শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জীবনবিধান হিসেবে ইসলাম

জীবনবিধান হিসেবে ইসলাম

) মো. আমিনুল ইসলাম

ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানবতার ধর্ম। আল্লাহর রসুল (সা.) এর জন্মের আগে আরবসহ সারা দুনিয়া ছিল হানাহানি, অন্যায় অবিচারে পরিপূর্ণ। রসুল (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিলেন- ‘নিঃসন্দেহে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। যাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা (এ জীবন থেকে বিচ্যুৎ হওয়ার পর) নিজেরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে মতানৈক্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল, তাও আবার তাদের কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সঠিক জ্ঞান আসার পর। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অস্বীকার করবে (তার জানা উচিত) অবশ্যই আল্লাহতায়ালা দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)।

এ ইসলাম ধর্মে আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের কী দায়িত্ব দিয়েছেন তাও তিনি পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন। ‘তোমরা হচ্ছ সর্বোত্তম জাতি, যাদের সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্যই বের করে আনা হয়েছে, (তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে) তোমরা দুনিয়ার মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আর তোমরা আল্লাহর ওপর ইমান আনবে। আহলে কিতাবরা যদি ইমান আনতো তাহলে এটা তাদের জন্যই ভালো হতো। তাদের মধ্যে কিছু ইমানদার ব্যক্তিও রয়েছে, (তবে) তাদের অধিকাংশই অপরাধী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)।

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে পৃথিবীর একমাত্র মানবতার ও জীবনবিধান হিসেবে কল্যাণকামী ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলাম ধর্মেই মানবতার কল্যাণ সাধন ও জীবন বিধানকে অনুসরণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্ম মানব সমাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে মানব সমাজকে কল্যাণকামী সমাজে পরিণত করতে সচেষ্ট। হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি তোমার জন্য সাদাকা, তোমার হাসি তোমার জন্য সাদাকা, তোমার সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ সাদাকা, পথভ্রষ্টকে পথ দেখানো সাদাকা, দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দৃষ্টিদান করা তোমার জন্য সাদাকা, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড় সরিয়ে ফেলা তোমার জন্য সাদাকা এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়া সাদাকা।’ (জামিউত তিরমিজি)। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা ইমানের অংশ। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের ৭০ অথবা ৬০ এর বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা হলো ইমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম শরিফ, ১৬২)। আরেকটি বিষয় ইসলামী জীবন বিধানে গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো বান্দার হক এবং আল্লাহর হক। ইসলাম ধর্ম সব সময় মানুষের অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানকে উৎসাহিত করেছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সেই উদ্ভাবিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরমভাবে ব্যর্থ হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৫)।

ইসলাম ধর্মে মানবাধিকারকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যা মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। পিতা-মাতার হক, প্রতিবেশীর হক, বড়-ছোটর হক, ভাই-বোনের হক, নিজ কর্মচারীদের হক, শ্রমিকের হক, রাজা-প্রজার হক অর্থাৎ এমন কিছু বাদ নেই যা ইসলামী জীবন বিধানে নেই। প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে আল্লাহ তাঁর পবিত্র কোরআনে এবং রসুল (সা.) হাদিসে বর্ণনা করেছেন। আমাদের এ রাষ্ট্রীয় সমাজব্যবস্থায় সর্বত্র মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এসব মৌলিক অধিকারগুলোকে নিয়ে যেভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয় তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ইসলামী জীবন বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর