বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত সুন্দরবন

বন্যপ্রাণী রক্ষায় চাই উদ্যোগ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সব ঘূর্ণিঝড়ের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে বুক পেতে দাঁড়িয়ে দেশের উপকূল অঞ্চলকে বরাবর রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় রিমালের ভয়ংকর আঘাতে এবার নিজেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সেই বনভূমি। টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে চলা ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল তান্ডবে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন বন বিশেষজ্ঞরা। ঘূর্ণিঝড় রিমালে সুন্দরবনের হাজার হাজার গাছ ভেঙে গেছে। শত শত বাঘ-হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী মারা গেছে বলে আশঙ্কা করছে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’। তাদের মতে, উঁচু মাত্রার জোয়ারের তোড় বা জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুঝে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীরা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। কিন্তু এবার টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে চলা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চরম বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়  বন্যপ্রাণীদের। এর অনেকই সাগরে ভেসে গিয়ে মারা পড়তে পারে। মঙ্গলবার পর্যন্ত যে ৩৯টি হরিণের মৃতদেহ ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়- তা মারা পড়া হরিণের একটা অংশ মাত্র। কারণ, বিপদে পড়া কত হরিণ কুমিরের পেটে গেছে, কতগুলো গভীর সাগরে ভেসে গেছে, আর কত মৃত বা আহত হরিণ পড়ে আছে গহিন বনের গভীরে- সে তথ্য পুরোটা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। একই বাস্তবতা বাঘ, শূকর, সাপ, বানর, পাখ-পাখালিসহ সব অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও। প্রবল পরাক্রমশালী প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ মানুষের অসাধ্য। বিভিন্ন সঙ্গত-অসঙ্গত কারণে প্রকৃতির নানা পরিবর্তনও হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ভয়ংকর রুদ্ররূপ নিচ্ছে প্রকৃতি। যেমন, এবারই টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিধ্বংসী তান্ডব চালাল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সাধারণত এতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না কোনো ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী ছোবল। এ কারণে নিজেদের জীবন, শস্য ও সম্পদ এবং বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কার্যকর সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে।  বনের গভীরে নির্দিষ্ট দূরত্বে ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু অন্তত ২০০ শক্ত মাটির টিলা তৈরি করা যেতে পারে- যেন দুর্যোগকালে প্রাণীরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারে। সার্বিকভাবে, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাস্তবতার নিরিখে সুপরিকল্পিত, দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর