শিরোনাম
সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইসলাম সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে

আবদুর রশিদ

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ইসলাম সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে। এ পবিত্র ধর্মে সব মানুষের ন্যায্য অধিকারকে স্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। তারা ধর্মপ্রাণ বলেই ইসলামের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এ দেশে স্বমহিমায় মূর্তমান হয়েছে। অতীতে এ চেতনাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে মতলববাজরা। তবে বাংলাদেশের সচেতন মানুষ তা রুখে দিয়েছে। ইসলাম একজনের অপরাধের জন্য অন্য কাউকে শাস্তি দেওয়ার অনৈতিকতায় বিশ্বাস করে না। ব্যক্তির অপরাধের জন্য কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দায়ী করা ইসলামের শিক্ষা নয়। সংঘটিত যে কোনো অপরাধের যথাযথ তদন্ত এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে ইসলাম। এর লঙ্ঘন কোনোভাবে কাম্য নয়।

ইসলাম সব ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাসী। অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইসলামের বিধান দৃষ্টান্তস্থানীয়। এ বিধানের লঙ্ঘন ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ এবং এজন্য দায়ীদের পরকালে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের হেফাজতপ্রাপ্ত অমুসলিম নাগরিকের ওপর অত্যাচার বা তার হক নষ্ট করবে অথবা তার সামর্থ্যরে বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে অথবা তার মনের একান্ত ইচ্ছা ছাড়া কোনো সম্পদ নিয়ে নেবে, তাহলে জেনে রেখো, আমি তার বিরুদ্ধে হাশরের দিনে অভিযোগকারী হব’। (আবু দাউদ)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখেছেন তা এ যুগেও প্রাসঙ্গিক ও অনুসরণীয়। তিনি মদিনা সনদের মাধ্যমে শুধু মুসলমানদের অধিকারই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং সব গোত্র ও ধর্মের মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন।

মদিনা সনদ আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি শ্রেষ্ঠ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের যে অধিকার সংরক্ষণ করেছেন তা অন্য কোনো মতবাদ আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাত্র ব্যক্তি যিনি সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিমের ওপর অত্যাচার করবে এবং তাদের সম্পদ কেড়ে নেবে স্বয়ং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ বিচারের দিন তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ দেবেন।’ আরও বেশ কয়েকটি হাদিসে অমুসলিম নাগরিকদের হত্যাকান্ডের পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধীরা পরকালে জান্নাতে যাওয়া দূরের কথা তার ঘ্রাণও পাবে না। তার মধ্যে একটি হাদিস হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাবধান! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিমকে হত্যা করবে, যাকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল নিরাপত্তা দান করেছেন, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহতায়ালার নিরাপত্তা বিধানের খেয়ানত করল। অতএব সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়’। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুট, তাদের হতাহত করা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নামান্তর। সুরা আল মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে এ ধরনের অপরাধীদের ইহলোকে ও পরলোকে কঠোর শাস্তির বিধানের কথা বলা হয়েছে। যারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ণ করে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশ অমান্যকারী। তাদের প্রতিরোধ করা যে কোনো মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।

কোনো সংখ্যালঘুর উপাসনালয়ে হামলা-আগুন দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। যারা এসব অপরাধে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কারণ কোরআনের আদেশ হচ্ছে কিছু লোককে দমন করে সব ধর্মের উপাসনালয় রক্ষা করা। যাতে সংখ্যালঘুর অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে দিয়ে অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদ; যার মধ্যে আল্লাহর নাম বেশি স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী’। (সুরা হজ-৪০)।

কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই’। (সুরা বাকারা)। তিনি আরও বলেন, তারা আল্লাহর বদলে যাদের ডাকে তাদের গালি দিও না। নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে’। (সুরা আনআম)। হাদিসে আছে, রসুল (সা.) সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, কারও চেহারা বিকৃত করবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালাবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না’। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)। মোটকথা, শরিয়তের সীমারেখায় থেকে অমুসলিমদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকলেও ইসলাম কখনো তাদের প্রতি কোনো অন্যায় আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর