সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

ভারতের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস

বহুত্ববাদ ও উদার গণতান্ত্রিক সহনশীল মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বব্যাপী ক্ষয়িষ্ণু একটা ধারা ক্রমশই বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। বহু দিক থেকে চুলচেরা সব বিশ্লেষণ চলছে। পক্ষ-বিপক্ষের তর্ক-বিতর্কে ভারতের মিডিয়া এখন প্রচন্ড গরম। বৈশ্বিক মিডিয়ায়ও প্রতিদিন ভারতের নির্বাচন নিয়ে খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশ পাচ্ছে।  বড় গাছের দিকে সবার দৃষ্টি থাকে। ভারত এখন উদীয়মান পরাশক্তি। ১৯ এপ্রিল প্রথম ধাপের ভোট শুরু হয়। শেষ অর্থাৎ সপ্তম দফা ভোট হবে ১ জুন। ভোট গণনা ও ফল প্রকাশ করা হবে ৪ জুন। সাত দফায় লোকসভার ভোটে ১০ লাখ কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। এ লেখাটি প্রকাশের দিন ২০ মে পঞ্চম দফা ভোট হবে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত চার দফা ভোটের পর ফলাফলের সম্ভাব্য চিত্রটি বছরের শুরুতে যেমন ছিল তার থেকে বেশ কিছুটা বদলে গেছে বলে ভারতের অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিশ্লেষণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত ছিল এবারও বিজেপি অপ্রতিরোধ্য এবং একটানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত। তাই শুরুতে আলোচনা ছিল বিজেপির জয়ী হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কথা হলো কত আসনে জিতবে সেটাই দেখার বিষয়। তাই বিজেপির স্লোগান, একলা ৩৭০ এবং শরিক মিলে ৪০০। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকেই একটা ভিন্ন বাতাস অনুভব করার কথা কেউ কেউ বলতে শুরু করেন এবং প্রথম দুই দফা ভোটের পর অনেকেই জোরেশোরে বলতে শুরু করেছেন যে, যেমন ভাবা হয়েছিল তা নয়, বিজেপির জন্য লড়াইটা সহজ হচ্ছে না। অঘটনও ঘটে যেতে পারে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত হচ্ছে দলগত হিসাবে এককভাবে পাল্লা এখনো বিজেপির দিকেই ভারী। ভারতের জাতীয় রাজনীতির হিসাবকিতাব এতই জটিল এবং এত বেশি পরিবর্তনশীল উপাদান দ্বারা প্রভাবিত যে, এর ফল সম্পর্কে আগাম কিছু বলা খুবই কঠিন কাজ। ২০০৪ সালের নির্বাচনে তখন ক্ষমতায় থাকা অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) জোটের ইন্ডিয়া শাইনিং স্লোগানের ঢেউ দেখে বড় বড় জরিপকারী প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করে বলেছিল দ্বিতীয়বার টানা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু সব প্রিডিকশন ব্যর্থ করে ২০০৪ সালে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)। ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন ১৪৫ থেকে বেড়ে ২০৬ হয়ে যায় এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। বিজেপির আসন ২০০৪ সালের ১৩৮ থেকে নেমে আসে ১১৬টিতে। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে কংগ্রেস সরকার সর্বভারতীয় অর্থনীতিকে একটা শক্ত ভিত্তিতে নিয়ে যায়। ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে বড় চমক দেখাতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের অভাবনীয় বিপর্যয় ঘটে। কংগ্রেসের ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাত্র ৪৪টি আসন পায়, যেখানে পাঁচ বছর আগে প্রাপ্ত আসন ছিল ২০৬। অন্যদিকে বিজেপি ২০০৯ সালে প্রাপ্ত ১১৬ থেকে একলাফে ২০১৪ সালে ২৮২ আসন পেয়ে যায়। আরেকটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করি, তাহলে বোঝা যাবে ভারতের নির্বাচনি ফল আগাম অনুমান করা কত কঠিন কাজ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পায় শতকরা ৩৪ শতাংশ, আর বিজেপি ১৭ শতাংশ। অথচ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বেড়ে হয় শতকরা ৪৫ শতাংশ, আর বিজেপির কমে মাত্র ১০ শতাংশ হয়ে যায়। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিশাল উত্থান ঘটে, শতকরা প্রায় ৪০.৭ শতাংশ ভোট এবং পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি দখল করে নেয়। তারপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট সামান্য কমে হয় শতকরা প্রায় ৩৮ শতাংশ। তাতে বোঝা যায়- পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বড় বিস্তৃতি ঘটেছে। তাই এবার লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট প্রাপ্তি যদি শতকরা ৩৫-৪০ শতাংশের মধ্যে থাকে, তাহলেও বিজেপিবিরোধী শিবিরের জন্য সেটা বড় দুঃসংবাদ হতে পারে। তবে এটাও ঠিক, ভোট প্রাপ্তির হার একটা বড় বিষয় হলেও ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট নির্বাচনি পদ্ধতিতে শতকরা ভোট প্রাপ্তির সঙ্গে আসন প্রাপ্তির অনুপাতে বিগত সময়ে বিস্তর পার্থক্য ঘটেছে। এবার অন্য উপাদানগুলো নিয়ে আলোচনা করি। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী ফ্যাক্টর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এককভাবে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য, তার কোনো জুড়ি নেই। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে নির্বাচনি প্রচারে বিজেপি নেতারা বিগত ১০ বছরে সরকারের পারফরম্যান্সের কথা নয়, নরেন্দ্র মোদির নামে ভোট চাইছেন। মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর ভারতের হিন্দি ভাষাভাষী বলয়ে বিজেপির আদর্শগত বড় ভোটব্যাংক তৈরি হয়েছে। এটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় সম্বল। বিজেপির আরেকটি বড় শক্তি আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)। ক্যাডারভিত্তিক দল হওয়ায় তারা মানুষের কাছে ব্যক্তি পর্যায়ে যেভাবে পৌঁছাতে পারে অন্য দলের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চার দফায় যে হারে ভোট পড়েছে সেটি বিগত লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে গড়ে ৫-৭ শতাংশ কম। তাতে বলা হচ্ছে, ক্যাডারভিত্তিক দল হওয়ায় এবং নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক থাকায় বিজেপির ভোটাররা ঠিকই ভোট দিয়েছে। আর কংগ্রেস এবং তাদের মিত্র বড় সব আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপিবিরোধী জোয়ার সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় জনগণ সেভাবে ভোট কেন্দ্রে আসেনি। তবে ভারতের কিছু মিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী কম ভোট পড়া মানে বিগত দুই নির্বাচনে দলনিরপেক্ষ যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে এটা তাদের ক্ষমতাবিরোধী মনের বহিঃপ্রকাশ। বিজেপির বিপরীতে কংগ্রেসের বড় দুর্বলতা, সুনির্দিষ্টভাবে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো প্রার্থীকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। তবে রাহুল গান্ধী কর্তৃক ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তামিলনাড়ুর দক্ষিণ প্রান্ত কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ৩৫০০ কিলোমিটার ভারত জোড়ো যাত্রার একটা সুফল কংগ্রেস পাবে বলে এখন মনে হচ্ছে। রাহুল গান্ধী ও বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সভা-সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম দেখে অনেকেই মনে করছেন এবার কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে। তবে সেই ঘুরে দাঁড়ানোটা দিল্লির মসনদ পর্যন্ত যাবে কি না তা নিয়ে অনেক রকম পক্ষ-বিপক্ষে মত আছে। কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস আসন পায় মাত্র ৫২টি, ভোট প্রাপ্তির হার ছিল ১৯.৫ শতাংশ। তাই এককভাবে তো সম্ভব নয়, বরং ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করতে হলেও দলগতভাবে কংগ্রেসকে অন্তত ১৫০-১৬০-এর ওপরে আসন পেতে হবে। কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস আছে। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ১৫৪ আসন পেয়ে পরাজিত হয়ে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৮০ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসন পেয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে কংগ্রেস। কিন্তু কথা হলো, তখন ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন। বিহার, কর্ণাটক মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গকে এবার মূল যুদ্ধক্ষেত্র বলা হচ্ছে। এই পাঁচটি রাজ্যে কংগ্রেস ও তার জোটভুক্ত আঞ্চলিক দলগুলো যদি ২০১৯ সালের নির্বাচনি ফল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো করতে পারে তাহলে বিজেপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। বিহারে রয়েছে ৪০টি লোকসভার আসন। এখানে প্রভাবশালী ও ঝানু রাজনীতিক বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও তার সংযুক্ত জনতা দল কংগ্রেস জোট ছেড়ে এনডিএ জোটে যোগ দেওয়ায় এ রাজ্যে বিজেপি অনেকটাই ভারমুক্ত। তবে বিহারের একসময়ের সর্বভারতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব নীতিশ কুমারের বিপরীতে তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে কাছে টানছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের আসন সংখ্যা ছিল শূন্য। তাই শূন্য থেকে কতটুকু এগোতে পারবেন তা নিয়ে কথা থেকে যায়। তবে জোটের রাজনীতিতে নীতিশ কুমারের বারবার ডিগবাজি দেওয়াটা তরুণ ভোটাররা পছন্দ করছেন না বলে ভারতীয় মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র কর্ণাটকে আসন সংখ্যা ২৮। ২০১৯ সালের নির্বাচনে শতকরা ৫১.২৮ ভাগ ভোট পেয়ে বিজেপি ২৫টি আসন পায়। কংগ্রেস সেবার মাত্র একটি আসন পায়, যদিও ভোট প্রাপ্তি ছিল শতকরা ৩১.৮ ভাগ। ২০২৩ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস সরকার গঠন করায় সেখানে একটা পরিবর্তনের হাওয়া এবং তাতে বিজেপির আসন সংখ্যা ১০-১২টি কমে যেতে পারে বলে ভারতীয় বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাটল গ্রাউন্ড উত্তরপ্রদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৭১টি পায়। কিন্তু বিজেপির বড় উত্থানের বছর ২০১৯ সালে কমে আসে ৬২টিতে। এবার কংগ্রেস ও অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতির কারণে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে। তবে কত কমবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিজেপির আসন যদি উত্তরপ্রদেশে ৫০-এর নিচে নেমে যায় তাহলে সেটা সার্বিক জয়-পরাজয়ের হিসাবে বিজেপির জন্য বড় দুঃসংবাদ হবে। ৪৮টি লোকসভা আসনের মহারাষ্ট্র হতে পারে এবারের নির্বাচনের বড় এক টার্নিং পয়েন্ট। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত বিজেপি ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ছিল শক্ত জোটে আবদ্ধ। আদর্শগতভাবে দুই দলের জায়গা অভিন্ন। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে বড় মতপার্থক্য হওয়ায় বিজেপি ছেড়ে শিবসেনা কংগ্রেস ও শারদ পাওয়ারের এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হন। তখন ভারতের এক বাঙালি সিনিয়র সাংবাদিককে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম আদর্শগতভাবে তেল আর জলের মিলন কীভাবে হয়। তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে সবকিছুই হালাল। ২০২২ সালে এসে মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা একনাথ সিন্ধিয়া কিছু বিধানসভার সদস্য নিয়ে কংগ্রেস ত্যাগ এবং বিজেপিতে যোগ দেন। তাতে উদ্ধব ঠাকরের সরকারের পতন ঘটে এবং রাজ্য সরকার গঠন করে বিজেপি। এবার এনসিপি, শিবসেনা ও কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই তিন দলের সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তি প্রায় শতকরা ৫৫.৫ ভাগ, আর আসন ছিল ২৩টি। অন্যদিকে বিজেপি ২৩টি আসন পেলেও ভোট প্রাপ্তির হার ছিল ২৭.৪ ভাগ। সুতরাং মহারাষ্ট্র এবার বিজেপির জন্য বড় দুশ্চিন্তার জায়গা। এবার বিজেপির আসন সংখ্যা এ রাজ্যে গতবারের ২৩ থেকে বেশ নিচে নেমে যেতে পারে বলেই বেশির ভাগ বিশ্লেষণে আসছে। আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের শরিক কংগ্রেস সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস আলাদা আলাদা নির্বাচন করছে বিধায় ২০১৯ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ১৮ আসনের বড় হেরফের হবে বলে কেউ বলছেন না। দু-একটি প্লাস-মাইনাস হতে পারে। অন্যান্য ফ্যাক্টরের মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিয়াল ও তার দল আদ আদমি পার্টি (এএপি) এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দিল্লি ও পাঞ্জাবে তাদের সরকার আছে। দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে এএপি জোটবদ্ধ। কেজরিওয়ালের গ্রেফতার, হাজতবাস ও হাই কোর্টের আদেশে নির্বাচনি প্রচার চালানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভের বিষয়টি ব্যাপকভাবে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাতে এএপির কর্মী-সমর্থকদের উল্লাস-উদ্দীপনা বৃদ্ধির সঙ্গে তার একটা অনুকূল সাড়া দিল্লির সাধারণ ভোটারদের মধ্যে পড়বে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এর প্রভাব পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা রাজ্যেও পড়তে পারে। ফলে দিল্লি ও হরিয়ানার ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির একচেটিয়া অবস্থান থাকলেও সেখানে এবার ভাগ বসাতে পারে এএপি। আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরখন্ড ও উত্তরপ্রদেশ- এ ১০টি রাজ্যের মোট ২৫৪ আসনের মধ্যে ২০১৯ সালে বিজেপি ও জোট পায় ২২২টি। এ রাজ্যগুলোতে বিজেপি এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে থাকলেও উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ২০১৯ সালের প্রাপ্ত আসন ধরে রাখা নিয়ে দোলাচল সৃষ্টি হয়েছে। তাতে এ ১০ রাজ্যে গত নির্বাচনে প্রাপ্ত ২২২ আসন থেকে বড় আকারে না হলেও যদি মাঝারি মাত্রার প্রস্থান ঘটে তাহলে সেটা কংগ্রেস জোটকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। অন্যদিকে কর্ণাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গ- এ সাতটি রাজ্য যেখানে কংগ্রেস জোট সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, সেখানে মোট ২০৭টি আসনের মধ্যে কিছু এদিকে-ওদিক হলেও বড় ধরনের বিজয় যদি তারা না পায় তাহলে বিজেপি অপ্রতিরোধ্যই থেকে যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত অনুসারে এখনো বিজেপির পাল্লা ভারী হলেও লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই সবাই মনে করছেন এবং তাতে যা কিছু ঘটে যেতে পারে। এই কলামে আলোচিত ফ্যাক্টরগুলোর বাইরেও অনেক কিছু আছে। তাই শেষটা দেখার জন্য ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর