্রবণতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে।

উদাহরণস্বরূপ, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অপরাধ সাংবাদিকরা ধর্ষণের শিকারদের অভিজ্ঞতা, আইনি জটিলতা এবং সমাজের নীরবতার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে জনমত গঠনে সহায়তা করে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রচারণার কারণে সাধারণ জনগণ নিজেদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়।

সর্বশেষ খবর