শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানের সৌন্দর্য জারি থাকুক

মো. আমিনুল ইসলাম

রমজানের সৌন্দর্য জারি থাকুক

মাহে রমজান বিদায় নিয়েছে। রমজান মাস হলো মুমিনের জীবনে নেক আমল করে জীবনকে পরিশুদ্ধ করা। এ মাসের প্রতিট মুহূর্ত হলো আল্লাহ রব্বুল আলামিনের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করার বিরাট সুযোগ। বান্দা তার নেক আমলগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াব বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত জেগে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি শবেকদরের রাতে ইমান ও একিন সহকারে ইবাদত করে তারও সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি ও মুসলিম)। তাহলে এ মাহে রমজানে আমরা রোজা রাখার পাশাপাশি যে মহান শিক্ষা নিয়েছি তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা উচিত। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে লব্ধ শিক্ষা যদি আমরা বছরের বাকি ১১টি মাসে কাজে লাগাতে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি তাহলে আমরা বুঝতে পারব কিছুটা হলেও আমরা তা আমাদের জীবনে আত্মস্থ করতে পেরেছি।

মাহে রমজানে মুখ্য উদ্দেশ্য হলো আল্লাহভীতি। পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সেদিনটিকে ভয় কর, যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে পাবে তার নিজ নিজ কর্মফল। আর সেদিন তাদের ওপর কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৮১)। আল্লাহভীতি না থাকলে একজন মুমিন বান্দা কখনো তাকওয়া অর্জন করতে পারবে না। আল্লাহভীতিই একজন মুমিনকে সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে তাকে বিরত রাখে। রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনা থেকে আমরা আমাদের নফসকে নিবৃত্ত রাখতে পেরেছি। শয়তান সারা বছরই আমাদের নফসে অবাধ বিচরণ করে এবং অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ আর লোভ লালসা দিয়ে ভরিয়ে রাখে; কিন্তু রোজার মাসে আমরা সিয়াম সাধনা ও আল্লাহভীতির মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারি এবং পাশাপাশি শয়তানের ওসওয়াসা থেকে অন্তরকেও নিবৃত্ত করতে সক্ষম হই। আমাদের এখন কঠিন শপথ গ্রহণ করতে হবে যাতে আমরা রমজানে যেসব গুনাহের কাজকে পরিত্যাগ করে পরিশুদ্ধ ও তাকওয়া অর্জনের জন্য যে ভালো কাজ করেছি, (বেশি বেশি নেক আমল করা, হালাল হারাম মেনে চলা, সুদ ঘুষ বর্জন করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করা, মিথ্যা কথা না বলা ইত্যাদি) অর্থাৎ যেসব সৎ কাজের চর্চা করেছি তা যেন বছরজুড়ে অব্যাহত রাখতে পারি। সুতরাং রোজা পালনের মাধ্যমে অন্তরে লুকিয়ে থাকা পাশবিকতাকে দমন ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের সুন্দর ব্যবস্থা বিদ্যমান। পৃথিবীতে আজ যুদ্ধের দামামা। নিপীড়িত মানুষের আর্তচিৎকারে চারপাশ ভারী। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃত্যুর বিভীষিকা। অথচ আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর রোজার আত্ম সংযমেরই প্রশিক্ষণই পারে মানুষের সেই পাশবিকতাকে দমন করতে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘রোজা আমার জন্য আর এর পুরস্কার আমি নিজে দেব।’

মাহে রমজান শেষে যদি আমাদের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি চলে যায় কিংবা রমজান মাসে আমরা যে তাকওয়াটুকু অর্জন করতে পেরেছি তা যদি জীবনে চর্চা বা অনুশীলন করতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে আমাদের যা কিছু নেক আমল করেছি তা ভেস্তে গেছে। মনে রাখতে হবে একটি পুণ্য কাজ করার মাধ্যমে আরেকটি পুণ্য কাজ করার স্পৃহা তৈরি হয়। সুতরাং ভালো বা পুণ্য কাজ করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রতিটি মুমিন বান্দার কর্তব্য।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর