শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মেয়েটির পাশেই আছি আমি

তসলিমা নাসরিন

মেয়েটির পাশেই আছি আমি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রীকে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলো। কেন? সেই ছাত্রী কিছু একটা লিখেছেন ফেসবুকে, যে-লেখাটি পছন্দ হয়নি কিছু ছাত্রের। তারা বহিষ্কার চেয়েছে, কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছেন। কেউ বললো কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে বহিষ্কার করতে, অমনি কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেন। বহিষ্কার যে এত সহজ তা আমার জানা ছিল না। সেই ছাত্রী কী অন্যায় করেছিলেন, ক’জন শিক্ষকের মাথা ফাটিয়েছিলেন, ক’জন ছাত্রকে ধর্ষণ করেছিলেন, ক’জনকে খুন করেছিলেন? একজনকেও নয়। বোমা ছুড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে? তাও নয়। কাউকে অহেতুক পিটিয়েছিলেন? কারও শারীরিক ক্ষতি করেছিলেন? করেননি। তাহলে কেন? রক্তমাংসের কোনও ভিকটিমকে না পেলে অনুভূতিকে ভিকটিম বানানো হয়, এই ট্রেন্ড চলছে নব্বই দশক থেকে।

অনুভূতির শরীর নেই, হাত পা মুখ মাথা নেই। অনুভূতিকে চোখে দেখা যায় না, অনুভূতি কথা বলতে পারে না, তাহলে কী করে কে প্রমাণ করবে অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে? কোনও প্রমাণ নেই। প্রমাণ নেই বলেই জালিয়াতি আছে। কাউকে ফাঁসাতে হলে ‘ও আমার অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে’ বলে অভিযোগ করলেই জালিয়াতদের স্বার্থসিদ্ধি হয়।

আমাদের অনুভূতিতে দিন রাত আঘাত লাগছে। আমাদের আদর্শের বিপরীত কথা কেউ বললে অনুভূতিতে আঘাত লাগে, যে রাজনৈতিক মতে আমরা বিশ্বাস করি, সেই মতের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কী হবে বলে আমরা যা মনে করি, কেউ তার সমালোচনা করলে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে, কিন্তু এই আঘাত লাগাগুলোকে সামলে ওঠার ক্ষমতা আমাদের সবারই আছে। আঘাত লেগেছে বলে আমরা প্রতিপক্ষের ওপর বা সমালোচকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি না, কারণ আমরা প্রাপ্তবয়স্ক এবং আমরা জানি আমাদের মতের বিপরীতেও মত থাকে এবং বিপরীত মতাবলম্বীদেরও অধিকার আছে বিপরীত মত ধারণ করার। তাহলে মুশকিল কোথায়? মুশকিলটা হয় অনুভূতির সঙ্গে যখন ধর্ম শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। ধর্ম শব্দটি ইচ্ছে করেই জুড়ে দেওয়া হয়, কারণ অন্য কোনও দেশে না হলেও এই দেশে, এই বাংলাদেশে, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে কেউ, এই বাক্যটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার শকুন ওড়াউড়ি শুরু করে। রীতিমতো শকুনের উৎসব শুরু হয়, অনেক দিন পর খাদ্য জুটলে যে উৎসব ওরা করে, সেই উৎসব। কেন অনুভূতিতে আঘাত লাগা আর ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার ফলাফল আলাদা? ধর্ম একটি মত, একটি বিশ্বাস। আমরা এ রকম নানা মত আর নানা বিশ্বাস নিয়ে চলি। সকলে এক মতের, এক বিশ্বাসের হলে মানুষের মস্তিষ্ক ক্ষুদ্র হতে হতে ইতর প্রাণীর মস্তিষ্কের আকার ধারণ করবে।

পৃথিবীতে নানা রকম ধর্ম ছিল, পুরোনো অনেক ধর্মের মৃত্যু হয়েছে। প্রাচীন গ্রিস, প্রাচীন রোম, প্রাচীন মিসর, প্রাচীন চীনের শক্তিশালী ধর্মগুলো তো বিলুপ্ত হয়েছেই, বিভিন্ন মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মেরও বিলুপ্তি ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ধর্ম এখন সারা পৃথিবীতে রাজত্ব করছে, সঙ্গে আছে গোটা কয় একেশ্বরবাদী আর বহুঈশ্বরবাদী ধর্ম। কালের স্রোতে এই ধর্মগুলোও একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে। নতুন কোনও ধর্মের উদ্ভব হবে নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে জানে। আমরা কী খাবো, কী পরবো, কী শিখবো, কী ভাববো-সবই হয়তো একদিন মেশিন বলে দেবে।

ধর্ম একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি যা খাবার খেতে পছন্দ করি তা খাই, যে কাপড় পরতে পছন্দ করি তা পরি, যে বই পড়তে ইচ্ছে হয় সে বই পড়ি, যে সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হয়, সে সিনেমা দেখি, যে ধর্ম বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, সে ধর্ম বিশ্বাস করি, যে দর্শন পছন্দ হয়, সে দর্শন মানি। আমার মতো আর সবাই এভাবেই তাদের জীবনযাপন করে। কিন্তু ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করে, তারা বর্বর হয়ে ওঠে তাদের ব্যবসায় অধিক মুনাফা পাওয়ার লোভে। তারাই ধর্ম সম্পর্কে নিজের মত ছাড়া অন্য কারোর ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার মেনে নেয় না । অন্যের পছন্দ-অপছন্দের ধার ধারে না। তারা তাদের বিশ্বাস অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। কে কী খাবে, কী পরবে বা পড়বে, কী বলবে, কী শুনবে, কী বিশ্বাস করবে, কতটুকু বিশ্বাস করবে-তার নির্দেশ দেয়। তাদের নির্দেশ না মানলে তারা হামলা করে। অন্যের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এই বর্বরগুলো গণতন্ত্রকে মধ্যম আঙ্গুল দেখিয়ে যাবতীয় অপকর্ম নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সমাজকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করে যত ফায়দা আছে, লুটছে। এ সময় কোনও গণতান্ত্রিক সরকারের চোখ কান বন্ধ করে বসে থাকা উচিত নয়।

পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার ধর্মীয়-রাজনীতির স্থান নেই। মধ্যযুগে দক্ষিণ-ইউরোপে গির্জার ধর্মান্ধ লোকেরা ‘ইনকুইজিশান’ নামে এক ধরনের ভয়াবহ অনুসন্ধান পদ্ধতি চালু করেছিল। যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতো, তাদের ওপরই অনুসন্ধানের নামে জুলুম চালানো হতো। সেই জুলুম দীর্ঘকাল চলতে পারেনি, কারণ মানুষ প্রচুর নিন্দে করেছিল ইনকুইজেশানের। সমাজে গির্জার আধিপত্যকেও একসময় মানবতাবিরোধী বলে চিহ্নিত করা হয় এবং আধিপত্যের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আজ ইউরোপের মানুষেরা অধিকাংশই ধর্মে বিশ্বাস করে না। ধীরে ধীরে গির্জাগুলো জাদুঘরে পরিণত হচ্ছে। এদিকে যে দেশটি বাহান্ন বছর আগে গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলমন্ত্র করেছিল, অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে সভ্যতা আর সমতার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেশটি, সেই দেশ এখন চালু করেছে মধ্যযুগের ইনকুইজিশান। ধর্ম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে, বা সংশয় প্রকাশ করলে তার জীবন বরবাদ করে দেওয়া হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁর জীবনও বরবাদ করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সাইবার ট্রাইবুন্যাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অধিকার কমিটির সদস্য ছিলেন তিথি। সেখান থেকে তাকে প্রথম বের করে দেওয়া হয়, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়, তারপর তাঁকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, অবশেষে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করার সমস্ত আয়োজন করা হয়। এই সাইবার ট্রাইব্যুনাল মধ্যযুগের ইনকুইজিশানের মতো। আজকের বাংলাদেশ, বলতে কষ্ট হয় যে, একখণ্ড মধ্যযুগ ছাড়া কিছু নয়।

তিথি খুনি নয়, কিন্তু তাঁকে খুনের দাগি আসামির মতো ভয়ংকর অপরাধী হিসেবে দেখা হচ্ছে । তিথি কী লিখেছিলেন ফেসবুকে আমরা জানি না। তিথি যে মন্তব্যই করে থাকুন, তাঁর নিজস্ব বিশ্বাস থেকে করেছেন, যে কোনও বিষয়ে যে কোনও নিজস্ব বিশ্বাস যে কোনও সময় প্রকাশ করার অধিকার সকলেরই আছে। নিশ্চয়ই আছে, তা না হলে গণতন্ত্র কেন? রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সব তন্ত্রের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, আমরা জানি গণতন্ত্র সব তন্ত্র থেকে ভালো। এমনকী সমাজতন্ত্রের এত যে সুনাম ছিল, সেও শত চেষ্টা করেও প্রায় কোনও দেশে ঠিকঠাক টেকানো যায়নি। অগত্যা গণতন্ত্রই আমাদের ভরসা। গণতন্ত্রের প্রধান শর্তই কিন্তু বাকস্বাধীনতা। বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা কিন্তু কখনও এমন নয় যে আমি ক-এর সমালোচনা করতে পারবো, কিন্তু খ-এর সমালোচনা নয়। আমি দর্শন নিয়ে কথা বলতে পারবো কিন্তু ধর্ম নিয়ে নয়। আমি অর্থনৈতিক অবস্থার নিন্দে করতে পারবো, কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থার নয়।

সরকার যদি মনে করে সরকারের দায়িত্ব ধর্মকে রক্ষা করা, ধর্ম রক্ষার জন্য লেঠেল বাহিনী দরকার, পুলিশ মিলিটারি দরকার, তাহলে সরকারই ধর্মকে নিতান্তই দুর্বল ঠাওরাচ্ছে। যে ধর্ম সারা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ধার্মিকের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে, সে ধর্মকে কে বা কারা ধ্বংস করে ফেলছে, এমন আশঙ্কা নিতান্তই অমূলক এবং হাস্যকর।

মানুষের ওপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দিলে সেই ধর্ম থেকে মানুষ রেহাই চায়। সত্যি কথা বলতে, বাংলাদেশে যত বেশি ধর্মের কঠিন শাসন চলছে, যত বেশি অযৌক্তিক কথা ধর্ম ব্যবসায়ীরা উচ্চারণ করছে, যত বেশি নারীবিদ্বেষী এবং অমুসলিমবিদ্বেষী ভাষণ তারা দিচ্ছে, ধর্মের উদারতা সম্পর্কে মানুষ তত বেশি সন্দিগ্ধ হচ্ছে, তত বেশি ধর্মে অবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে। ধর্মে অবিশ্বাস জন্মেছে যাদের, তাদের ওপর মৌলবাদীদের এবং শাসকদের বুলডোজার চলে। এই বুলডোজার চলার কারণে আরও বেশি অবিশ্বাসীর জন্ম হয়।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে মহামানবদের চরিত্রের এবং কার্যকলাপের চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে বহুকাল থেকে। কোনও ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক নেতা বা নেত্রী নেই, কোনও সফল শিল্পী সাহিত্যিক নেই যাঁদের সম্পর্কে চর্চা হয়নি, যাঁদের সম্পর্কে কিতাব লেখা হয়নি বা অধুনা ডকুফিল্ম তৈরি হয়নি। সবাইকে নিয়েই হয়েছে। ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, ধর্ম প্রচারক, দেব দেবী, সবাইকে নিয়েই মানুষ আলোচনা করে, তাঁদের সম্পর্কে নিজের অভিমত ব্যক্ত করে। কিন্তু কিছু দেশ যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে কাকে নিয়ে নেতিবাচক কোনও শব্দ উচ্চারণ করা যাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে নিষেধাজ্ঞা গণতন্ত্রের খেলাপ করেই, মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেই জারি করে। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা পৃথিবীর খুব কম দেশেই বহাল আছে।

তিথি সরকারকে মুক্তি দেওয়া হোক। দেশ ও দশের স্বার্থে দেওয়া হোক। গণতন্ত্রের স্বার্থে, বাকস্বাধীনতার স্বার্থে দেওয়া হোক। যদি তিথি সরকার ইসলাম নিয়ে এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে কোনও কটূক্তি করেই থাকেন, এতে ইসলামের এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠাতার একফোঁটাও ক্ষতি হবে না। কিন্তু তিথিকে কারাবন্দি করলে ক্ষতি হবে বাংলাদেশের সুনামের। সারা বিশ্ব কটাক্ষ করবে এই দেশের মিথ্যে গণতন্ত্রের, মিথ্যে বাকস্বাধীনতার। সারা বিশ্ব নিন্দে করবে মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসীদের ওপর ঘটতে থাকা ধর্মীয় নিষ্পেষণের আর নির্যাতনের। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ মধ্যযুগের ঘৃণিত এবং পরিত্যক্ত ইনকুইজিশানকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঘরে এনেছে-এ কারণে বিশ্বের সব সভ্য রাষ্ট্র এবং সব শিক্ষিত মানুষ ধিক্কার দেবে বাংলাদেশের প্রশাসনকে। বিশ্ব এখন দূরতম কোনও দ্বীপ নয়। সারা বিশ্ব এখন একে অপরের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়। একের বিপদে অপরের সাহায্য আসছে প্রতিনিয়ত। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত তুচ্ছ করে গড়ে উঠেছে এই আত্মীয়তার বন্ধন। এই বন্ধনকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করাই শুভবুদ্ধির কাজ। এমন সময় বাংলাদেশের উচিত নয় কট্টরপন্থি দেশ হিসেবে দুর্নাম কামানো। ইসলামের জন্ম যে দেশে, সেই সৌদি আরবই দিন দিন সামনে এগোচ্ছে, ধর্মানুভূতিতে আঘাতের নামে যে অন্ধ আক্রোশ মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাকে কঠোরভাব দমন করছে সৌদি আরব। আর এই উপমহাদেশের স্বাধীন বাংলাদেশ কিনা দিন দিন আধুনিক যুগ থেকে মধ্যযুগের দিকে দৌড়োচ্ছে। এ যে কত লজ্জার, আজ না বুঝলেও দেশের গণ্যমান্য শাসকরা নিশ্চয়ই একদিন বুঝবেন। তখন হয়তো আর ভুল শোধরাবার সময় থাকবে না।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর