রবিবার, ২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওষুধে ভেজাল

সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান চাই

পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর প্রসঙ্গ তুললে মানুষ অবাক হয়ে তাকাবে। প্রশ্ন করবে তুমি কোনো বর্বর সমাজ থেকে এসেছ? কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, শুধু খাদ্যপণ্য বা প্রসাধনী নয়, ভেজাল সদর্পে ঢুকে পড়েছে ওষুধেও। জীবন বাঁচাতে মানুষ ওষুধ সেবন করে। অথচ আটা-ময়দা-সুজি দিয়ে সাভার ও কুমিল্লার কারখানায় বানানো হতো নকল অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল। এদের কজনকে পুলিশ ধরেছে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক নয়, লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যালবুমিন ইনজেকশন নিয়েও গড়ে উঠেছে ভেজাল সিন্ডিকেট। এসব ইনজেকশন পুশ করার পরপরই অনেক রোগী মারাও গেছেন। দোষ পড়েছে ডাক্তারের ওপর। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার করলে, ওষুধে ভেজাল থাকলে রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। তবু এসব দেদার চলছে। শুধু সাভার বা কুমিল্লায় নয়, সারা দেশে নকল-ভেজাল চক্রও অসংখ্য। আর এদের সহযোগিতা করেন অতি মুনাফালোভী কিছু ফার্মেসি মালিক। ভেজাল ওষুধ তৈরির অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন পাস করেছে সরকার। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে, কোর্ট বসিয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের কাছ থেকে তারা প্রায় ২ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। তবে কাউকে জেলে দেওয়া হয়নি। মৃত্যুদণ্ডের তো প্রশ্নই উঠছে না। অথচ ভেজাল ওষুধের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাবে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার কোনো পর্যবেক্ষণ, পরিসংখ্যান বা তথ্য নেই। ভেজাল প্যারাসিটামল সেবন করায় ১৯৯১ সালে দেশে ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে মারা যায় ২৮ শিশু। ২০১০ সালের রিট পিটিশনের নিষ্পত্তি করে ২০২২ সালের জুনে ওই মামলায় প্রতি পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন আদালত। বাবা-মার কলিজার ধন শিশু হত্যাকারীদের এমন জরিমানা দিতে আদালত বাধ্য হয়েছেন আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে। তাই খাদ্য ও ওষুধ ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আরও শক্ত আইন করতে হবে। না হলে ভেজাল চক্রের রাঘববোয়ালদের অপকর্ম বন্ধ হবে না।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর