রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

উচ্চশিক্ষার নয়া দিগন্ত

ইফতেখার হোসাইন

দেশের উচ্চশিক্ষায় গবেষণাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে নতুন  ধারণা ও উদ্ভাবনে ইতোমধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক র‌্যাকিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। গবেষণাপত্রের মান নির্ণয়ে ডাটাবেজধর্মী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্কপাস জার্নাল ইনডেক্স বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সে আলোকে স্কপাস ইনডেক্সড জার্নালের বায়োলজিক্যাল, এনভায়রনমেন্টাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সসহ নানা বিভাগে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের ১ হাজার ৭৩৮টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যা দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুসরণীয়। প্রতিবছর সরকারের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক প্রকল্পের গবেষণা অনুদান দেয়। এবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে নোবিপ্রবি থেকে এ অনুদান পেয়েছে সাত বিভাগের ১৬ শিক্ষক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গবেষণায় সুপরিচিত এমন পিএইচডিধারী শিক্ষক ৯১ জন, আর পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছে ১২২ জন। এ ছাড়া বর্তমানে নোবিপ্রবির ৭৩ জন শিক্ষক অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা যাতে আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপ্তি পায় তাই গবেষণা সেলকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেলের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন বিশ্বে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম, আলোকিত ও দক্ষ পেশাদার জনশক্তি তৈরি করতে গবেষণার বিকল্প নেই। এ ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে ৪৭৪টি প্রকল্পে গবেষণা বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপনের জন্য নানা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সে আলোকে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন লাইফ সায়েন্সেস, মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে থাকে নোবিপ্রবি। সিম্পোজিয়ামে লাইফ সায়েন্স, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্লেনারি, ওরাল এবং পোস্টার সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষকরা তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণামুখী করতে মন্ত্রণালয়, ইউজিসির নির্দেশনা বলবৎ। সে আলোকে নোবিপ্রবি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সরকার বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক বিএনকিউএফ প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এ দুই প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় নোবিপ্রবির আউটকাম বেজড অ্যাডুকেশন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ বেশ অগ্রসরমান। এ ছাড়াও ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি অফিসগুলোকে ডি-নথিভুক্তকরণের সরকারি ঘোষণার অংশ হিসেবে এ বছর জানুয়ারি থেকে ডি-নথিভুক্ত হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণে গবেষণার পাশাপাশি ভৌত উন্নয়ন কার্যক্রমও চলমান। নিরবছিন্ন গবেষণার জন্য ভৌত সুবিধা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন, একাডেমিক ও ল্যাব ভবন নির্মাণ, গবেষণা যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি ও রিসার্চ ল্যাব সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের বিভিন্ন ফিল্ডে বহুমুখী গবেষণার দ্বার উন্মোচনে সম্প্রতি নতুন ‘এনিম্যাল হাউজ’ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে নানা ধরনের নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন হাউজে রাখা প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করা হবে এবং এর কার্যকরিতা নিয়ে গবেষণা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে নোবিপ্রবি। তা ছাড়া সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনমি সেলের কার্যপরিধি অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে করে নোয়াখালীর মেঘনা উপকূলবর্তী জু প্লাঙ্কটনের মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এবং বিলুপ্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ মৎস্য নিয়ে গবেষণা প্রকল্প চালু করা যায়। এ ছাড়াও এর আওতায় অদূর ভবিষ্যতে নিঝুম দ্বীপে হেবি মিনারেলসের ওপর গবেষণা কার্যক্রমকে টার্গেট করা হয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে নোবিপ্রবির শিক্ষা সমন্বয় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় পারস্পরিক সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্য, জাপান, চেক রিপাবলিক, থাইল্যান্ড, তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (্এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়াও এ বছর আরও বিশ্বমানের ৩০ এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ করার প্রক্রিয়া চলমান। এ বছর মার্চে ইরাসমাস মোবিলিটি প্রোগ্রাম ২০২৪ প্রোগ্রামে তুরস্কের পামাক্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস রেক্টরসহ তিনজন অধ্যাপক নোবিপ্রবি সফর করে। আর নোবিপ্রবি থেকে ৫ জন অধ্যাপক, ২ জন কর্মকর্তা ও একজন শিক্ষার্থী তুরস্ক সফরে যায়। বর্তমানে নোবিপ্রবি বায়োটেকনোলজি বিভাগের ¯œাতকোত্তরের একজন শিক্ষার্থী একই  প্রোগ্রামের আওতায় তুরস্কের নিইদে ওমের হালিশদেমির বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

লেখক : সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ), নোবিপ্রবি

সর্বশেষ খবর