উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটে ব্যালটের মাধ্যমে। এর সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র কিংবা পেশিশক্তির দূরতম সম্পর্কও থাকার কথা নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনেও অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বহু ক্ষেত্রেই ভোটারদের প্রার্থী বেছে নেওয়ার অধিকার ক্ষুণœ করে। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করে একতরফা সে নির্বাচনেও হানাহানির ঘটনা কম ঘটেনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সহিংসতা, সংঘাতের রেশ এখনো রয়েছে। সে অপছায়া কাটতে না কাটতেই উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে তুচ্ছ ঘটনায় গুলির শব্দে আতঙ্কিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষে অংশ নেওয়া ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই নিজেদের মধ্যে লিপ্ত হচ্ছেন ভয়াবহ সংঘর্ষে। গুলিবিদ্ধ হয়ে এরই মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে কাতরাচ্ছেন অনেকেই। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি সহিংসতায় তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন মোট ৯২ জন। চলতি এপ্রিলে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন চারজন। আহতের সংখ্যা ৩৬। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের আবেগ জড়িত। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক ভোটার অংশ নেন। বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায় নিজেদের কাছের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার আবেগে। গণতন্ত্র চর্চায়ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ নির্বাচনে বহু ক্ষেত্রেই প্রার্থীর দলীয় পরিচয় গুরুত্ব পায় না ভোটারদের কাছে। যা রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে অস্ত্রবাজদের দাপট বন্ধে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। এটি তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।