রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বাগত পবিত্র হজের মাস

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

স্বাগত পবিত্র হজের মাস

পবিত্র রমজানুল মোবারক অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমাগত হলো পবিত্র হজের মাস। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অবতরণ হয়েছে এ ধর্ম। ইসলামের প্রতিটি বিধান মানবতার উজ্জ্বল প্রতীক। সুখ-শান্তির নির্মল পাথেয়। ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। হজ হলো ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। হজ পালন করা মহান আল্লাহর ইবাদত। এতে রয়েছে ইহ ও পরকালের চিরকল্যাণ। রয়েছে সামাজিক রীতিনীতি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের পরম আদর্শ। ঐক্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে বলেন, ‘যে লোক হজের প্রতি পূর্ণ নিয়ত করবে, তার জন্য স্ত্রী সহবাস ও আনুষঙ্গিক কিছু জায়েজ নেই। যাবতীয় অশোভন কাজকর্ম এবং ঝগড়া বিবাদ করাও হজ পালনকালে নিষিদ্ধ। (বাকারা : ১৯৭) মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে, আর সে হজ পালনকালে সে নারী আসক্তি ও যাবতীয় অশুভ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবে ওই ব্যক্তি মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হওয়ার ন্যায় গুনাহমুক্তভাবে ফিরে আসবে (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। বর্তমান বিশ্বে হজের চিত্র হলো লাখ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশ। নারী-পুরুষের অপরিমিত ভিড়, অবর্ণনীয় যানজট সেখানে সার্বক্ষণিক বিষয়। আরাফার ময়দানে অবস্থান, মিনায় পাথর নিক্ষেপ এবং কাবা ঘরে তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ায় সাইয়ি মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলেই সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে কী অনাবিল শান্তির পরিবেশ। ঝগড়া নেই, বিবাদ নেই, ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি নেই। নেই অন্যায় উগ্রতা। অবাধ সেই নারী-পুরুষের বিশাল সমাবেশে নারী কেলেঙ্কারি নেই। নেই ইভ টিজিংয়ের মতো সামাজিক কোনো মহামারি।

হজের মাধ্যমে মুমিনগণ আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। বিশ্বের সব অঞ্চলের মুসলমানের অংশগ্রহণে একত্রে ইবাদত বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়। যা বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত, ভাষাগত ও সব ধরনের বৈষম্য দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়। হজ পালনকালে পারস্পরিক খোঁজখবর আদানপ্রদানের সুযোগ হয়। হজের শান্তিপূর্ণ আদর্শ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ শিক্ষা থেকে আমাদের সমাজ আজ দূরে, বহু দূরে। অত্যাচার, মারামারি, হানাহানি, খুন-সন্ত্রাস, হিংসা-বিদ্বেষ আজকের সমাজের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধৈর্য, সহনশীলতা ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের জন্য আমরা হজ পালনের বিধান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বর্গীয় সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা বুকে ধারণ ও লালন করেন, হজের দৃশ্য তাদের জন্য প্রেরণা ও অনুপ্রেরণার উৎসাহ দেয়। শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন, বিবাদমুক্ত সুখ-শান্তিময় পরিবেশ গড়ার পাথেয় হবে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর