সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে

পৃথিবীর সামান্য খরতাপেই যখন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তাহলে জাহান্নামবাসীর অবস্থা কী হবে সময় থাকতে ভেবে দেখা আবশ্যক। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- “হে মুমিনগণ তোমরা আগুনকে ভয় কর যা কাফেরদের জন্য বরাদ্দ। তাই তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা কৃপালাভ করতে স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা পেতে পার। ধাবিত হতে পার স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়। মুক্তাকি হতে পারলে এটাই প্রাপ্য হবে” (আল-ইমরান ১৩১-১৩৩)। তাই আসুন পৃথিবীর মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্য অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধাবলি মান্য করে আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করি।

আগুন থেকে বাঁচা এই জন্য উচিত, কারণ জাহান্নাম এক ভয়ংকর জায়গা, আল্লাহ ও পরকাল অবিশ্বাসীদের ঘর। যার অধিবাসী আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি শয়তান ও তার অনুসারীরা। আল্লাহ ইবলিশকে বলেছেন, আমি অবশ্যই তোমাকে এবং তোমাকে যারা অনুসরণ করবে তাদের জাহান্নামে দেব। তাই আমরা কোনো অবস্থাতেই ইবলিশের ধোঁকায় যেন না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগুনকে ভয় করার আরেকটি কারণ- এটা ফেরাউন- হামান, কারুন এবং উবাই ইবনুল কাআবদের ঘর তারাসহ যেসব মন্দ সৃষ্টি আল্লাহর আছে তাদের ঘর। এটা ছাড়া আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার সাথীদের ঘর যারা এই উম্মতের মুনাফিক। এরাই আগুনের জ্বালানি, আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই কুফরি না করি সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ এদের অবস্থান দোজখের সবচেয়ে নিচু স্থানে। এটা হচ্ছে আল্লাহর শাস্তির ঘর, তাই এটা আল্লাহর দয়া থেকে অনেক দূরে। এটা কিয়ামতের দিনে আসবে যাতে থাকবে ৭০ হাজার শিকল আর প্রত্যেক শিকল ৭০ হাজার ফেরেস্তা ধরে রাাখবে। সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আদম সন্তানের জ্বালানো আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের একভাগ। এ কথা শুনে সাহাবিরা বলে ওঠলেন, হে আল্লাহর রসুল দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, এর আরও ৬৯টা অংশ আছে যার প্রতিটি এ আগুনের সমতুল্য। সহিহ হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ওইদিন ইহুদি ও নাসারাদের জিজ্ঞাসা করা হবে- তোমরা কী চাও? তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের পান করতে দিন। আমাদের তৃষ্ণা মেটান। তখন তাদের জাহান্নামের দিকে নেওয়া হবে, যেটা একটা মারাজ এর মতো যার এক অংশ অন্য অংশকে ধ্বংস করছে। তারপর তারা আগুনের মধ্যে পড়বে। কিয়ামতের দিন হবে ৫০ হাজার বছরের ন্যায়। যারা ৫০ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকবে তাদের পেট ক্ষুধার্ত গলা পিপাসায় কাতর। অতঃপর যাদের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে সেখানে তারা খাদ্য ও পানীয় চাইবে কিন্তু আগুন ছাড়া কিছুই পাবে না। তাদের খাদ্য হবে জাককুম, এটা কষাটে গাছের ফল অপ্রীতিকর স্বাদযুক্ত, অসহ্য দুর্গন্ধযুক্ত এরূপ অখাদ্য। তারা এটা খাবে তাদের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু এতে তাদের পেটও ভরবে না, তৃষ্ণাও মিটবে না। অপর হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহকে ভয় কর যেভাবে ভয় করা উচিত। শোনা জাক্কুমের এক ফোঁটা পানি যদি দুনিয়ার সাগরে পড়ে তাহলে এটা পৃথিবীকে ও তার অধিবাসীদের নষ্ট করে ফেলবে (নাসাঈ তিরমিজি হতে বর্ণিত)। এ চলমান শাস্তির শেষ নেই। এটা থামবে না, তখন তারা হাতাশ হয়ে যাবে। প্রতিবার তাদের চামড়া বদলে দেবেন যাতে তারা যন্ত্রণা ভোগ করতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও হাকিম। প্রতিবার আগুনে চামড়া জ্বললে, আগুনের তীব্রতা আল্লাহ আরও বাড়িয়ে দেবেন তখন তারা চিৎকার করতে থাকবে। এক সময় তারা জাহান্নামের পাহারাদারদের বলবে, তোমরা রবকে বল- এক দিনের জন্য শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হোক। ফেরেস্তারা তাদের বলবে, এরূপ শাস্তি হবে তা জানাতে তোমাদের কাছে কোনো নবী দলিল প্রমাণসহ যায়নি। তখন তারা বলবে- হ্যাঁ, এসেছিল। ফেরেস্তারা তখন বলবে, তাহলে কাকুতি-মিনতি করে লাভ নেই। কারণ তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের কথা শোননি। একপর্যায়ে তারা জাহান্নামের মালিক ফেরেস্তাকে ডাকবে এবং বলবে হে মালিক ফেরেস্তা! তোমার রবকে বল আমাদের শেষ করে দিক, ধ্বংস করে দিক। ফেরেস্তা বলবে, তোমরা হচ্ছ মাকিফুন অর্থাৎ সত্য প্রমাণসহ তোমাদের কাছে যাওয়ার পরও তোমাদের বেশির ভাগ সত্য অপছন্দকারী। অতঃপর তারা মহাজগতের রবের দিকে ফিরবে। যিনি মহত্ত্ব ও মহিমার মালিক। যিনি ন্যায়পরায়ণ ও বিচারে ত্রুটিমুক্ত। তারা ডাকবে হে “আমাদের রব! আমাদের ভ্রষ্টতা আমাদের ওপর জয়ী ছিল, আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট জাতি। আমাদের রব। আমাদের মুক্তি দিন। আমরা যদি আবার কুফরি করি তাহলে আমরা অবশ্যই সীমা লংঘনকারী হব। আল্লাহ তখন তাদের বলবেন, কাতরাতে থাক আর আমার সঙ্গে কোনো কথা বলিও না। আমার বান্দাদের মধ্যে একটি দল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা ইমান এনেছি, তুমি আমাদের ক্ষমা কর ও দয়া কর, তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু; কিন্তু তোমরা তাদের নিয়ে উপহাস করতে এত মাত্রায় যে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং তোমরা তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে পুরস্কৃত করলাম, তারাই হলো সফলকাম (মুমিনুন-১০৬-১১১)।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা

সর্বশেষ খবর