রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মুসলিম মিল্লাতের স্থপতি ইবরাহিম (আ.)

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মুসলিম মিল্লাতের স্থপতি ইবরাহিম (আ.)

শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ নবীগণের অন্যতম হলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ২৫টি সুরায় তাঁর নাম এসেছে। তাঁর নাম অনুযায়ী আল কোরআনে ইবরাহিম নামে একটি সুরা নামকরণ হয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘ইবরাহিম খোদাভীতিশীল ও আনুগত্যশীল মহৎ ব্যক্তি’ (আন নাহল-১২০)। মুসলিম উম্মাহ তাঁর অনুকরণে প্রতি বছর কোরবানি করে এবং পবিত্র হজ পালন করে থাকে। তাঁর স্মৃতি অনুসরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক হজ পালনকারীর জন্য ওয়াজিব। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গা বানাও’ (বাকারা-১২৫)। রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে অনেক ভালোবাসতেন। ইবরাহিম (আ.)-এর নামে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর এক পুত্রসন্তানের নামকরণ করেন (সহিহ মুসলিম-২১৩৫)। মহান প্রভু ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর একান্ত বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত ধর্মের অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইবরাহিমের ধর্ম অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর চাইতে উত্তম ধর্ম কার? অপর আয়াতে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘বলুন, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সবাই ইবরাহিমের (আ.) ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠভাবে সত্য ধর্মের অনুসারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান-৯৫)।

‘আল্লাহ ইবরাহিমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন’ (নিসা-১২৫)। সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মহান প্রভু নবী ইবরাহিম (আ.)কে ইসলাম ধর্মের স্থপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন, আগেও এবং এই কোরআনেও’ (আল হাজ-৭৮)। বিশ্বমানবতার হেদায়েত ও কল্যাণে এই ভূপৃষ্ঠে নবী আদম (আ.)-এর মাধ্যমে নির্মিত হয় পবিত্র কাবাঘর। এর পর শীষ (আ.) একবার সংস্কার করেন। নূহ (আ.)-এর যুগে মহাপ্লাবনে পবিত্র কাবাঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মহান প্রভু ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে এই পবিত্র বরকতময় ঘর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল’ (বাকারা-১২৭)। প্রজ্ঞাময় প্রভু স্বীয় বন্ধু ইবরাহিম (আ.)কে বিশেষ কুদরতে লালন করে তাঁকে পুণ্যত্বের স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো এবং তাঁর মহত্ত্বকে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রায় ৩০টি পরীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যখন ইবরাহিম (আ.)কে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করব। তিনি বললেন আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না’ (বাকারা-১২৪)।

ইবরাহিম (আ.)-এর পরীক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো, কর্মক্ষেত্রে দৃঢ়তা যাচাই, নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ, মাতৃভূমি ও স্বজাতি ত্যাগ করে সিরিয়ায় হিজরত, বিবি হাজেরা (রা.) ও তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাইল (আ.)সহ শুষ্ক পাহাড় ও উত্তপ্ত বালুকাময়, তৃণলতাহীন প্রান্তর মক্কা নগরীতে একাকিত্ব অবস্থান, ছেলে ইসমাইল (আ.)কে নিজ হাতে কোরবানি করার নির্দেশ, কাবাগৃহ নির্মাণ এবং ১০টি খাসায়েল বা প্রকৃতিসুলভ কাজ জীবনে বাস্তবায়ন ইত্যাদি ছিল ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য বড়ই কঠিন পরীক্ষা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর