মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইতিকাফকারীর জন্য লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা

মুফতি রুহুল আমীন কাসেমী

ইতিকাফকারীর জন্য লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা

নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী জগতের সব আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, সব মোহ মায়া ত্যাগ করে, সব বাধা বন্ধন উপেক্ষা করে, নিজের কলুষিত আত্মাকে পবিত্র করার লক্ষ্যে, একান্তভাবে দয়াময় আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার নাম ইতিকাফ। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়- পুরুষের জন্য নিয়তসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত আদায় হয়। আর মহিলাদের জন্য ইতিকাফের নিয়তসহ ঘরের ভিতর নামাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো স্থানে অবস্থান করা। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মাসজিদুল হারাম, অতঃপর মাসজিদুন্ নববী, অতঃপর মাসজিদুল আকসা, অতঃপর পৃথিবীর সমস্ত জামে মসজিদ ও পাঞ্জেগানা মসজিদ। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সুরা বাকারা, আয়াত ২)।

রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শেষ দশকের রাত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের প্রথম ২০ রাতে কিয়ামুল লাইল করার আগে বা পরে কিছু সময় ঘুমাতেন। কিন্তু রমজানের শেষ দশকের প্রতি রাতে তিনি সারা রাত বা প্রায় সারা রাত জাগ্রত থেকে কিয়ামুল লাইল ও ইবাদতে রত থাকতেন। শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনকেও জাগিয়ে দিতেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের রাত এসে যেত তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জাগরিত থাকতেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও জাগিয়ে দিতেন, তিনি অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকতেন এবং সাংসারিক, পারিবারিক বা দাম্পত্য কাজকর্ম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতেন। (বুখারি ও মুসলিম)।

কেননা রমজানুল মোবারকের শেষ দশকের রাতগুলোতে রয়েছে লাইলাতুল কদর। এ রাতটি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত। একটি রাতের ইবাদত ১ হাজার মাস বা প্রায় ৮৪ বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম, সুবহানাল্লাহ। কত বড় নেয়ামত যা মানুষের পক্ষে আলাদাভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, নবীজি ইরশাদ করেন, যদি কেউ ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় খাঁটি নিয়তে এ রাতে কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদে জাগ্রত থাকে, আল্লাহতায়ালা তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেন। (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর তা আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তালাশ কর। (বুখারি)।

এ পবিত্র লাইলাতুল কদর লাভে ধন্য হওয়ার জন্য, আল্লাহর রসুল তাঁর উম্মতকে ইতিকাফ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। তিনি তাঁর ওফাত পর্যন্ত এভাবেই ইতিকাফ করেছেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীগণ তারপর ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যদি কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাতে সামনে অগ্রসর হয়, তবে তা তার জন্য ১০ বছর ইতিকাফ করার চেয়েও উত্তম। আর যে ব্যক্তি এক দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইতিকাফ করবে, আল্লাহ ওই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখা দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আর প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (আল মুসতাদরাক)। নবীজি প্রথম দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা যা তালাশ কর তা সম্মুখে রয়েছে। অতঃপর দ্বিতীয় দশকে তালাশ করলেন এবং বললেন, তোমরা যা তালাশ কর তা সম্মুখে রয়েছে। অতঃপর বললেন, তোমরা শেষ দশকের প্রতি রাতে তালাশ কর। কোনো কোনো হাদিসে রয়েছে শেষ বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ কর। কোনো বর্ণনায় ২৭ রজনীও রয়েছে। সুতরাং সুনিশ্চিতভাবে, মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরের রজনী প্রাপ্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তি তারাই হবেন যারা শেষ দশকে ইতিকাফ করবেন। যার একটি রাতের অর্জন সারা জীবনের অর্জনের চেয়েও অনেক বেশি লাভ করতে সক্ষম হবেন। এ কারণে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। উম্মতের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে নির্দেশ প্রদান করেছেন। মহল্লার কোনো মসজিদ ইতিকাফকারীশূন্য হলে সবাই গুনাহগার হবে। আল্লাহপাক আমাদের ইতিকাফ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর