শিরোনাম
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

তৃষ্ণার্তকে পানি পান উত্তম সদকা

যুবায়ের আহমাদ

তৃষ্ণার্তকে পানি পান উত্তম সদকা

তীব্র দাবদাহে অস্থির আমাদের চারপাশ। গরমের তীব্রতায় শুধু মানুষ নয়, হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুলও। এ তীব্র গরমে আমরা চাইলে কাউকে পানি পান করিয়ে খুব সহজেই অসীম পুণ্যবান হতে পারি। তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানোকে হাদিসে সদকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য সদকা। তিরমিজি। পানি পান করানোকে উত্তম সদকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ইসলামে। সাদ ইবনে উবাদাহ (রা.) বলেন, (একদিন) আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। নাসায়ি। অন্য হাদিসে পানি পান করানোকে সর্বোত্তম সদকা বলে অভিহিত করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পানি পান করানোর চেয়ে বেশি সওয়াবপূর্ণ আর কোনো সদকা নেই।’ বায়হাকি। কাওকে পানি পান করানোর সওয়াব এতই বেশি যে, এই পানির বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের পানি পান করাবেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘... কোনো মুসলিম তার কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলিম ভাইকে পানি পান করালে আল্লাহতায়ালা তাকেও মোহরাঙ্কিত জান্নাতি সুধা পান করাবেন। আবু দাউদ।

যে রিকশায় আমি পথ চললাম তার চালককে ভাড়ার পাশাপাশি একটি পানির বোতল দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আমার জমিতে বা শিল্প-কারখানায় কাজ করতে থাকা শ্রমিককে কাজের ফাঁকে সামান্য পানি পান করিয়ে সদকার সওয়াব পেতে পারি। বাড়ির বাইরে পানির একটি কল রেখে পথচারীদের পানি পানের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমরা সদকার সওয়াব পেতে পারি। যেসব এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই সেখানে নলকূপ স্থাপন করেও সদকার সওয়াব পেতে পারি। একটি কল বা নলকূপ স্থাপন করে তা মৃত পিতা-মাতার পক্ষ থেকে অথবা নিজের পক্ষ থেকে ওয়াকফ করে সদকায়ে জারিয়াহর সওয়াব পেতে পারি। সাদ বিন উবাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! উম্মে সাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। (তার পক্ষ থেকে) কোন সদকা সর্বোত্তম হবে? তিনি বললেন, পানি পান করানো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি একটি কূপ খনন করে বললেন, এটা উম্মে সাদের (কল্যাণের) জন্য ওয়াকফ করা হলো।’ আবু দাউদ। তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও পানির জন্য ছটফট করতে থাকে। কুকুরগুলো রাস্তার পাশে নোংরা পানির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির আশায় পশুপাখির জন্যও পানির ব্যবস্থা করতে পারি। তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এক ব্যভিচারকারী নারী। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক বেশ্যা নারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি নিজের মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেওয়া হলো। (এ কথা শুনে) সাহাবিগণ বললেন, পশুপাখির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সওয়াব আছে? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও সওয়াব আছে। বুখারি ও মুসলিম। এ তীব্র গরমে বাড়ির ছাদে কিংবা সুবিধাজনক স্থানে একটি পাত্রে পশুপাখির জন্য সামান্য পানি রেখেও আমরা সওয়াব অর্জন করতে পারি।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ ও পরিচালক বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর