শিরোনাম
শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রসুলের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি ইমানের অপরিহার্য শর্ত

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

বস্তুজগতে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তুলনায় বড় কেউ নয়। তিনি ছিলেন বে-গুনাহ নিষ্পাপ, জান্নাতি। আল্লাহর সর্বাধিক পিয়ারা নবী, যার শানে বলা হয়েছে- তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালো বাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এর মর্মার্থ এই যে, ‘রসুলের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি ইমানের অলঙ্ঘনীয় শর্ত। যারা তার অনুসরণ করবে আল্লাহপাক তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং ইহজগৎ ও আখেরাতে তাদের প্রতি স্বীয় দয়ামায়া অব্যাহত রাখবেন।’

আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক নিজেদের ইসলামের এজেন্ট মনে করে থাকে। অন্যদিকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছাকৃতভাবে গুনাহ করেছেন বলে মন্তব্য করে থাকে। এরা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এবং ওলামা-মাশায়েখদের সমালোচনায় তৃপ্তি বোধ করে। এদের সংশ্রব থেকে সাবধান।

এত বড় মহান নবী হয়েও নিজের পেটে পাথর বেঁধেছেন, তায়েফের ময়দানে কাফেরদের পাথরাঘাতে দেহ মুবারক রক্তাক্ত হয়েছে, উহুদের যুদ্ধে দান্দান মুবারক শহীদ হয়েছে, শির মুবারক কেটে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। পবিত্র দেহ থেকে রক্ত ঝরেছে। তিনি কি নামাজ আদায় করতেন না? তাহলে তাঁর ওপর এই বিপদ কেন? এই বালা মুসিবত কেন? মূলত জান্নাতের রাস্তা সহজ নয়, বড় কঠিন পথ। বহু বাধাবিঘ্নের মধ্য দিয়ে এই পথ অতিক্রম করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের জেহাদ-মুজাহাদা করতে হয়। স্বয়ং আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো তোমাদের কাছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসেনি? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রসুল এবং তাঁর সঙ্গে ইমান আনয়নকারীগণ বলেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। এত যাতনা পোহাতে হলো কেন? আল্লাহপাক নবী রসুলদের নিষ্পাপ করেছেন। তাদের জন্য জান্নাতের সুনিশ্চিত ফয়সালা ঘোষণা করেছেন। তাদের অনুসারীদের জন্য জান্নাতের এবং নাজাতের ঘোষণা করেছেন। এরপরও তাদের এ পথে এত কষ্ট, এত যাতনা পোহাতে হলো কেন? বোঝা গেল যে, কেবল গুনাহের কারণে, অথবা কেবল শাস্তি ও আজাব স্বরূপই বালা-মুসিবত আসে না। এর আরও অন্যান্য কারণ এবং রহস্য থাকে। আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের বেলায় তাই ধরে নিতে হবে।

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) রসুলের প্রসিদ্ধ সাহাবি ছিলেন। তিনি প্রায় ২৩ বছর পর্যন্ত অর্শ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করেন। তবে তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ্দাওয়াত। তার মোনাজাত কবুলের কথা সুপ্রসিদ্ধ। লোকেরা তাদের রোগব্যাধি এবং বিভিন্ন সমস্যাবলির জন্য তার দোয়া নিত এবং উপকৃত হতো। একজন শুভাকাক্সক্ষী তাকে বললেন, অসংখ্য মানুষ আপনার দোয়ার বরকতে আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হচ্ছে অথচ আপনার নিজের অবস্থা এত করুণ! যদি নিজের জন্য আল্লাহপাকের দরবারে মোনাজাত করেন, তাহলে তো আরোগ্যের আশা করা যেত। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা আমার কাছ থেকে সরে যাও, তখন আমার সম্মুখে আল্লাহপাক জান্নাত এবং জাহান্নামের ভোগসামগ্রী তুলে ধরেন। পর্দার আবরণ উঠে যায়। আমাকে আল্লাহপাক এত বড় নেয়ামত দান করেছেন এ কঠিন রোগের বদৌলতে। এ রোগের বেদনা সহ্য করায় আমার জন্য জান্নাতের শ্রেষ্ঠ মাকাম লাভের পথ সুগম করেছেন। আমি কি মোনাজাত করে এ নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হব?

এ কথা সত্য যে, কাফের-বেদুইন এবং বিধর্মীদের জন্য বালা-মুসিবত আজাব ও শাস্তিস্বরূপই হয়ে থাকে। কিন্তু মুমিনদের বেলায় বাস্তবে যাই দেখা যাক এবং যাই বলা হোক বালা-মুসিবত অনর্থক নয় বরং অত্যন্ত রহস্যময়। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, ‘মুমিনদের সতর্ককরণ, গুনাহ মাফ, দরজা বুলন্দ ইত্যকার উদ্দেশ্যে বালা-মুসিবত দেওয়া হয়। উপরন্তু আল্লাহপাক কাউকে মারেফতের কোনো বিশেষ মাকাম দানের ইচ্ছা করেন যার পেছনে কোনো কারণ ও রহস্য থাকে। তাই তাকে সেই মাকামে পৌঁছানোর তাকিদে আমলের অভাব পূরণার্থে বালা-মুসিবত সহ্য করিয়ে সেই মাকামে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। রসুলে পাকের হাদিসেও এর ইঙ্গিত বিদ্যমান রয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন, আমার উম্মত অত্যন্ত সম্মানী। আল্লাহপাক তাদের আখেরাতের জীবনে আজাবে আক্রান্ত করে অপদস্ত করতে চান না। তাই পৃথিবীতে বিপদ-মুসিবত, জুলুম ইত্যাদিতে আক্রান্ত করে আখেরাতের জীবনে মুক্তির পথ সুগম করে থাকেন। কিন্তু তাই বলে আমাদের মতো মানুষের জন্য বালা-মুসিবতকে নেয়ামত মনে করে কামনা করা সমীচীন নয়। কারণ, আমাদের ইমানি অবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়। আমরা এখানে হেদায়েত ও নাজাতের উপায় প্রসঙ্গে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা শুনলাম। এর সারকথা হলো- গুনাহ বর্জন এবং নেক আমল করা হেদায়েত এবং নাজাত লাভের উপায়। রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দিন ইরশাদ করলেন- ‘আমার সমস্ত উম্মতই নাজাত পাবে এবং জান্নাতে যাবে, তবে যারা অস্বীকারকারী তারা ব্যতীত।’ একজন প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! অস্বীকারকারী কারা?’ রসুল বললেন- ‘যারা আমাকে অনুসরণ করে তারা জান্নাতে যাবে আর যারা আমার নাফরমানি করে তারা অস্বীকারকারী। সুতরাং তারা জাহান্নামে যাবে।’ এ হাদিসের দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই বোঝা যায় যে, হেদায়েত এবং নাজাতের একমাত্র উপায় গুনাহ বর্জন এবং নেক আমল। পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে এ বিষয়টিকে উল্লেখ করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালোবাসা।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর