শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমনায় ফুটেছে গ্রীষ্মের ফুল

তপন কুমার ঘোষ

রমনায় ফুটেছে গ্রীষ্মের ফুল

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে ফুটেছে নানা ফুল। কৃষ্ণচূড়া মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। জারুল ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। ফুটেছে সোনালু ফুল যার ইংরেজি নাম গোল্ডেন সাওয়ার। কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালু গ্রীষ্মের প্রতীক। এসব ফুলের মোহনীয় রূপ যেন হার মানায় ঋতুরাজ বসন্তকেও। দেশের পথে-প্রান্তরে ফুটে থাকা গ্রীষ্মের ফুলের ছবি ও বিবরণ ছাপা হচ্ছে পত্রিকার পাতায় রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারদের সৌজন্যে।

রাজধানী ঢাকার রমনা পার্ক। সকাল-বিকাল মুখরিত থাকে নানা বয়সি মানুষের পদচারণায়। গ্রীষ্মের আগুনঝরা দিনে রমনা পার্ক ক্লান্ত রাজধানীবাসীকে আলাদা স্বস্তি দেয়। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এই মনোরম পার্কে এসে ভিড় জমান প্রাতঃভ্রমণকারীরা। সেই ভিড়ে কে নেই! পার্কের চারটি প্রবেশদ্বার দিয়ে স্রোতের মতো ঢুকছেন নারী ও পুরুষ।

চেনা-অচেনা নানা জাতের ফুলের দেখা মেলে রমনা পার্কে। রমনার গাছে গাছে ফুটেছে গ্রীষ্মের ফুল। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল। কী অপরূপ সে দৃশ্য! গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দুরে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে কৃষ্ণচূড়া। গাছতলায় ঝরে পড়েছে অজস্র লাল ফুল। দেখে মনে হবে, কেউ বুঝি বিছিয়ে রেখেছে। উঁচু গাছের ডালের মাথায় গুচ্ছাকারে ফুটে আছে বেগুনি রঙের ফুল। ফুলের নাম জারুল। এ ফুলের স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায়। ফুটেছে সোনালু ফুল। হালকা হলুদ রঙের দৃষ্টিনন্দন সোনালু ঝাড়বাতির মতো ঝুলে আছে। রুক্ষতাকে ভেদ করে মনে শীতল অনুভূতি জাগায় এ ফুল। কণকচূড়া গাছের হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল আশপাশ আলোকিত করে রেখেছে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রমনা লেকের চারপাশ ঘেঁষে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। হাঁটাপথের পাশে গাছে গাছে ফুটে আছে লালচে-গোলাপি রঙের ফুল। পথ চলতে মনে হবে, দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে যাই। বারোমাসি এ ফুলকে ‘মণিকুন্তলা’ নামে চেনেন অনেকে। একজন বৃক্ষপ্রেমী জানালেন, এটা দেশবরেণ্য নিসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মার দেওয়া নাম। মণিকুন্তলার পোশাকি নাম ‘ভেলভেট’। ইংরেজি নাম রেড পাউডারপাফ। লতাপাতার মাঝে ফুটে আছে মালতিলতা ফুল। তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না মালতিলতার বেড়ে ওঠার জন্য, জানালেন একজন বৃক্ষপ্রেমী।

পার্কের দক্ষিণ প্রান্তে স্টার গেটের কাছে হলুদ আলো ছড়াচ্ছে অলকানন্দা ফুল। দেখতে অনেকটা মাইকের চোঙ্গার মতো। নামফলক অনুযায়ী, এ ফুলের বাংলা নাম টিকোমা। ইংরেজি নাম ইয়েলো বেল। পশ্চিম প্রান্তে অস্তাচল গেটের কাছে পাশাপাশি দুটি উঁচু গাছে ফুটে আছে দুষ্প্রাপ্য স্বর্ণচাঁপা ফুল। স্বর্ণচাঁপা সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ফুটেছে কাঠ গোলাপ। থোকায় থোকায় ঝুলছে হালকা গোলাপি রঙের কাঠগোলাপ। সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে হালকা নীল রঙের অঞ্জন ফুল। সহজেই আকর্ষণ করে পথচারীদের। রমনা পার্কে আছে লতানো প্রকৃতির কিছু ফুল। ফুলের নাম ভাদ্রা। ঝুমকো দুলের মতো ঝুলে আছে গাছে। একটি বড় গাছের ওপর ভর করে বেড়ে উঠেছে এ গাছ। হালকা হলুদ রঙের এ ফুলের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন পথচারীরা। এই গ্রীষ্মে ক্যামেরা হাতে শৌখিন ফটোগ্রাফারদের আনাগোনা বেড়েছে পার্কে। মুঠোফোনে সেলফি তুলতে ব্যস্ত প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীরা।

বৈশাখের শুরু থেকেই প্রচণ্ড দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল মানুষের। প্রাণিকুলেরও একই অবস্থা। বৈশাখের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টিতে ভিজেছে গোটা দেশ। স্বস্তির বৃষ্টিতে তপ্ত মাটি শান্ত হয়। তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হয়। ধারণা করা হয়েছিল, তাপপ্রবাহে বুঝি ইতি পড়তে চলেছে। কিন্তু আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসকে মান্যতা দিয়ে আবার ফিরে এসেছে তাপপ্রবাহ। কাকডাকা ভোরে দেখা যায়, তৃষ্ণা নিবারণে লেকের জলের ধারে নেমে এসেছে একদল তৃষ্ণার্ত কাক। মাঝেমধ্যে ডানা ঝাপটে গা ভিজিয়ে নিচ্ছে। প্রসঙ্গত, পার্কের ভিতরে আছে বেওয়ারিশ কুকুর। দলবেঁধে পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকে। হাঁটায় বিঘ্ন ঘটায়। অনেকে ভয় পান। এদের এড়িয়ে চলেন। কেন যে পার্কের ভিতরে বেওয়ারিশ সারমেয়দের প্রশ্রয় দেন কিছু ব্যক্তি, তা বোঝা কঠিন। রমনায় আছে ফলদ বৃক্ষ। গ্রীষ্মের ফল আম-জাম-কাঁঠাল। এবার কাঁঠালের ফলন খুব ভালো হয়েছে। গাছে গাছে ফলে আছে ছোট-বড় অসংখ্য কাঁঠাল। চাইলে একটু ছুঁয়ে দেখা যায়। কাঁঠালের ঊর্ধ্বমুখী সবুজ আর চকচকে পাতা মনকে করে সতেজ। তবে আম গাছে আমের দেখা নেই। খরায় পুড়ে খাক হয়ে গেছে আমের মুকুল। অকালেই ঝরে পড়েছে গুটি আম। তালগাছের মতো উচ্চতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ইউক্যালিপটাস গাছ। ইউক্যালিপটাস মাটির পুষ্টি কমায়। গত ৪ মে ২০২৪ বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। নাগরিক মনে প্রশ্ন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ কেন কেটে ফেলা হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়িত্বটা কার? সান্ধ্যভ্রমণেও যান অনেক প্রকৃতিপ্রেমী। রাতের রমনা পার্ক আরও মোহনীয়। ফুলের সৌন্দর্য মনে একটা আলাদা অনুভূতি জাগায়। মনে আনে প্রশান্তি। প্রেমের আসকারা দেয়। কিছু সময়ের জন্য অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। ছোটবেলায় পড়া কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা সেই কবিতাটি মনে আছে? ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা, খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি। /দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে, ফুল কিনে নিও, হে অনুরাগী।’

লেখক : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন

সর্বশেষ খবর