বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বরকতময় নগরী পবিত্র মক্কা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

বরকতময় নগরী পবিত্র মক্কা

হজ উপলক্ষে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবাসহ বিভিন্ন বরকতময় ও দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদর্শনের তৌফিক হয়। তন্মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হলো, আল্লাহতায়ালার পবিত্র ঘর। যে ঘরকে লক্ষ্য করে এই হজের বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। সেই পবিত্র ঘর সম্পর্কে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো মক্কায়, উহা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য হিদায়াতের দিশারী।’ (সুরা আলে ইমরান-৯৬) এই ঘরকে পবিত্র কাবা গৃহ, আল বায়তুল আতিক, আল বায়তুল হারাম এবং মসজিদে হারাম বলা হয়।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মসজিদে হারামে নামাজের ফজিলত অন্য মসজিদের তুলনায় এক লাখ গুণ এবং আমার মসজিদে এক হাজার গুণ আর বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় করলে পাঁচ শত গুণ বেশি নামাজের সওয়াব হবে। (বায়হাক্বী-সহিহ) বর্তমান কাবা গৃহের উত্তর দিকে সংযুক্ত অংশের নাম ‘হাতিমে কাবা’। কোরাইশ বংশের লোকজন কাবা গৃহ নির্মাণকালে অর্থ জোগানের অভাবে এই অংশটুকু ছেড়ে তারা কাবা ঘর নির্মাণ করেছিল। তবে কাবা গৃহের মূল পরিধি বোঝার জন্য তারা সামান্য উঁচু দেয়ালের মাধ্যমে স্থানটি চিহ্নিত করে রেখেছিল। যা আজও এভাবে চিহ্নিত আছে। এ অংশটুকু কাবা গৃহের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই অংশে নামাজ আদায় করার সুযোগ হলে তা কাবা গৃহের ভিতরে নামাজ আদায়ের সমতুল্য গণ্য হবে। কাবা গৃহের পাশে কাচের বেষ্টনীতে রাখা আছে মাকামে ইবরাহীম নামক একটি পাথর। এটি বেহেশতের ইয়াকুত পাথর। যা কাবা গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে চলন্ত সিঁড়ি হিসেবে ইবরাহীম (আ.) ব্যবহার করতেন। এতে এখনো তার পদ চিহ্ন বিদ্যমান রয়েছে। তাওয়াফ শেষে এই পাথর অভিমুখে দুই রাকআত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ স্থানটিও দোয়া কবুলের অন্যতম মাকাম। মহান প্রভু নির্দেশ করেন, ‘আর তোমরা সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি কাবা গৃহকে মানব জাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তা স্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর।’ (সুরা বাকারা-১২৫)। পবিত্র কাবা গৃহের ডান পাশের একটি কোণকে রুকনে ইয়ামানি বলা হয় এবং এর পরবর্তী কোণে কাবা গৃহের দরজা নিকটবর্তী স্থানে হাজরে আসওয়াদ নামক একটি বেহেশতি পাথর স্থাপন করা আছে। মহানবী (সা.) প্রতি তাওয়াফে রুকনে ইয়ামানি এবং হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতেন। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেন, ‘হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার ফলে যাবতীয় পাপ মুছে দেয়।’ (জামিউস সগীর-সহিহ)। কাবা গৃহের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী তিন মিটার পরিমাণ স্থানকে ‘মুলতাযাম’ বলা হয়। এটি দোয়া কবুলের বিশেষ একটি স্থান। রসুলুল্লাহ (সা.) এবং বিশিষ্ট সাহাবাগণ সেখানে বুক এবং বাহু লাগিয়ে দোয়া করতেন। (আবু দাউদ, ইবনে আবী শাইবাহ)।

হজের একটি ফরজ কাজ হলো, আরাফায় অবস্থান করা। আল্লাহর সৃষ্ট ফজিলতপূর্ণ দিনসমূহের অন্যতম একটি দিন হলো আরাফার দিন। এই দিনে বান্দার ত্রুটি-বিচ্যুতি মুছে দেওয়া হয়, দোয়া কবুল করা হয়। এই দিনে আল্লাহতায়ালা দীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণা নাজিল করেছেন। (সুরা মায়িদাহ-৩) রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শ্রেষ্ঠতম দোয়া হলো, আরাফার দিনের দোয়া। (তিরমিজি)। ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থানের পর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হাজিগণ মুযদালিফা অভিমুখে যাত্রা করেন। ওই রাত মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। সেই রাত তওবা, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে পালন করা হাজিদের জন্য একটি সৌভাগ্যের বিষয়। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘যখন তোমরা আরাফাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করবে তখন মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ (সুরা বাকারা-১৯৮)।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর