সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ

মেজর আখতার (অব.)

রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ

একজন রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাধারণত একজন ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যিনি রাষ্ট্রীয় বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে বা অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য নির্বাচনসহ সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। মূলত রাষ্ট্রীয় বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে রাজনীতিবিদরা সরকারি নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে জড়িত হন, সরাসরি বা এলাকাভিত্তিক জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং জনকল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা সামগ্রিকভাবে সমাজকে তথা জনগণকে প্রভাবিত করে। একজন রাজনীতিবিদের অন্যতম দায়িত্ব হলো ক্ষমতায় বা ক্ষমতার বাইরে থেকে রাষ্ট্রকে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টি করা, যাতে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হয়। রাজনীতিবিদদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-

রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বের গুণাবলি তাদের জনসমর্থন অর্জনে সাহায্য করে। তার দৃষ্টিভঙ্গি বা দর্শন জনগণের সামনে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরার বিশেষ সক্ষমতা যা জনগণকে প্রভাবান্বিত করতে সরাসরি ভূমিকা রাখে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সুগভীর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জনগণকে বিশেষ করে অনুগতদের পরিচালনা করতে কৃতিত্বের সঙ্গে সক্ষম হয়।

রাজনীতিবিদরা মূলত জনস্বার্থে ও স্ব স্ব এলাকার জনগণের সার্বিক স্বার্থ এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করেন। রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্রীয় বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া নির্ভর করে স্থানীয়, আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে তাদের নির্বাচনি এলাকার জনগণের স্বার্থ এবং উদ্বেগ কতটুকু প্রশমিত করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা তারা রাখেন তার ওপর। রাজনীতিবিদদের সফলতা নির্ভর করে সঠিক ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করার পারদর্শিতা ও তা বাস্তবায়ন করার সাংগঠনিক দক্ষতার ওপর। সঠিক রাজনৈতিক কৌশলের মূলই হলো যথোপযুক্ত নীতি তৈরি করার অনন্য ক্ষমতা, প্রয়োজনে স্বার্থ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্যকর, দক্ষ ও শক্তিশালী জোট গঠন করার বিচক্ষণতা, বিরোধীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ ও গ্রহণযোগ্য আলোচনা করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে সাফল্য সুনিশ্চিত হয় এবং নির্বাচনি সাফল্যের জন্য দক্ষ ও খুবই উচ্চমানের প্রচারণা চালানোর অনন্য প্রতিভা যা নির্বাচনের বিজয় সুনিশ্চিত করে।

রাজনীতিবিদদের তাদের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা, ভোটারদের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য সংযোগ স্থাপন এবং তাদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনমত বা জনসমর্থন তৈরি করতে জনগণের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাব, বিতর্ক, সংশোধন এবং আইন প্রণয়নসহ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় জড়িত এমন অনেক গ্রহণযোগ্য কাজ করার অনন্য নীতিনির্ধারণ করার প্রয়োজন পড়ে।

রাজনীতিবিদদের তাদের কর্ম ও সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচকদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়, যা পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন এবং জনসাধারণের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচিত হওয়া নির্ভর করে।

রাজনীতিবিদদের নিজেদের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজের রাজনৈতিক দল তৈরি করতে অথবা প্রতিষ্ঠিত যে কোনো রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করতে হয়। রাজনীতিবিদদের সফলতা সরাসরি নির্ভর করে তার দলের সাংগঠনিক সমর্থন, আদর্শিক কাঠামো এবং জনপ্রিয় নির্বাচনি কর্মকান্ডের ওপর। সামগ্রিকভাবে রাজনীতিবিদরা গণতান্ত্রিক সমাজের সব কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, তারা জননীতি গঠন করে, বিভিন্ন স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায় বা রাষ্ট্র শাসন বা সার্বিক প্রশাসনে অবদান রাখে। ইতিবাচক গুণাবলি যেমন একজন রাজনীতিবিদকে জনহৃদয়ে স্থান দিতে পারে, তেমনি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য একজন রাজনীতিবিদকে খলনায়কে পরিণত করতে পারে। এমন অনেক নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও চরিত্র আছে, যা একজন রাজনীতিবিদকে খলনায়কোচিত স্বৈরাচর হিসেবে চিহ্নিত করে। এটা সত্য যে, গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদকে স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে কতগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয় বা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখতে হবে। যাই হোক, নিম্নে কিছু খলনায়কোচিত বা নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য বা আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা একজন রাজনীতিবিদকে স্বৈরশাসক বা খলনায়ক করে ফেলতে পারে। যেমন-

যদি একজন রাজনীতিবিদ ঘুষ, আত্মসাৎ বা জনগণের তহবিলের অপব্যবহারের মতো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের খলনায়ক রাজনীতিবিদ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। রাজনীতিবিদরা যদি স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে কাজ করেন, জনগণের কাছ থেকে তাদের কাজ বা উদ্দেশ্য লুকিয়ে রাখেন তাহলে তাদের নেতিবাচক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যে রাজনীতিবিদ প্রতারণামূলক কৌশলে জড়িত হন যেমন ভুল তথ্য ছড়ানো বা সমর্থন পাওয়ার জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া, সত্যকে গোপন করা এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ বা অসৎ উদ্দেশে অহরহ অভিযোগ উত্থাপন করা ইত্যাদি কার্যক্রমের জন্য তাদের খলনায়ক বা নেতিবাচক চরিত্রের রাজনীতিবিদ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

যখন একজন রাজনীতিবিদ ধারাবাহিকভাবে তার নিজস্ব স্বার্থ বা সমর্থকদের স্বার্থকে সাধারণ জনগণের মঙ্গলের চেয়ে অগ্রাধিকার দেন তখন তারা গণবিরোধী চরিত্রের বৈশিষ্ট্যধারী রাজনীতিবিদ বা খলনায়ক হিসেবে জনগণের কাছে বিবেচিত হতে পারেন।

যে রাজনীতিবিদ ঐক্য ও সহযোগিতার প্রচার না করে জাতি, ধর্ম বা অসুস্থ রাজনৈতিক অনুষঙ্গের মতো গণবিরোধী কার্যকরণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভাজন ঘটান তাদের খলনায়ক বা নেতিবাচক রাজনৈতিক চরিত্রধারী হিসেবে গণ্য হতে পারে।

যে রাজনীতিবিদ স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রদর্শন করেন- যেমন ভিন্নমতকে দমন করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে অবমূল্যায়ন করা বা মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করা তাদেরও প্রতিকূল বা নেতিবাচকভাবে দেখা যেতে পারে।

যদি একজন রাজনীতিবিদ বা দক্ষতার অভাব প্রদর্শন করার ফলে দুর্বল সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অকার্যকর শাসনের দিকে পরিচালিত হন, যার ফলশ্রুতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, জনগণের শান্তি বিঘ্নিত হয়, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়, অর্থনৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয়, তখন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদকে খলনায়ক বা নেতিবাচক চরিত্রে বৈশিষ্ট্যধারী বলে চিত্রিত করা হয়।

এটা সত্যি যে, বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ এসব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য ধারণ বা প্রদর্শন করেন না, তবে যার যার চরিত্রের পরিপ্রেক্ষিত, ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের ওপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে তাদের ইতিবাচক অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে। উপরন্তু একজন রাজনীতিকের চরিত্র মূল্যায়ন করতে হলে স্থান, কাল, প্রসঙ্গ এবং নির্দিষ্ট কার্যক্রম বা উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও গৃহীত ব্যবস্থা বিবেচনা করা উচিত।

রাজনীতিবিদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য যাই থাকুক না কেন এটি ধ্রুব সত্য যে, রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো দেশেরই রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ খুবই সীমিত এবং থাকে না বললেই চলে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে অনেকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, তবে সেটি কোনো অবস্থাতেই রাজনীতি নয় এবং সেই নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র যিনি বা যারা শাসন করতে চান তারা স্বৈরশাসক ছাড়া অন্য কোনো নামে ভূষিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। আবার অনেক রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় গিয়ে নিজের ইচ্ছা বা খায়েশ পূরণ করতে গিয়ে তার রাজনীতিবিদ পরিচয়টি হারিয়ে একনায়ক,  স্বৈরশাসক বা খলনায়ক হিসেবে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে পতিত হন।

রাজনীতিবিদ একটি একক চরিত্র। এভাবেও বলা যায়, একজন রাজনীতিবিদ রাজনীতির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক। দক্ষতা ও ক্যারিশমা বলে যিনি রাজনীতিকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় পরতে পরতে ব্যক্তির বা একক কোনো রাজনীতিবিদের নাম তার সময়কে সুনাম বা বদনামে ধরে রেখেছে। সেই আদিকাল থেকে রাজনীতি চলে আসছে। রাজনীতিবিদের সফলতা ও ব্যর্থতার ইতিহাস সব সময় ছিল ব্যক্তিনির্ভর। যুগে যুগে রাজনীতিবিদই নিয়ন্ত্রণ করেছেন রাজনীতিকে। আজও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন একজন ব্যক্তি, যাকে আমরা বলি রাজনীতিবিদ। যে কোনো দেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন মাত্র গোটা কয়েকজন রাজনীতিবিদ। এ গোটা কয়েকজন রাজনীতিবিদই ওলটপালট করে ফেলেন দেশ ও জাতিকে। তারাই বদলে দেন রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। তাই বলে সবাই যারা রাজনীতি করেন তারা কিন্তু কখনোই রাজনীতিবিদ নন। তারা হলেন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী এবং রাজনীতিবিদের অন্ধ বা অনুগত অনুসারী। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কখনোই রাজনীতির গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারেন না। তারা অন্ধ বা বিবেকহীনভাবে শুধু রাজনীতিবিদের নির্দেশনা পালন করেন মাত্র। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা রাজনীতিবিদ হতে চাইলে তাদের দলের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদের কোপানলে পড়তে হয়। দলের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ যতদিন ক্ষমতায় থাকেন ততদিন ওই দলের অন্য কোনো নেতা-কর্মীর রাজনীতিবিদ হওয়া তো দূরের কথা, জীবন নিয়ে টিকে থাকাই দায় হয়ে যায়। একই অবস্থা হয় রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদের আমলে কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী রাজনীতিবিদ হতে চাইলে সেই নেতার অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়ে যায়, যদি না তার যথেষ্ট শক্তি থাকে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদকে মোকাবিলা করতে। রাজনীতিবিদ কাউকে ছাড় দেন না। কারণ ছাড় দেওয়ার অর্থই হলো নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। তাই আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে ক্ষমতাসীন থাকার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চার বা পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতা পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য নির্বাচনের প্রচলন আছে। কিন্তু কেউ যদি অর্বাচীনের মতো নির্বাচনের মাঠে থাকতে না চান তাহলে তিনি সরাসরি ক্ষমতাসীনকে সহযোগিতা করেন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার। ক্ষমতাসীনরা সব সময় বিভিন্নভাবে প্রতিপক্ষকে নিরুৎসাহী করবে নির্বাচনের মাঠে থাকার জন্য। বিরোধী পক্ষ যত বেশি নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে থাকবে ক্ষমতাসীনরা তত বেশি নিরাপদ ও নিরঙ্কুশ থাকবে।

তথাকথিত রাজপথে আন্দোলনের নামে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদকে হয়তো কখনো কখনো ক্ষমতা থেকে হটানো যায় না, তবে তা কোনো অসম্ভব কাজ নয়। যে কোনো ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদকে হটাতে যে কোনো বিরোধী রাজনীতিবিদ ও তার অনুগত শক্তি নিয়ে সশস্ত্র চেষ্টা করলে তখন রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতাসীনকে হটানো কঠিন বা অসম্ভব কোনো কাজ নয়; কিন্তু এটি আর বর্তমান আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে কাম্য নয়। তা ছাড়া আন্দোলন বা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে কাউকে ক্ষমতা থেকে হটালেও নির্বাচন ছাড়া বৈধভাবে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার অধিকার কেউ পায় না। ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচন লাগবেই লাগবে। নির্বাচন ছাড়া কেউ যেভাবেই ক্ষমতায় যাক বা থাক না কেন, তিনি কখনোই ইতিবাচক রাজনীতিবিদের স্বীকৃতি পাবেন না। তার মাথায় একনায়ক বা স্বৈরশাসকের তকমা লেগে যাবেই। তাই ইতিবাচক রাজনীতিবিদের অন্যতম লক্ষ্যই হলো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার দুর্জয় প্রয়াস। নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ধৈর্য, সাহস, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সাংগঠনিক শক্তি, অনুসারী অনুগত ত্যাগী নেতা-কর্মী বাহিনী, অর্থ, কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা। এর যে কোনো একটির ঘাটতি হলে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা রাজনীতির মাঠে টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে যায়। একটি কথা স্পষ্ট যে, নির্বাচন মানে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে বা পরে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ বা গ্রহণযোগ্য ইত্যকার বিশেষণের কোনো প্রয়োজন নেই।

সমসাময়িক পৃথিবীতে রাজনীতিবিদের প্রচন্ড আকাল। চরম বাস্তবতা হলো লাখ লাখ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী আছে কিন্তু রাজনীতিবিদের শতভাগ ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন রাজনীতিবিদও নেই। কিন্তু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রাজনীতিবিদের সংখ্যা রয়েছে অসংখ্য। তাই আজকে রাজনীতির ভাষা হয়ে গেছে কদর্য। বিতর্কের নামে চলে কাদা ছোড়াছুড়ি। জনগণের জন্য বা জনমত তৈরি করতে আশা জাগানিয়া বলিষ্ঠ বক্তব্যের চেয়ে পরস্পর দোষারোপ ও অভিযোগের পাল্টাপাল্টি বক্তৃতার ঝড় ওঠে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে অসংসদীয় ও নোংরা ভাষায় গালাগাল করে। একজন বলে তুই চোর, আরেকজন বলে তুই চোর! জনগণ হতাশ ও আশাহত হয়। নিজ দলের নেতাকে তুষ্ট করার জন্য অপর দলের নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মানহানিকর নোংরা বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। জাতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো- দলের নেতা তাতে খুব তুষ্ট ও প্রীত হন।

যারা এরকম নোংরা বক্তব্য দিতে পারেন তারা আবার দলের বা ক্ষমতার বড় বড় পদ পেয়ে পুরস্কৃত হন! এভাবে কোনো দেশ বেশি দিন চলতে পারে না। যখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় তখন তা অস্বাভাবিক পথ খুঁজে নেয়। এটি প্রকৃতির অমোঘ বিধান। পৃথিবীতে কেউ অবিনশ্বর নয়। তাই আগামী দিনের জন্য জনগণ এক বা একাধিক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের রাজনীতিবিদের অপেক্ষায় দিন গুনছে।

লেখক : স্বতন্ত্র ভাবাপন্ন

সর্বশেষ খবর