সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কলবের জমিনে ঝরুক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর বর্ষণ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কলবের জমিনে ঝরুক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর বর্ষণ

রোদ বৃষ্টির খেলা চলছে প্রকৃতিতে। সাগরে নিম্নচাপ, স্থলে তাপপ্রবাহ। প্রকৃতির এমন বৈরী সময়ে বাংলার আকাশে উঁকি মারছে বর্ষা। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও বর্ষার পুরনো রূপ এখনো আগের মতোই দেখা যায়। সেই কালো মেঘে ঢেকে থাকা আকাশ, অঝোর ধারায় বৃষ্টি এ সবকিছুই বর্ষার বৈশিষ্ট্য। তপ্ত গ্রীষ্মের প্রহর শেষে ধরণি যখন উত্তপ্ত, এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে প্রতিটি ধূলিকণা, তখন এক পশলা বৃষ্টি নামে বাংলার বুকে। সেই বৃষ্টির জলরাশি বেয়ে নাকে আসে সোঁদা মাটির গন্ধ। তপ্ত প্রকৃতির সঙ্গে শীতল হয় আমাদের দেহমন। হৃদয়ের গভীর থেকে ভেসে আসে কৃতজ্ঞতার অমীয় গান ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’

প্রকৃতির মতো আমাদের দিলের জমিনও শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। বিশেষ করে যে দিলে ইমানের বর্ষণ হয় না। ইমানের বৃষ্টির নাম ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যে কলবে সকাল-সন্ধ্যা কালেমার বর্ষণ ঝরে, সে কলব জিন্দা কলব। আর হাদিসে কুদসির ঘোষণা থেকে জানা যায়, জিন্দা কলবওয়ালার জন্য জান্নাত ওয়াজিব, জাহান্নাম হারাম। কালেমায়ে তাওহিদের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে জলিলে কদর সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হলো আমার দুর্গ। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।’ (ইবনে নাজ্জার) অন্য একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কথাটি আমার। যে এটা মেনে জীবন পরিচালনা করবে আমি তাকে আমার চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যাকে আমার জান্নাতে প্রবেশ করাব, সে অবশ্যই আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে। (খতিব)

একটা সময় সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের সুরে গমগম করত বাংলার প্রতিটি গ্রাম। বিভিন্ন ছন্দ লয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকির করতেন মুসল্লিরা। এখন মুসলমানদের জীবন থেকে ধীরে ধীরে জিকির হারিয়ে যাচ্ছে। তাই খায়র বরকতও উঠে গিয়েছে তাদের জীবন থেকে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যখন লা ইলাহা ইল্লাহ জিকির করে তখন সে জিকির আকাশের সীমা পেরিয়ে মহান আল্লাহর আরশে আজিমে চলে যায়।’ আল্লাহতায়ালা ডেকে বলেন, ‘হে কালেমা! পৃথিবীর বুক থেকে কেন তুমি আমার কাছে এসেছো? তোমার ফরিয়াদ কী?’ কালেমায়ে তাওহিদ তখন কিছু না বলে থরথর করে কাঁপতে থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্থির হও’। কালেমা জবাবে বলে, ‘কীভাবে স্থির হব, যে আমাকে জিকির করছে তাকে এখনো ক্ষমা করা হয়নি!’ জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘আমিই ওই ব্যক্তির জবানে তোমার জিকির জারি করেছি, তুমি ফরিয়াদ করার আগেই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ সুবহানাল্লাহ। (দায়লামি শরিফ) হজরত আনাস (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা ডেকে বললেন, ‘কোথায় আছে আমার প্রতিবেশীরা! তাদের আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হোক।’ জানতে চাওয়া হবে, ‘হে আল্লাহ! আপনার প্রতিবেশী কারা?’ জবাবে আল্লাহ বললেন, ‘যারা সর্বক্ষণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকিরে রত ছিল তারাই আমার প্রতিবেশী।’ (দায়লামি শরিফ। )

হজরত আনাস (রা.) থেকে আরেকটি চমৎকার হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ‘আল্লাহতায়ালা হজরত মুসার (আ.) প্রতি অহি করেছেন, ‘হে মুসা! তোমার উম্মতের মধ্যে একদল লোক আছে যারা জীবনের সব ক্ষেত্রে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকির করবে। জিকিরের ফলে তাদের মর্যাদা নবীদের কাছাকাছি চলে যাবে। আর তাদের প্রতিদান নবীদের সমান দেওয়া হবে।’ (দায়লামি শরিফ) হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, যখন হজরত মুসাকে (আ.) আল্লাহতায়ালা তাওরাত কিতাব দান করলেন, তখন মুসা নবী আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যে দোয়ার মাধ্যমে আপনাকে ডাকলে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেবেন।’ জবাবে আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘হে মুসা তুমি আমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই দোয়ার মাধ্যমে ডাকবে।’ এ কথা শুনে মুসা নবী বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ দোয়ার মাধ্যমে তো সব মানুষই আপনাকে ডেকে থাকে। আমি বিশেষ কোনো দোয়া জানতে চাচ্ছি, যে দোয়ার মাধ্যমে ডাকলে আপনি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারবেন না।’ জবাবে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুসা! যদি সাত আসমান ও তার অধিবাসী, সাত জমিন ও তার অধিবাসী এবং সাত সমুদ্র ও তার ভিতর যা কিছু সব মিলে একটি পাল্লায় রাখা হয় আর শুধু  ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ একটি পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে জেনে রাখ! অবশ্যই কালেমায়ে তাওহিদের ওজন বেশি ভারি হবে।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা।)

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর