বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা

আবদুর রশিদ

রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা, তার সন্তান এবং অন্য সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হই।’ উল্লিখিত হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায় রসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা মুনিদের জন্য অপরিহার্য। মানুষ বাবা-মা আর সন্তান-সন্ততিকে ভালোবাসে স্বভাবজাত কারণে। এই ভালোবাসা অকৃত্রিম। এই ভালোবাসার আকর্ষণ এতটাই তীব্র যে, বাবা-মা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে গড়তে চায় সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে অনায়াসে। আবার যারা সুসন্তান, তারা বাবা-মায়ের সেবার জন্য নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করতে একটুও চিন্তা করে না। বাবা-মা যেমনই হোক সন্তানের ভালোবাসা তাদের প্রতি সব সময় অটুট থাকে। তবে মুমিন হতে হলে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততির চেয়েও রসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। মানুষের স্বভাবজাত ভালোবাসা সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মায়ের ওপর যতই থাকুক না কেন পূর্ণ ইমানদার হতে হলে রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। ইমানদাররা রসুল (সা.) -কে ভালোবাসে সবটুকু আন্তরিকতা দিয়ে। তার নাম যখনই কোনো মুমিন বান্দার কানে আসে, সঙ্গে সঙ্গে চরম আবেগ প্রেম-ভালোবাসায় জবান দিয়ে উচ্চারণ করে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। নবীজির নাম যতবার উচ্চারিত হয় ততবার দরুদ পড়তে একটুও ক্লান্তিবোধ করে না মুমিন বান্দারা। আল্লামা শেখ সাদি (রহ.) বলেন, আল্লাহর বিধিবিধান পালন করার পর ‘যে ব্যক্তি দরুদ পড়ার অভ্যাস করে, তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়’। নবীজির সিরাত ও সুরাতের আলোচনা মুমিন বান্দা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে উপদেশ হাসিল করে এবং হƒদয়ে তৃপ্তির খোরাক জোগায়। কেউ কেউ মনে করতে পারেন, রসুলকে সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসব ঠিক, তবে নিজের জীবন থেকে বেশি নয়। এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় একটি হাদিস থেকে। প্রিয় সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, একদিন তারা মহানবীর সঙ্গে ছিলেন। তখন তিনি প্রিয় সাহাবি হজরত উমর (রা.)-এর হাত ধরে ছিলেন। হজরত উমর (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমার কাছে আমার নিজ জান থেকে বেশি প্রিয় নন। অর্থাৎ আপনাকে আমি দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি মহব্বত করি, তবে আমার নিজ সত্তা থেকে বেশি মহব্বত করি না। রসুল (সা.) হজরত উমর (রা.)-এর এ কথা শুনে বললেন, ‘নাহ! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ, যতক্ষণ আমি তোমার কাছে তোমার নিজের চেয়েও বেশি প্রিয় না হই (ততক্ষণ তুমি পূর্ণ মুমিন নও)। এরপর হজরত উমর (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, এখন আপনি আমার কাছে আমার নিজের চেয়েও বেশি প্রিয়। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু (সা.) বললেন হে উমর এখন হয়েছে। (বোখারি শরিফ হাদিস নম্বর ৩২)। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাহাবায়ে কেরামরা কত সহজ-সরল ছিলেন। তাদের ভিতরে-বাইরে একরকম ছিল। ভিতরে যা থাকত তা অকপটে বলে দিতেন। বর্তমানে অনেক মানুষ এমন আছে, যারা নিজেদের ভালো প্রমাণ করার জন্য এবং মানুষকে খুশি করার জন্য অহরহ মিথ্যা বলে। বিচক্ষণ সাহাবি হজরত উমর (রা.) অনুধাবন করেছিলেন, অন্য সবকিছুর চেয়ে মানুষের নিজের প্রতি ভালোবাসাই বেশি। রসুল (সা.) যখন তাকে বললেন, হে উমর তুমি যদি পূর্ণ ইমানদার হতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমার ভিতর নবীর প্রতি ভালোবাসা তোমার জীবনের চেয়েও বেশি থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝে নিলেন, দুনিয়ার জীবন মাত্র কয়েক দিনের। দুনিয়ার হায়াত একদিন শেষ হয়ে যাবে। বরং মানব সৃষ্টির একমাত্র মাকসাদ হলো এক আল্লাহর ওপর ইমান আনা। আল্লাহর প্রেরিত রসুলদের বিশ্বাস করা এবং তাঁদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তৈরি করা।

তাই তো তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলেন- ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। রসুলের প্রতি প্রতিটি মুমিনের এমনই ভালোবাসা থাকা চাই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে। তার চলার পথে চলতে হবে। তার দেখিয়ে দেওয়া পথে আল্লাহর রহমত নিশ্চিত করতে হবে। অল্লাহ আমোদের সে তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর