শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাওয়ালের রোজার ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

শাওয়ালের রোজার ফজিলত

হজরত আবু আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল সে যেন সারা বছর ধরেই রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম, ১১৬৪)। এই হাদিসের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের চমৎকার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ যদি একটা সৎকাজ নিয়ে আল্লাহতায়ালার সামনে আসে তাহলে তার জন্য ১০ গুণ বিনিময় থাকবে। অন্যদিকে যদি কেউ একটা গুনাহের কাজ নিয়ে আসে তাকে তার একটাই প্রতিফল দেওয়া হবে, তাদের ওপর কোনোই জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আল আনআম, আয়াত ১৬০)। রমজানের ৩০  দিনের ১০ গুণ হলো ১০ মাস আর শাওয়ালের ছয় রোজার ১০ গুণ হলো ৬০ দিন। সুতরাং ৩৬টি রোজায় এক বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি ফরজ দায়িত্ব সম্পন্ন করবে তখন উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি নফল ইবাদাতের মাধ্যমে তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে।’ (সুরা ইনশিরা, আয়াত ৭-৮)

শাওয়াল মাসের এ ছয়টি রোজা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এই রোজাগুলো রমজানের রোজার ভুলত্রুটি ও অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে। এই রোজাগুলো শাওয়াল মাসের ১ তারিখ (ঈদের দিন ব্যতীত) পুরো মাসের যে কোনো ছয় দিন একসঙ্গে বা ভেঙে ভেঙে রাখা যায়। তবে এ ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের মধ্যেই আদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন এবং পাশাপাশি শাওয়ালের ছয়টি রোজা আদায় করেছেন। আবার কেউ যদি রমজানের ফরজ রোজা অসুস্থতা বা সফরে থাকার জন্য ভেঙে থাকেন তাহলে আগে তাকে ভাঙতি রোজাগুলো আদায় করতে হবে। তাদের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়। রমজানের কাজা বা ভাঙতি রোজাগুলো আদায় করার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা আদায় করা যাবে। এ ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের যে কোনো সময়ে আদায় করাই সমীচীন।

আমাদের মনে রাখতে হবে ফরজ নামাজের দুর্বলতা কাটাতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে ঠিক তেমনি ফরজ রোজার কমতি কাটাতে রয়েছে শাওয়ালের ছয়টি রোজা। এ ছয়টি রোজা রাখা হলো মহানবী (সা.) এর সুন্নাত।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে রর্ণিত, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত, তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি, ১৯৫০)। মনে রাখতে হবে রমজানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোজা (যা কাজা হয়েছে) তা পরবর্তী রমজান আসার আগেই যে কোনো সময়ে আদায় করে নিতে হবে। শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচায়ক। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দার কোনো নেক আমল কবুল করলে তাকে আরও অনুরূপ আমল দান করেন যা থেকে সে আরও বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারে। তাই নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল ইবাদাত, দান সদাকা ইত্যাদি বছরজুড়ে আদায় করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। এটাই মুমিন বান্দার জন্য তাকওয়া অর্জন এবং নেক আমলের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা তিনি যেন এই মাহে রমজান শেষে আমাদের শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার তৌফিক দান করেন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর