শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

আল্লাহর রহমত লাভের উপায়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

ইমান এবং নেক আমল আল্লাহর রহমত লাভের উপায়। হেদায়েত এবং নাজাত রহমতেরই অন্তর্ভুক্ত। আর নেক আমল তখনই হয় যখন আমল ইখলাস এবং সুন্নত মোতাবেক হয়। পক্ষান্তরে যদি আমল রিয়ার সঙ্গে হয়, সুন্নত মোতাবেক না হয়, তাহলে একেই বিদআত এবং শিরকে খফি অর্থাৎ গোপন শিরক বলে। শিরক এবং বেদআত গুনাহের কাজ। সুতরাং এ থেকেও স্পষ্ট হয় যে, হেদায়েত এবং নাজাতের পথ গুনাহ বর্জন এবং নেক আমল।

অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, ‘ইমান থাকলে আমলের প্রয়োজন হয় না। ইমানের বদৌলতে জান্নাত লাভ হবে।’ কথা সত্য। হাদিসে এমন সুসংবাদ বিদ্যমান আছে। তিরমিজিসহ অনেক কিতাবে হাদিসুল বিতাকা নামে প্রসিদ্ধ একটি হাদিসে এই মর্মে বিদ্যমান রয়েছে যে- একজন পাপীকে আল্লাহপাক বলবেন, তোমার কোনো নেক থাকলে তা পাল্লায় ওজনে দাও। সে বলবে, হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই। আল্লাহপাক বলবেন, ‘ওই যে একটি কাগজের টুকরা তাতে তোমার আমল লেখা আছে, তা ওজনে দাও।’ পাল্লা ভরা গুনাহের মোকাবিলায় একটি কাগজের টুকরো কী উপকারে আসবে! বরং লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে বাধ্য হয়ে সে কাগজের ওই টুকরোটি পাল্লায় উঠিয়ে দেবে আর দেখা যাবে যে, নেকের পাল্লা ভারী হয়ে গুনাহর পাল্লা নিচু হয়ে পড়েছে। আল্লাহপাকের বিধান- যার পাল্লা ভারী হবে, সে লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন।

এ বিধান মোতাবেক লোকটি ক্ষমা লাভ করে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। কিন্তু এ হাদিসের অর্থ এই নয় যে, আমলের প্রয়োজন নেই অথবা পাপ করতে কোনো নিষেধ নেই। এই তো হলো বাতিলপন্থিদের আকিদা।

এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যারা কালিমা পড়ে ইমান আনবে এবং আমলের দ্বারা ইমানকে সজীব-সতেজ রাখবে তারা অবশ্যই জান্নাতে যাবে। গুনাহ করলে ইমান সজীব থাকে না, দুর্বল হয়। পক্ষান্তরে দুর্বল ইমানের সঙ্গেও জান্নাত লাভ করবে তবে যদি তওবা করে নেয় অথবা আল্লাহ নিজ দয়ায় ক্ষমা করে দেন তাহলে সেটা হবে ভিন্ন কথা। অন্যথায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর অবশেষে জান্নাতে যাবে। বাতিলপন্থিরা হাদিসের যে অর্থ করেছে তা মোটেই হাদিসের আসল অর্থ নয়। বরং কোরআন-হাদিসের আলোকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল অর্থ সেটাই যা আমি বর্ণনা করেছি। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, এরূপ কতিপয় হাদিসের গলদ অর্থ করে একশ্রেণির পীর-মুরিদ কেবল নফি-এসবাতের জিকিরকে হেদায়েত এবং নাজাতের পথ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে জিকির করে। জিকির করা ভালো; কিন্তু আশ্চর্য যে, তারা কোনো দিন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে না। করার প্রয়োজনও মনে করে না। এমনকি সহিহ শুদ্ধ নামাজের জন্য কয়েকটি সুরাও সঠিক ও শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শেখে না। জিকির আজকারের ধার ধারে না। অপরপক্ষে একশ্রেণির আলেম-ওলামা ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের দেখা যায়, তারা হয়তো তেলাওয়াত করে, কিন্তু জিকির আজকারের ধার ধারে না। অথচ বিশেষ জিকির আজকারের মাধ্যমে অন্তরের কলুষতা দূরীভূত হয়। অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়, অন্তর্দৃষ্টি লাভ হয়। নফসের পরিপূর্ণ ইসলাহ এবং পরিশুদ্ধির জন্য উভয়টিরই অত্যন্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের কথা পবিত্র আয়াত এবং হাদিসেও বর্ণিত আছে। আল্লাহর খাঁটি ওলিগণ এ কারণেই উভয় পথ অবলম্বন করে থাকেন। তাই উভয় শ্রেণির লোকদের জন্য উচিত শরিয়তের পুরোপুরি অনুশীলন করা। আল্লাহপাক আমাদের হেদায়েত ও নাজাতের সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দিন!

আল্লাহপাক আমাদের কোরআন-হাদিসের আলোচনা শুনে বোঝা ও আমল করার তৌফিক দান করুন। বোঝার দরকার এজন্য যে, আমল করতে হবে। আর আমলের প্রয়োজন এজন্য যে, আল্লাহপাক মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি এবং শারীরিক ও আধ্যাত্মিক সফলতার জন্য তার আমলকে মাধ্যম বানিয়েছেন। যেমন যারা দুনিয়াদারি করে তাদের দুনিয়াবি সফলতা আমল তথা কর্মের ওপর নির্ভরশীল। যারা আমল তথা কাজ করে তারা নিষ্ফল হয় না। কর্মকারদের সব মানুষই ভালোবাসে। সমাজের লোকেরা তাদের শ্রদ্ধা করে।

কোরআনে কারিমের বিধানাবলির প্রতি যদি মানুষ সঠিক জ্ঞানে চিন্তা করে তাহলে বুঝবে যে, এগুলো সব মানুষের কল্যাণের জন্যই। আমরা জানি, দুনিয়াতে মানুষের জীবন খুবই অল্প দিনের জন্য। এখানে একজন অপরজনকে প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে পারে। এখানে যদি কেউ ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে তার জীবন হয় নিষ্ফল। মাতা-পিতা তাকে গালি দেয়। এ দুনিয়া থেকে আমল না করে গেলে আল্লাহপাকও আখেরাতে খাবার দেবেন না। সুস্বাদু খাবারের পরিবর্তে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দেবেন এবং ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করাবেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শুধু আমল করলেই চলবে না বরং কৃত প্রতিটি শরিয়তের নিয়ম মোতাবেক আমল পরিশুদ্ধ হতে হবে। যেমন ওষুধ ভুল প্রয়োগের দ্বারা রোগ দূর হয় না, বরং আরও বেড়ে যায়। ঠিক আমলও তেমনই। আমল ভুল হলে উল্টো রিয়েকশন করে। অশুদ্ধ আমল বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমল হলেও প্রকৃতপক্ষে আমল হয় না। যেমন- কোনো লোক অজু ছাড়া নামাজ পড়লে, মানুষ তাকে নামাজি বলবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে নামাজি নয়। অশুদ্ধ আমলের দ্বারা আমলের সুফল পাওয়া যায় না। কতক মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে, আবার মিথ্যাও বলে, গিবত করে, চুরি করে অথচ আল্লাহপাক কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন- নামাজ তাকে জোরপূর্বক গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর