শিরোনাম
সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শব্দ : নিঃশব্দ ঘাতক

আফতাব চৌধুরী

শব্দ : নিঃশব্দ ঘাতক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডা. হেনশেল নামের জনৈক বিজ্ঞানীর মতে, বিরক্তিকর শব্দ ঠিক প্রতিকূল আবহাওয়ার মতোই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অনবরত বিকট শব্দ মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, আশঙ্কা দেখা দেয় আকস্মিক হৃদরোগের এবং শ্রবণ শক্তির যথেষ্ট ক্ষতি করে। আমেরিকার সিনসিনাটি শহরের এক বিশেষ সংস্থা ডা. হেনশেলের নেতৃত্বে জনসাস্থ্য ক্ষেত্রে শব্দের প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছে। ফিসফিস করে কথা বলার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে তার মতো অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন। বর্তমানে যন্ত্রযুগে, হইচই নানা গ-গোলের জন্য চড়া স্বরে কথা না বললে কেউ শুনতে পায় না। ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যখন কণ্ঠস্বর সর্বোচ্চ মাত্রায় না তুললে হয়তো সেসব অপরের শ্রুতিগোচর হবে না। কথাটা মাত্রাতিরিক্ত হলেও মার্কিন বিজ্ঞানীদের মতে, গত কয়েক দশকে পৃথিবীর সর্বত্র যানবাহন, কল-কারখানা ইত্যাদির শব্দ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁদের গবেষণা থেকে দেখা যায়, পৃথিবীতে প্রতি বছর শব্দের পরিমাণ গড়ে এক ডেসিবেল করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিসফিস করে মানুষ যখন কথা বলে, তখন যে শব্দ উৎপন্ন হয়, তার পরিমাপ প্রায় ৩০ ডেসিবেল। এভাবে শব্দের জোর বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাস্তায় মোটরগাড়ি, লরি ইত্যাদি যান চলাচলের শব্দ প্রায় ৬০-৭০ ডেসিবেল, আকাশে ওড়ার ঠিক আগে বিমান থেকে যে শব্দের সৃষ্টি হয় তার পরিমাণ ১২০ ডেসিবেল বা তার কাছাকাছি হয়। এতে মানুষের কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে বা মানুষ চির বধিরত্ব লাভ করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১৭৫ ডেসিবেলের শব্দ শুনে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারায়। শব্দের এ সমস্যা মানুষের জীবনে হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা তো নেই বরং দিনে দিনে এ সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানবাহন, কল-কারখানার শব্দ তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত হাজার রকমের অবাঞ্ছিত শব্দ। যানবাহনের, ঢাকঢোলের আওয়াজ, মাইক্রোফোনের আওয়াজ, দোকানে লাগানো লাউড স্পিকারের আওয়াজ এসব আজ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শহরে নয়, সুদূর গ্রামাঞ্চলও আজ এ শব্দদূষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কৃষি যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর, লরির শব্দ আজ শান্ত গ্রামের পরিবেশকেও দূষিত করে তুলছে। এমন অনেক অফিস আছে যেখানে টাইপ মেশিন, বাতানুকূল যন্ত্র ইত্যাদির শব্দের জন্য সাধারণ মানুষের কথাবার্তা ঠিকমতো শোনা যায় না। বাড়িতে ওয়াশিং মেশিনের শব্দ, টিভির শব্দ, জেনারেটরের শব্দও আজকাল বাড়ির শান্ত ও নিস্তব্ধ পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। যে শব্দ প্রাণে সাড়া জাগায় না, তাই বিরক্তিকর। হয়তো রেডিওর সামনে বসে একজন তন্ময় হয়ে গান শুনছে উপভোগ করছে, কিন্তু তার পাশে বসা একজন ছাত্র বা নিদ্রিত ব্যক্তির কাছে ওই মধুর সংগীতই বেশি বিরক্তিকর।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর