শিরোনাম
শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আজকের বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ হাসিনা

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

আজকের বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ হাসিনা

১৭ মে বাংলাদেশের জন্য অনন্য দিন। ঘুরে দাঁড়াবার দিন। সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনার দিন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার দিন। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার নির্দেশে এবং তাঁর নেতৃত্বে ৯ মাসের এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি আরেক যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথপরিক্রমা শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য তিনি এক রূপকল্প নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই রূপকল্পের পথ ধরে উন্নয়নের অভিযাত্রায় যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু একজন নেতাকে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন, আমাদের অভিযাত্রা। বাংলাদেশের অস্তিত্বই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ওই নারকীয় তাণ্ডবের মাধ্যমে। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানো এবং একটি ব্যর্থ, পরনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের লক্ষ্য। যেন বাংলাদেশের বিজয় অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই খুনি মোশতাক, জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশকে উল্টো পথেই নিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের গণতন্ত্র হয়েছিল ভূলুণ্ঠিত, আইনের শাসন নির্বাসিত হয়েছিল, জনগণের অধিকার ছিল না। দারিদ্র্য-ক্ষুধা এক সর্বনাশা অক্টোপাস বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছিল। ঠিক ওই সময় আমাদের জীবনে আসে ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে জাগরণের মন্ত্র নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। জনগণ যখন অধিকারহীন, বুটের তলায় যখন গণতন্ত্র পিষ্ট, ঠিক সেই সময় জনগণের অধিকার আদায় এবং জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের ডাক দিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন তিনি। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার এক সাহসী সংগ্রাম শুরু করেন।

স্মরণ করা যেতে পারে, পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করেছিলেন। এটি বোধহয় সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব এক লীলা। তিনি যদি দেশে থাকতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের এই অবস্থা থাকত না। বাংলাদেশ এতদিনে একটি বর্বর, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। দেশে না থাকার কারণে জাতির পিতার দুই কন্যা বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন। আর তাঁরা বেঁচে যাওয়ার কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দার্শনিক শেখ হাসিনাকে এ সময় দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়েছে। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান দেশে নারকীয় অবস্থা তৈরি করেছিলেন। স্বৈরাচারী একনায়ক জানতেন শেখ হাসিনা যদি দেশে ফিরেন, তাহলে জনগণ জেগে উঠবে। জনগণের এই জাগরণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্বৈরাচারী একনায়ক জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে না দেওয়ার সব প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু জাতির পিতার কন্যা তিনি, ভয় তাঁর রক্তে নেই। আর এ কারণেই জিয়াউর রহমানের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রকে পায়ে দলে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল বাঙালির জাগরণের নব সূচনার দিন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরও তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাস্তার ওপর বসে তিনি পিতা-মাতা-ভাইদের জন্য দোয়া করেছেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ১৭ এই ৪৩ বছরের বাংলাদেশের যে পথযাত্রা সেই পথযাত্রার একমাত্র নায়ক হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই ৪৩ বছরের বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন- সব আবর্তিত হয়েছে একজনকে ঘিরে। তিনি হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশে তিনি একমাত্র জনগণের নেতা। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশের যে রূপকল্প এবং বাংলাদেশের যে সংগ্রামের ইতিকথা সেটির প্রধান চরিত্র হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল- একাত্তর এবং পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি, তারা হলেন এই ৪৩ বছরের ইতিহাসে নতুন নব্য রাজাকার, নব্য ভিলেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আমি মনে করি, বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে একটি পরাধীন, একটি পরনির্ভর, একটি হতাশাগ্রস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেজন্য যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা সব রকমের চেষ্টা করেছিলেন। আর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর থেকে যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রাম হলো সোনার বাংলা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম করার পথটা খুব কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে প্রতি মুহূর্তে এবং প্রতিটি পদে পদে। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, বাংলাদেশের যা কিছু কৃতিত্ব, বাংলাদেশের যা কিছু প্রাপ্তি সবই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। তিনি এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশকে এখন কল্পনাও করা যায় না। আর ১৯৮১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন বাংলাদেশ কেমন ছিল? রাতে কারফিউ ছিল, কারাগারে ছিল হাজার হাজার বন্দি, বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা হতো। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ছিল না। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসন। আর এ কারণেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সংগ্রামের অভিযাত্রায় তিনি স্বৈরাচারের পতনের ডাক দেন। তাঁর নেতৃত্বেই মূলত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু একটি নির্বাচিত সরকারও যে স্বৈরাচার হতে পারে ১৯৯১ সালে আমরা প্রত্যক্ষ করি, মানুষের ভোটের অধিকার আবার হরণ করার চেষ্টা করা হয়। আবার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের ওপর কালো থাবা এসে পড়ে। এ সময় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের বদলে যাওয়া। দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যদি আমরা তাঁর শাসনকালকে একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব আমার বাড়ি আমার খামার, আশ্রয়ণ, কমিউনিটি ক্লিনিক, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি হাজারো কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি যেমন বৈষম্য মুক্তির গান গেয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দিয়েছেন জনগণকে। একদিকে তিনি বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার আমূল উন্নয়নে যেমন বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার অভিযাত্রা শুরু করেন, তেমনি উন্নয়নের সুফল যেন তৃণমূল পায় তার ব্যবস্থাও করেন। সবচেয়ে বড় কথা- তিনি জনগণের ক্ষমতায়নকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি শুরু করেন ‘দিন বদলের অভিযাত্রা’। ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেস। গত ১৫ বছরের উন্নয়নের বিবরণ লিখে শেষ করা যাবে না। এ সময় সামাজিক বৈষম্য কমেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নেওয়া হয়েছে যুগান্তকারী উদ্যোগ। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার রূপকার শেখ হাসিনা। তিনিই আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা। তিনি বিকল্পহীন, অপরাজিতা। ’৭৫-পরবর্তী শেখ হাসিনাই একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি জনগণের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একমাত্র নক্ষত্র।

লেখক : সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট

সর্বশেষ খবর