শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কিছু কথা

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কিছু কথা

১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে আমেরিকার ৩৪তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন এককালের সেনা কর্মকর্তা ডোয়াইট ডি আইজেন হাওয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাঁচতারকা বিশিষ্ট জেনারেল এবং মিত্রশক্তির একটি বিশেষায়িত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। প্রায় সারা জীবন সেনানিবাসের গন্ডি আর রণাঙ্গনে আবদ্ধ থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অভাব অনটনগ্রস্ত বিরূপ বিশ্বে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রাজনীতির গুরুত্ব তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন। ১৯৫৪ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের এক অংশে দেশবাসীকে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ফরিয়াদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোট্ট একটি রাজনৈতিক সংগঠন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের আচার-আচরণ ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আপনারা জড়িয়ে আছেন বা আপনাদের জড়িয়ে থাকতে হয়। সুতরাং কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা নির্বাচিত নেতা না হয়েও রাজনীতির মধ্যেই আপনাদের বসবাস। তাই আমার কাছে মনে হয় যথাযথ গৌরব নিয়েই আপনাদের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করা উচিত। প্রত্যেক নাগরিকের খন্ডকালীন কাজ বা খন্ডকালীন পেশা হওয়া উচিত রাজনীতিচর্চা করা, যার মাধ্যমে নাগরিকরা স্বাধীন জনগণের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সুরক্ষা করবে এবং আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে যা কিছু ভালো ও উপকারী, তা সংরক্ষণ করবে।’

এই সূত্র ধরে বলা যায়, রাজনীতি অবশ্যই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই। তবে প্রশ্ন হলো কোন বয়স থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার যৌক্তিকতা বা মাত্রা কী হওয়া উচিত। প্রশ্নটি ছোট্ট ও সহজ হলেও এর উত্তর অনেক জটিল ও বিতর্কিত। দেশের সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, আমাদের জনগণের গড় আয়ু আগের চেয়ে কিছুটা বেড়ে ৭২.৪ বছরে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নারীরা বাঁচে ৭৪ বছরেরও বেশি, আর পুরুষ বাঁচে ৭০ বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেন এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করে বড় বড় পদ-পদবি ধরে রাখেন, তাদের গড় বয়সের দিকে তাকালে দেখা যায় কেবল ৬০ থেকে ৭০ নয় বরং ৮০ কিংবা তারও বেশি বয়সেও রাজনীতি করা যায়, প্রতিষ্ঠান চালানো যায়, এমনকি দেশের প্রশাসনও চালানো যায়। সুতরাং জীবনের শুরুর দিকে মোট গড় আয়ুর এক-তৃতীয়াংশ বা কম-বেশি ২৪ বছর তথা ছাত্রজীবনে কেউ যদি রাজনীতি না করে কেবল নিজেকে দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর স্মার্ট নাগরিক করার ব্রতে নিয়োজিত থাকেন, তাতে কি দেশ ও রাজনীতির খুব ক্ষতি হবে? বিশেষত নব্বইয়ে এরশাদের পতনের পর আবারও বলছি পতনের পর যারা ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন, তাদের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে তাদের মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে এমন প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। সর্বোপরি ‘রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই বরং ব্যবসায়ীদের দখলে’ বলে যখন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই বলে থাকেন, তখন ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আপনা-আপনিই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বদলে যদি এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ কিংবা ওষুধ উৎপাদক সমিতির মতো ব্যবসায়িক সংগঠন ও এমপি গড়ার সূতিকাগারগুলো একটি করে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলে, তবে সেটিই বরং সার্থক হবে। ছাত্ররাজনীতি ভবিষ্যতের নেতা তৈরির অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

পৃথিবীর ইতিহাস ও গতি বদলে দেওয়া অনেক নেতা ও রাষ্ট্রনায়কের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ছাত্র অবস্থায়। আমাদের জাতির পিতা ও মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবনের তিনটি বড় অর্জন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও ছাত্রনেতাদের অবদান স্বর্ণখচিত ইতিহাসতুল্য। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতা ও ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয় নানা কারণে। তাই ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিকতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।

যারা ছাত্ররাজনীতি ছাড়া নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে না বা জাতি নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগবে বলে মনে করেন, তাদের এটাও স্মরণে রাখতে হবে যে, ছাত্ররাজনীতি না করে এমনকি বেশিদূর লেখাপড়া ছাড়াই জাতীয় নেতা এমনকি বিশ্বনেতা হওয়া যায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ও জর্জ ওয়াশিংটন, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতা ফেড্রিক ডগলাস, সাউথ আফ্রিকার জ্যাকব জুমা, ভারতের জয়ললিতার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ছাত্রজীবন ছিল সংক্ষিপ্ত ও নিতান্ত সাদামাটা। মহাত্মা গান্ধী ছাত্রজীবনে লাজুক ও স্বল্পভাষী ছিলেন। ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার অভাব তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাদের জীবনাচার অনুসরণ করে বলাই যায়, পরিবেশ ও পরিস্থিতিই রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করে এবং বানের স্রোতের মতো রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি না হলে সব রসাতলে ডুববে বলে ভাবার শক্ত যুক্তিও এই বিচারে ম্লান হয়ে যায়।

ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে ঠিক ৫০ বছর আগের একটি ঘটনা স্মরণীয়। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল। ওই রাতে একটি ছাত্র সংগঠনের ১০-১৫ জন সশস্ত্র কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৬৩৫ ও ৬৪৮ নম্বর কক্ষের সাতজন ছাত্রকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এবং অস্ত্রের মুখে তাদের মুহসীন হলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের হাত-পা বেঁধে টিভি রুমের সামনে দাঁড় করানো হয় এবং রাত ১টার পর হতভাগ্য এই সাত ছাত্রকে স্টেনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে পরদিনই মিছিল বের হয়, যে মিছিলে নেতৃত্ব দেন রাজনীতি করা একটি ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। পরে প্রমাণিত হয়, এই সাধারণ সম্পাদকই মূলত এই হত্যাকান্ডের হোতা, যিনি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এমন হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন চিকিৎসার্থে মস্কো ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় অর্থাৎ পরবর্তী ১৭ মাসের মধ্যেই এই সাত খুনের দায়ে দোষী ব্যক্তিদের ২২ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়। তবে পরিতাপের বিষয় ’৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পর এই সাজা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং একপর্যায়ে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাদের মুক্ত করে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম প্রকাশিত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালের তথ্য মোতাবেক- স্বাধীনতা-পরবর্তী থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৮ বছরে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫ জন খুন হয়েছেন। ১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্ররাজনীতি করা একটি দলের চার ছাত্রকে হত্যা করা হয়। এই চারজনসহ ৭৫ হত্যাকান্ডের উপযুক্ত বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি। ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে রক্তের হোলি খেলা আজ তাই ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনেও। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন ছাত্র খুন হন। এর মধ্যে ১৭টির দায় নিতে হয় বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনকে (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর, ৮ অক্টোবর ২০১৯)।

নির্মম হত্যাকান্ডের বাইরেও রোকেয়া হলের ইমেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস ও স্বামীকে বেঁধে রেখে সম্প্রতি স্ত্রীকে ধর্ষণ, সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণসহ বহু ঘটনা প্রমাণ করে ছাত্ররাজনীতি ও নেতৃত্বের আড়ালে যেসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে, এসব ঘটনা তার খন্ডচিত্র মাত্র। এ যেন সাগরে ডুবে থাকা পাহাড়সম বরফখন্ডের অগ্রভাগ। চরম দুঃখের বিষয় হলো, এত এত অপরাধ তথা পাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত কতিপয় নেতা-কর্মী। যার দায় নিতে হয় ছাত্ররাজনীতিকে। আর এসব অপরাধের বিচার না হওয়ার দায় নিতে হয় ছাত্ররাজনীতির পৃষ্ঠপোষকদের।

বাইবেলসহ বহু গ্রন্থে বহু মনীষী বলে গেছেন, পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়। সুতরাং কেউ যদি শিক্ষাঙ্গনের এসব পাপ বা পাপের উৎসরূপে ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্বকে ঘৃণা করে, তাকে কি দোষ দেওয়া যাবে? আজ যদি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং কেন বিশ্বমানের কাছে পৌঁছতে পারছে না, কেন লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষিত ও বেকার, কেন প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না, কেন এত বিদেশি এ দেশে চাকরির বাজার দখল করে রেখেছে এবং ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়ছে, এসব নিয়ে আন্দোলন করত, তবে নিশ্চয়ই অপরাধ বা পাপগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিবেচনা করা যেত। তবে বাস্তবে এসব নিয়ে আন্দোলন তো দূরে থাক, কেউ মুখও খুলছে না। যার ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিকতা আজ কাঠগড়ায়। ছাত্রনেতারা কেউ কিছু না বললেও দেয়ালে কান পাতলেই সাধারণ ছাত্রসমাজের হতাশার কথা শোনা যায়। সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জোড়ায় জোড়ায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার দৃশ্য ও আপত্তিকর কিছু দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অবন্তিকার আত্মহত্যা বহু প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে এ সমাজকে। রমজানের আগে এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফটে কয়েকজন ছাত্রের কথা নিজ কানে শুনেছিলাম। ছয় বছর সময় ব্যয় করে এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যে ‘ডাক্তার’ নামক মানবসম্পদ সৃষ্টি করছে, তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল বা চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমবেশি ১৮ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করতে বলে। অথচ তাদের অভিভাবক যে গাড়িতে এই হবু ডাক্তারদের মেডিকেল কলেজে পাঠান, সেই গাড়ির ড্রাইভারের বেতনও ১৮ হাজার টাকার বেশি। যে হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকে, তারা নতুন ডাক্তারকে ১৮ হাজার টাকা দিতে চায়। ছয় বছরে ৩০-৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তবে আমরা কী মানের মানবসম্পদ তৈরি করলাম? ইন্টার্নশিপ ট্রেনিংয়ের জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ছাত্র ভর্তি সময়েই প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা হিসেবে ১২ মাসের ভাতা অভিভাবকদের দিতে বাধ্য করে। অথচ পাঁচ-ছয় বছর নিজেদের কবজায় রাখার পর অভিভাবকদের দেওয়া এই টাকাও তাদের সন্তান তথা ইন্টার্ন ডাক্তারদের যথাযথভাবে ও যথাযথ সময়ে পরিশোধ করা হয় না বলে আলাপ করছিল ওই ছাত্ররা। আগে কিছু মূল্যায়ন পরীক্ষা দিয়ে অস্ট্রেলিয়াসহ বহির্বিশ্বে চিকিৎসা পেশা শুরু করার বা উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো মেডিকেল কলেজ বা তাদের উপরস্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ পেলে এমন মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারা না পারা নিয়ে সেই ছাত্ররা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। অথচ এসব নিয়ে কোনো ছাত্র সংগঠন বা কোনো রাজনৈতিক দল কোনো প্রকার বক্তব্যই দিচ্ছে না বলে ওই ছাত্ররা অনুযোগ করছিল। দেশে ছাত্ররাজনীতির সোনালি অতীত আবার ফিরে আসুক এটাই প্রত্যাশা। শুরু করেছিলাম আমেরিকার ৩৪তম রাষ্ট্রপতি ডোয়াইট ডি আইজেন হাওয়ারের কথা দিয়ে। শেষ করব মার্কিন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সালে হত্যার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আব্রাহাম লিংকনের একটি চিঠির কথা দিয়ে। ১৮৩০ সালে নিজ পুত্রের শিক্ষকের কাছে পাঠানো সেই চিঠির এক অংশে তিনি লিখেন, ‘তাকে (পুত্রকে) শেখান, প্রতিটি শত্রুর জন্য একটি বন্ধু থাকে, চুরি করার চেয়ে ঘাম দিয়ে একটি মুদ্রা অর্জন করা ভালো। তাকে হিংসা থেকে দূরে রাখুন এবং যদি আপনি পারেন তবে তাকে প্রশান্তির হাসির গোপনীয়তা এবং আনন্দ জানতে দিন।’ অঢেল টাকার মালিক ছাত্রনেতাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা দয়া করে ওই চিঠিটা একটু পড়বেন কী?

♦ লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

email : [email protected]

 

সর্বশেষ খবর