বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জনপ্রতিনিধির সম্পদ

প্রয়োজন তদারকি ও জবাবদিহিতা

একটা সময় ছিল, যখন দেশ ও জনগণের জন্য কিছু করার লক্ষ্যে অনেক আদর্শবাদী কৃষিজীবী, শিক্ষক এবং আইনজীবী স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতেন। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। তারাও সাধ্যমতো সমাজের কল্যাণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। সময় পাল্টেছে। সেই আদর্শটা হারিয়ে গেছে। সামাজিক মূল্যবোধে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের দাপট। কৃষিজীবী ও আইনজীবীরা পিছিয়ে পড়েছেন। শিক্ষকরা চলে গেছেন চতুর্থ কাতারে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আজ দেশের ৯০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সোমবার রাজধানীতে টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভোট প্রার্থীদের ৬৭ শতাংশই ব্যবসায়ী। কোটিপতি ১০৬ জন। এর মধ্যে একজন প্রার্থী আছেন, যিনি গত পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শতাংশ। এক-দেড় হাজার শতাংশ সম্পদ বেড়েছে-এমন প্রার্থী আছেন আরও কজন। আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন প্রায় সবাই। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন আলাদীনের প্রদীপ হাতে পান। প্রদীপের দৈত্যকে তারা যা হুকুম করেন, সঙ্গে সঙ্গে তা হাজির হয়। ফেঁপে-ফুলে ওঠে জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ-সম্পত্তি। এক্ষেত্রে জনস্বার্থ যে উপেক্ষিত হচ্ছে, জনকণ্যাণের লক্ষ্যে বরাদ্দ অর্থের নয়ছয়, আত্মসাৎ হচ্ছে, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে, অবৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন হচ্ছে; তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। জনগণেরও তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। একজন ব্যবসায়ীর আয় বৃদ্ধি পাবে-এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালে বিস্ময়কর পর্যায়ে আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে- তা কীভাবে সম্ভব? বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধিদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকা উচিত রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের। পাঁচ-দশ বছর পর এক-একজনের অপকর্মের তথ্য-উপাত্ত দেখে চোখ কপালে তোলার চেয়ে, প্রতি ছয় মাস বা এক বছরে জনপ্রতিনিধিদের কৃতকর্মের বিশ্লেষণ ব্যবস্থা থাকলে তারা সামাজিক শাসন ও নিয়ন্ত্রণে থাকতেন। জনগণ তাদের কাছ থেকে কিছু সেবা ও কল্যাণ লাভ করত। সমাজের কিছু উন্নতি হতে পারত। এই তদারকি, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা খুব দরকার।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর