শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

শেষ জমানার ফেতনা-বিপর্যয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শেষ জমানার ফেতনা-বিপর্যয়

চরম সংকট চলছে পৃথিবীতে। রিজার্ভ কমছে আমাদের। রপ্তানির ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসছে। বিদেশে অর্থ পাচার কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। দুর্নীতির দুষ্ট ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। একইভাবে বেড়েছে খুন-রাহাজানি-ধর্ষণ-পরকীয়ার মতো অপরাধও। ঘরে ঘরে এখন অশান্তির আগুন জ্বলছে। কারও সন্তান অবাধ্য, কারও রোজগার কম, কেউ অসুখে ভুগছে; নানান যন্ত্রণায় আছে মানুষ। লোভের আগুন সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। লোভের বশবর্তী হয়েই আপনজনদের সঙ্গে হানাহানি-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছি আমরা। এসব কেন হচ্ছে? বিস্তর গবেষণা শেষে আলেমরা বলছেন, রসুলের (সা.) ঘোষিত ফেতনার ভয়ংকর সময় আমাদের ওপর বয়ে যাচ্ছে। এ সময় কী হবে, কীভাবে হবে? কখন হবে? বিস্তারিত বিষয় খোলাখুলি পাওয়া যায় হাদিসের কিতাবে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ (রহ.) ‘কিতাবুল ফেতান’ নামক গ্রন্থে এ সংক্রান্ত সব হাদিস একত্রিত করেছেন। যদিও ইমাম নুআইমের কিতাবুল ফেতানের সব হাদিস গ্রহণের ব্যাপারে প্রথিতযশা মুহাদ্দিসদের কেউ কেউ আপত্তি করেছেন, তবে অনেক বড় মুহাদ্দিসই তাকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। হাদিসের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম বুখারির শায়েখ ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইমাম মুসলিম সহিহ মুসলিমে নুআইমের সূত্রে হাদিস দিয়ে দলিল দিয়েছেন। আসুন কিতাবুল ফেতান থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জেনে নিই। জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে আগে মানুষের মাঝে বিপদ-বিপর্যয় ভয়ংকর আকারে দেখা দেবে। এ সময় হত্যা-রাহাজানি বেড়ে যাবে। এমনকি আপন ভাই ভাইকে হত্যা করতে দ্বিধা করবে না। পিতা সন্তানকে, সন্তান পিতাকে হত্যা করবে অবলীলায়। আল্লাহর কসম! আমার খুব ভয় হয়, না জানি আমি এবং আমার প্রজন্ম সে ফেতনায় জড়িয়ে পড়ি!’ (কিতাবুল ফেতান, হাদিস নম্বর ১১)। রসুলের হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ফেতনা-বিপর্যয়ের সময় হত্যা-হানাহানি ব্যাপক আকার ধারণ করবে। যদিও দেড় হাজার বছর আগে আপনজন আপনজনকে খুন করবে এটা একেবারেই অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে বিষয়টা এখন মামুলি মনে হয়। এ সময় সম্পর্কে নবীজির একটি হাদিস হজরত মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন একটা সময় আসবে যখন রাতের অন্ধকারের মতো ঘন হয়ে ফেতনা-বিপর্যয় তোমাদের ওপর নেমে আসবে। তখন মূর্খতা এত ব্যাপক হবে যে, সকালে কেউ মুমিন থাকলে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যায় কেউ মুমিন থাকলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। আফসোস! তখন মানুষ সামান্য পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে তার দীন বিক্রি করে দেবে।’ (কিতাবুল ফেতান, হাদিস নম্বর ১৩)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফেতনা তোমাদের ওপর রাতের অন্ধকারের মতো ছায়া ফেলবে। একটি বিপর্যয় শেষ না হতেই অন্য আরেকটি বিপর্যয় এসে পড়বে। এ সময় সকালে কেউ মুমিন থাকলে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যায় কেউ মুমিন থাকলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। আফসোস! তখন মানুষ সামান্য পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে তার দীন বিক্রি করে দেবে।’ (কিতাবুল ফেতান, হাদিস নম্বর ১৪)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর