শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আখেরাতে নাজাত ও জান্নাত লাভের শর্ত

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

বস্তুজগৎ আমাদের স্থায়ী বসবাসের আবাসভূমি নয়, বরং আমরা পরদেশী। এখানে এসেছি রিজিকের তালাশে, পুঁজি উপার্জনের জন্য। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অবশিষ্ট পুঁজি স্বদেশে পাঠানো প্রয়োজন। আমাদের স্বদেশ এবং স্থায়ী আবাসভূমি হচ্ছে আখেরাত। যারা এখান থেকে পুঁজি সংগ্রহ করেছে তারা সেখানে প্রশান্তি ভোগ করবে। আর যারা এখানের পুঁজি এখানেই শেষ করে যাবে তারা হবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত, বিপদের সম্মুখীন। আখেরাতের জীবন হবে তাদের খুবই বেদনাদায়ক এবং কঠিন। বস্তুর আকর্ষণে প্রলুব্ধ কিন্তু মানুষ মরীচিকাময় বস্তুর আকর্ষণে প্রলুব্ধ হয়ে এ ধ্রুব সত্যটি অনুধাবনে সক্ষম হয় না। বস্তু আবরণের কারণে অভীষ্ট পথ হারিয়ে বসে। এ আবরণ ছিন্ন না করতে পারলে মানুষ উদাসীন এবং পথহারা হয়ে ধ্বংস হয়। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক এবং নির্ভুল জ্ঞানের। তবে কেবল জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, বরং জ্ঞানের দিকনির্দেশনা এবং কোরআন-হাদিসের তথ্যের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসেরও প্রয়োজন, যে বিশ্বাস মানুষকে অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী করে, যে অন্তর্দৃষ্টি মানুষকে অপরাধ বর্জন শেখায় এবং অন্তরে নেক আমলের প্রতি আকর্ষণ ও অনুরাগ জন্মায়।

প্রগতিবাদী নব্য শিক্ষিত একশ্রেণির লোকদের বলতে শোনা যায় যে, বিধর্মীরা সেবামূলক কাজ করে, রাস্তাঘাট এবং হাসপাতাল তৈরি করে, অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে, বাড়িঘর প্রস্তুত করে দেয়, বেকারত্বের সমাধানে কর্মসংস্থান করে থাকে, শিক্ষা-দীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে, বিশ্ব মানবতার খেদমতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। খ্রিস্টান মিশনারি, ইহুদি, কাদিয়ানিসহ বিধর্মীদের সেবামূলক তৎপরতা, বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশের প্রতি তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সুতরাং তারা কেন মুক্তি পাবে না, তারা কেন জাহান্নামি হবে?

আমি এ অযৌক্তিক তর্কের জবাবের জন্য আপনাদের একটি প্রশ্ন করি, যদি আপনি ফ্যাক্টরির মালিক হন আর শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা, ভাতা-বেতনের ঘোষণা দেন এবং শ্রমিকরাও আপনাকে মালিক হিসেবে মান্য করে, আপনার জারিকৃত বিধিনিষেধ মেনে চলে তাহলে অবশ্যই তারা আপনার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা এবং আপনার করুণারও অধিকারী হবে। কিন্তু যে শ্রমিক কাজে অত্যন্ত তৎপর, সর্বগুণে গুণান্বিত। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে গরিব-দুঃখীদের সেবা করে, রাত-দিন সেবামূলক কাজে ব্যস্ত থাকে, সবাই তার সুনাম করে; কিন্তু সে আপনাকে মালিক বলে স্বীকৃতি দেয় না। আপনার প্রতি আনুগত্য করে না। বরং আপনার প্রতি বিদ্রোহ দেখায়, আপনার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আপনার শত্রুদের নিয়েই তার সব কার্যক্রম চালায়; তাহলে বলুন, এই শ্রমিক তার অন্যান্য সেবামূলক আচরণের কারণে আপনার ফ্যাক্টরির শ্রমিক থাকতে এবং আপনার সুযোগ-সুবিধার অধিকারের দাবি করতে পারে? কখনোই না। কেন? এজন্য যে, হতে পারে সে অত্যন্ত সেবক, কিন্তু সে আপনাকে মালিক মানে না, আপনার আনুগত্য করে না। অতএব, সে আপনার ফ্যাক্টরির শ্রমিক থাকার এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।

ঠিক এমনিভাবে বিধর্মীরা সেবামূলক কাজ করতে পারে। হতে পারে তারা অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, মানুষের উপকারে তাদের খেদমত ও অবদান অপরিসীম, কিন্তু তারা আপন স্রষ্টার প্রতি ইমান রাখে না, তার আনুগত্য করে না। তারা বরং আনুগত্যশীল ওইসব লোকের প্রতি, আল্লাহর সঙ্গে যারা শত্রুতা পোষণ করে, বিদ্রোহ করে প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের সেবার আবরণে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করে। গোপন ষড়যন্ত্রের কালো থাবায় ইসলাম এবং মুসলমানদের ধ্বংস সাধন করে। শিক্ষা, সংস্কৃতির নামে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা তথা মুসলমানদের জাতীয় শিক্ষার মূলোৎপাটন করে। ইলমে রিসালাত তথা রসুল কর্তৃক আনীত শিক্ষা সিলেবাস বাদ দিয়ে কার্ল মার্কস, মাও সেতুং, লেনিন, ডারউইন, নিউটন, ম্যাথিউসের মতো নাস্তিক এবং ধর্মদ্রোহীদের শিক্ষা সিলেবাস চালু করে মুসলমানদের রক্তে গড়া স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটিতে খোদাদ্রোহী, ইমান-আকিদা খর্বকারী কুশিক্ষা এবং অসভ্য কৃষ্টির প্রচলন ঘটায়। আপনারাই বলুন, এরূপ কাফের, বেদিন এবং বিধর্মীরা কি নাজাত পেতে পারে?

হেদায়েত এবং নাজাতের পথ দুটি; তার একটি হচ্ছে গুনাহ বর্জন। তবে গুনাহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্তর। আল্লাহর কাছে দুটি গুনাহ অত্যন্ত মারাত্মক। এর একটি গুনাহ এক পাল্লায় রেখে অন্য পাল্লায় নেকি দিয়ে ভরে রাখলেও গুনাহের পাল্লা ভারী হবে। তার একটি গুনাহ হচ্ছে কুফর এবং শিরক। যার মধ্যে কুফর, শিরক এবং নেফাক থাকে তার কোনো আমলই গ্রহণীয় নয়। আখেরাতে নাজাতের জন্য এগুলো প্রতিবন্ধক হবে। আল্লাহর শোকর যে, মুসলমানগণ এ গুনাহ থেকে মুক্ত রয়েছে। এ গুনাহের শাস্তি হচ্ছে অনন্তকাল জাহান্নাম।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর