সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মামলাজট

পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগই সমাধান

বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আর বিচারহীনতার মধ্যে পার্থক্য খোঁজা দায়। এমনিতেই আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ আর্থিক দৈন্যের কারণে আদালতের শরণাপন্ন হতে ভয় পান। যারা শরণাপন্ন হন, তারা মামলাজটের বিড়ম্বনায় এক পর্যায়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাবা বিস্তার করছে তার পেছনে মামলাজট অনেকাংশে দায়ী। প্রায় প্রতিটি আদালতে গড়ে উঠেছে পাহাড়সমান মামলার স্তূপ। মামলাজট কমাতে বিচারকদের আগ্রহের অভাব নেই। কিন্তু সমাধানের পথ হাতে না থাকায় তারাও অসহায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখে, এর মধ্যে অধস্তন আদালতগুলোয় ৩৭ লাখ ৩০ হাজার। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ৬ লাখ। ২০১২ সালে বিচারাধীন মামলা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার। এক যুগের ব্যবধানে বিচার বিভাগে মামলার জট দ্বিগুণ বেড়েছে। বিচারক স্বল্পতা ও এজলাস সংকট মামলাজটের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি আইনের ত্রুটি, সাক্ষী হাজির করতে না পারাও জট বৃদ্ধি করে। এসব সমস্যা দ্রুত দূর করতে পারলেই কমবে মামলাজট। বিচারকরা নিজেদের সক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি মামলার চাপ সামলাচ্ছেন। সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডার অনুযায়ী, একজন বিচারকের হাতে সর্বোচ্চ ৫০০ মামলা থাকার কথা। এর বেশি মামলা থাকলেই ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা থাকে। সমস্যার সমাধানে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বিচার দীর্ঘসূত্রতায় বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোনো কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য তাদের যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিচার বিলম্বে একদিকে মামলা পরিচালনার ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভোগান্তি। মামলাজট কমাতে সরকার ও বিচার বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের দায়ও কম নয়। আদালতের অংশ হিসেবে দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তাদেরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ করতে হবে সবকিছুর আগে। আদালতের বাইরে আপস প্রক্রিয়ায় কম গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিষ্পত্তি করা হলে বোঝা অনেকখানি হ্রাস পাবে। বিচারহীনতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন বিচারপ্রার্থীরা।

সর্বশেষ খবর