সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

কথা নয় কাজ চাই

মাজহারুল ইসলাম

কথা নয় কাজ চাই

বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আগে-পিছে বাদ দিলেও বিগত ১৫ বছর যাবৎ আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করছে, যার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ১৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তৃতা শুরু করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে জাতি স্বগৌরবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। সরকারের কাছে আমার জিজ্ঞাসা ৩০ লাখ শহীদের নাম-ঠিকানা কি সরকার সংরক্ষণ করতে পেরেছে? স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশে মানুষ ছিল সাড়ে ৭ কোটি। পরিবার ছিল ১ কোটি। কারণ তখন মানুষ যৌথ পরিবারে বসবাস করত। বিগত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষকরা অনেক ক্ষেত্রে অলস সময় পার করছেন। তবে তারা নিয়ম অনুযায়ী মাসিক বেতন-ভাতাদি ঠিকই উত্তোলন করেছেন। ওই সময়ে সরকার ইচ্ছা করলে শিক্ষকসমাজকে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার আলবদর তথা শান্তি কমিটির সদস্যদের একটি নিখুঁত তালিকা প্রণয়ন করতে পারত। কিন্তু সুযোগটি কেন সরকার হাতছাড়া করল তা বোধগম্য নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকারদের তালিকা প্রণয়ন করে জাতির সামনে পেশ করতে সাতবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তারিখ পিছিয়েছে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নীতিমালার মানদন্ড  ১১ বার পরিবর্তন, পরিবর্ধন করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশের অনৈতিক উদ্দেশ্য থাকায় যাদের পরিবারের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে যিনি বিগত ১০ বছর নিয়োজিত আছেন তিনি একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার সময়ে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকারদের তালিকা প্রণয়ন না হওয়া জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্য।

সরকারি দফতরগুলোতে দৃশ্যত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোকে ভরপুর। রাজনীতিতেও একই অবস্থা। এরা নব্য আওয়ামী লীগার সেজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়িয়ে অনৈতিক পন্থায় শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন। যার জ্বলন্ত প্রমাণ ফরিদপুরের একটি প্রভাবশালী পরিবার। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পরিবারটির ভূমিকা কী ছিল তা জাতির কাছে অজানা নয়। ক্ষমতায় থাকলে ইতিহাসকে সাময়িকভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায়; কিন্তু পক্ষান্তরে এক দিন ইতিহাসেরই জয় হয়। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমরা দেখতে পেলাম যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে ‘নাজাত দিবস’ পালন করেছে তারাও আওয়ামী লীগের টিকিটে মনোনয়ন পেয়ে জনপ্রতিনিধি হয়ে গেলেন। আওয়ামী লীগের বিগত জাতীয় কাউন্সিলেও আমরা দেখলাম পাকিস্তানের অনুচর, জিয়া, বেগম খালেদা জিয়ার তাঁবেদারের ভূমিকায় ছিলেন তারাও আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পান। অথচ বীর মুক্তিযোদ্ধা, সৎ, বিনয়ী, দানবীর আপাদমস্তক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দলীয় পদ-পদবি থেকে সিটকে পড়েন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সবিনয় নিবেদন- প্রশাসন, এবং রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এবং মহানগরভিত্তিক একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে নিখুঁত জরিপের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৩০ লাখ শহীদ এবং রাজাকারদের তালিকা জাতির সামনে পেশ করে জাতিকে শাপমোচন করেন। শুধু মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি না আওড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করুন। তাতে নিজেরাও সম্মানিত হবেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও বিজয় হবে। কথা নয় কাজের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে যত্নবান হতে হবে।

সর্বশেষ খবর