শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

গড়তে হবে দক্ষ জনশক্তি

প্রিন্সিপাল এম এইচ খান মঞ্জু

গড়তে হবে দক্ষ জনশক্তি

দেশে ক্রমেই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। খারাপের দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। অথচ বিদেশের শ্রমবাজারগুলোতে কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে আমাদের যুবকরা সেই সুযোগ নিতে পারছেন না। দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুবিধা অনেক। একজন দক্ষ শ্রমিক কয়েকজন অদক্ষ শ্রমিকের সমান রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় দেশে পাঠাতে পারেন।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্পে অগ্রবর্তী একটি দেশ। আমাদের প্রচুর দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। এই ক্ষেত্রটিতে বিদেশের বাজারে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রেখে আরও অনেক শ্রমিক পাঠাতে পারি। এ ক্ষেত্রে প্রেরিত শ্রমিকদের দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই শ্রমিক পাঠাতে হবে।

বিপুল বেকারত্ব ঘোচানোর লক্ষ্যে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এজন্য বিদেশি শ্রমবাজারগুলোর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরও তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে জনশক্তি প্রেরণকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা ও পেশাদারি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মনে রাখতে হবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধের দেশে পরিণত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বড় বিষয় হলো আমাদের বিপুলসংখ্যক যুব শ্রেণি আছে। শ্রমবাজারে যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে যুবকদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে।

সারা বিশ্বে দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক সেক্টরে হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক উচ্চ বেতনে কাজ করছে। এভাবে দেশ থেকে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। মূলত তৈরি পোশাক খাত এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। এ দুই খাতে নিজস্ব দক্ষ জনশক্তির অভাবে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা চরমভাবে মার খাচ্ছে।

একজন অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও বেতন-ভাতা অনেক বেশি। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতার কারণে একদিকে যেমন বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্য রেমিট্যান্স হতে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি, অন্যদিকে দেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জিত রেমিট্যান্সও দেশে রাখতে পারছি না।

বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে শতকরা ৯০ ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। এদের শ্রমের মজুরি অন্যান্য দেশের দক্ষ জনশক্তির চেয়ে অনেক কম। আশার কথা হচ্ছে, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি শত শত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) থেকে যেসব শ্রমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়ে আসছে এদের জন্য দেশে-বিদেশে যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এমন বাস্তবতায় বিকল্প শ্রমবাজার অনুসন্ধান ও কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভাব্য দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় জনশক্তির চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উপযুক্ত কর্মী প্রশিক্ষণ ও জনবল গড়ে তোলার সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সময়ের চাহিদা অনুসারে শ্রমিকের আধুনিক প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও সিভিক নিয়ম-কানুনও প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। শুধু কারিগরি শিক্ষাই নয়, দেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাকেও সময়ের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে সংস্কার বা ঢেলে সাজানোর সুচিন্তিত উদ্যোগ নিতে হবে।

জনশক্তি রপ্তানি আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে, তাতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা গত এক বছরে ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশের জন্য একটি মাইলফলক।

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা বিদেশের শ্রমবাজারগুলোর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এগোতে পারছি না। যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছি না। এখনকার চাহিদা মেটানোর জন্যও কারিগরি শিক্ষা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যুগোপযোগী শিক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সম্পদ ও স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহারের এক সুযোগ তৈরি হবে। যথাযথ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদেশে শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার ধরনের মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। দেশের বাইরের চাহিদার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

উল্লেখ্য, কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে বর্তমানে জীবিকা অর্জনের একটি মাধ্যম। দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে দেশে এখন দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছি। তাই সবাইকে কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্র্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর