শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

তাহিয়্যাতুল অজুর ফজিলত

যুবায়ের আহমাদ

তাহিয়্যাতুল অজুর ফজিলত

আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের অনন্য উপায় সুন্নত ও নফল নামাজগুলো ফরজের ঘাটতিগুলো পূরণ করবে হাশরের ময়দানে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বাগ্রে বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নয়তো সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন ফরজ নামাজে কোনো কমতি দেখা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরও সব আমলের হিসাব অনুরূপ গ্রহণ করা হবে। তিরমিজি। গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজগুলোর অন্যতম হলো তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ। তাহিয়্যাত অর্থ অভিবাদন। পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম অজু করার পরপরই অজুর অভিবাদনে ও সম্মানে যে ২ রাকাত নামাজ পড়া হয় তা-ই তাহিয়্যাতুল অজু। তাহিয়্যাতুল অজুর অনেক ফজিলত রয়েছে। কোনো মুসলমান ভালোভাবে অজু করার পরপরই দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ পড়লে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অজু করে দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি নিবদ্ধ রেখে (একাগ্রচিত্তে) দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’ সহিহ মুসলিম। ভালোভাবে অজু করা বলতে অজুর সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলো আদায় করে অজু করা। তাহিয়্যাতুল অজুর ফজিলত পেতে হলে অজুর সব সুন্নত ও মুস্তাহাবসহ অজু করতে হবে এবং এর পরপরই পবিত্র অর্জনের শুকরিয়া হিসেবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। উসমান (রা.) একদিন অজুর পানি চাইলেন। অজু শুরু করে তিনবার সুন্দর করে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন। নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। এরপর তিনবার চেহারা ধুলেন। দুই হাতের কনুইসহ ভালোভাবে তিনবার ধুলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন এবং টাখনু পর্যন্ত পা তিনবার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (সুন্দর করে) অজু করবে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, যাতে (দুনিয়ার) কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সব (ছগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ বুখারি ও মুসলিম। তাহিয়্যাতুল অজু নামাজের মাধ্যমে বান্দার মর্যাদাও বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবি ও মুয়াজ্জিন বেলাল (রা.) কে অজুর পরপর (তাহিয়্যাতুল অজু) নামাজ পড়ার কারণে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন ফজরের নামাজের সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল (রা.) কে বললেন, ‘বেলাল, আমাকে বল তো, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে কোন আমলটি তোমার কাছে (সওয়াবের আশার দিক থেকে) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।’ বেলাল (রা.) বললেন, ‘তেমন কোনো আমল আমার নেই; যার দ্বারা আমি (বিপুল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিন-রাতের যখনই আমি অজু করি; তখনই সেই অজুর মাধ্যমে যে কয় রাকাত সম্ভব হয়, আমি নামাজ আদায় করি।’ বুখারি ও মুসলিম। নামাজের নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময় ব্যতীত যে কোনো সময় অজুর পর এ নামাজ পড়া যায়। অজুর পর যদি ফরজ নামাজের জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে তাহিয়্যাতুল অজু শুরু না করে সরাসরি ফরজের জামাতে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। অজুর পর জামাত শুরুর যতটুকু সময় অবশিষ্ট তাতে যদি তাহিয়্যাতুল অজুর পরে সুন্নত পড়া না যায় তাহলেও তাহিয়্যাতুল অজু না পড়ে সরাসরি সুন্নতে মুয়াক্কাদার শুরু করলে তাতেই তাহিয়্যাতুল অজু ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা উভয় নামাজে সওয়াব মিলবে।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর