বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

খতমে তারাবির হাদিয়ায় স্বাবলম্বী হন হাফেজগণ

মো. আবুু তালহা তারীফ

খতমে তারাবির হাদিয়ায় স্বাবলম্বী হন হাফেজগণ

সম্মানিত মুসল্লিরা খতমে তারাবি পড়া এখন শেষ লগ্নে, অন্য এলাকা থেকে এসে প্রচুর কষ্ট করে আমাদের মসজিদে কোরআনের হাফেজগণ তারাবি পড়িয়েছেন, আমরা তার পিছনে নামাজ আদায় করেছি, তাই আমাদের উচিত তাদের হাদিয়া দিয়ে সম্মানিত করা। এমন কথা বললেন, মসজিদে দাঁড়িয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার কথা শেষ না হওয়ার আগে কিছু মুসল্লি বা কমিটির অন্য সদস্যরা দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, না খতমে তারাবি পড়িয়ে হাদিয়া দেওয়া ও নেওয়া জায়েজ নেই, কবিরা গুনাহ হয়। আমাদের বড় হুজুর মুফতি সাহেব বলেছেন। মসজিদেই শুরু হলো বিতর্ক ও হট্টগোল। এখন উপায় কী। হাফেজদের হাদিয়া দিয়ে তাদের সম্মানিত করবে নাকি পাপ করবে এ নিয়ে বিপাকে মুসল্লিগণ। হাফেজগণ রমজান মাসের জন্য আমাদের মসজিদে তারাবি পড়িয়েছেন তাঁদের ওইসব মৌলিক অধিকার ও চাহিদাগুলোর জোগান দেবে কে? এককথায় তার উত্তর হচ্ছে, আমাদেরই জোগান দিতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের মাধ্যমে বা অন্য কোনো পন্থা খুঁজে বের করে। কেবল ‘না-জায়েজ’ বলে দিলেই তো দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। আপনি লক্ষ্য করুন, আমরা আলেম/হাফেজদের দ্বারা দোয়া করিয়ে, খতম ইত্যাদি বখশিয়ে দিয়ে, মৃত বা জীবিত বাবা-মায়ের উদ্দেশে দোয়া কামনা করে, রোগ আরোগ্যের প্রত্যাশা নিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে কিংবা ‘বিপদমুক্তি’ ইত্যাদি লক্ষ্যে দোয়া নিয়ে হাদিয়া দিই বা হাদিয়া দিয়ে দোয়া নিয়ে থাকি। হাফেজগণের প্রশ্ন এলেই কেউ বক্তব্য পত্রপত্রিকায় দু’কলম বা ফেসবুকে হাদিয়ে দেওয়া যাবে না লিখে প্রচার করে নিজেদের ধন্য মনে করেন। সুতরাং কোরআনের বাহক হাফেজদের সাহায্য, সহযোগিতা ও সম্মান প্রদর্শন করলে অবশ্যই মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হবেন এবং বিরাট সওয়াবের কাজ বটে। আল্লাহকে খুশি করার জন্যই সম্পদ ব্যয় করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, অতঃপর খোটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না। তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬২।

হাদিয়া দেওয়া রসুল (সা.)-এর সুন্নাত আর হাফেজদের হাদিয়া দিলে রসুল (সা.) সন্তুষ্ট হবেন। হিংসা দূর হয় হাদিয়ার মাধ্যমে। রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় কর এর দ্বারা অন্তরের সংকীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যায়।’ মুসনাদে আহমদ।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাফেজদের নামে টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা দিয়ে ইতিকাফকারী বা মসজিদের অন্য কাজে খরচ করা হয়। এমনটি ঠিক নয়। যাদের কথা বলে নেব, তাঁদেরই বণ্টন করে দেব এটাই সর্বোত্তম। প্রিয় পাঠক, এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত হাফেজগণ একেধারে ২৭ দিন একাধারে রাতদিন পরিশ্রম করে যথাসাধ্য নির্ভুলভাবে ৩০ পারা শোনানোর জন্য এবং হাজারো মুসল্লিদের একটি যৌথ ইবাদতে সহযোগিতার নিমিত্তে নিজেকে আবদ্ধ করে নিয়েছেন। তাঁর বা তাঁদের কি টাকা-পয়সার দরকার নেই? ঈদ-চাঁদে খুশির প্রয়োজন নেই? তাঁর নিজের বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল পরিবারস্থদের ভরণ-পোষণ, কেনাকাটা, অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদির প্রয়োজন মিটাবে কে? যেখানে একজন খতিব সাহেব মাসে চারটি জুমার নামাজ পড়িয়ে মাসে প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ হাজার, দুই কিংবা তিন ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করে হাজারও টাকা নিচ্ছে। মাদরাসায় কোরআন শিক্ষা দিয়ে বা অন্যের বাসায় কোরআন খতম বিভিন্ন দোয়া করেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। খতমে বুখারির অনুষ্ঠান করে হাজারো টাকা হাদিয়া দেওয়া হয় সেখানে হাফেজদের হাদিয়া দেওয়া কবিরা গুনা বলে ফতুয়া দেওয়া আসলে ঠিক নয়। মাহফিলে জোর গলায় হাফেজদের হাদিয়া দেওয়া যাবে না বলে বক্তব্য দেওয়া বক্তা মহাজন এক ঘণ্টা ওয়াজ করে ৫০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। আমরাও খুশি হয়ে দিচ্ছি, এটা দুষণীয় হচ্ছে না। অথচ অন্য এলাকা থেকে মুসাফির হয়ে এসে তারাবির হাফেজকে হাদিয়া নিয়ে কেন আমাদের মনে এত প্রশ্ন? তিনি হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কিংবা লেখাপড়া শেষ করেছেন, যিনি শিক্ষার্থী তার সারা বছরের লেখাপড়া খরচ আমরা বহন করতে পারি। যার লেখাপড়া শেষ হয়েছে তাকে এমন নগদ কিছু অর্থ দিয়ে দিতে পারি যা দ্বারা কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। এ ধরনের সাহায্য করে আমরা হাফেজকে ভালোবাসতে পারি। হাফেজকে ভালোবাসি ভালোবাসি মুখে বললেই হবে না। উপযুক্ত হাদিয়া দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ভালোবাসতে হবে। আামদের দেওয়া হাদিয়া দিয়ে সে যেন ঈদে তার মা বাবা ও ছোট ভাই বোনকে দিতে পারে দামি উপহার। নিজের স্ত্রী সন্তানকে খুশি রাখতে পারে। হাদিয়া দিলে যদি কোরআন বিক্রি হয় পৃথিবীতে কেউ কি আছে সেই কোরআন ক্রয় করার ক্ষমতা। যদি ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকে তাহলে কীভাবে বিক্রি হয় কোরআন এটাই প্রশ্ন?

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর