শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জিলহজ মাসের আমল

মো. আবু তালহা তারীফ

জিলহজ মাসের আমল

জিলহজ মাস অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও পুণ্যময় এবং অধিক সম্মানিত একটি মাস। চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা পবিত্র ও সম্মানিত করেছেন। তন্মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ সুরা তাওবা-৩৬। হাদিস শরিফে এসেছে, ওই চারটি সম্মানিত মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। জিলহজ মাসকে হজের মাস বলা হয়। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ থেকে ৬ দিনেই হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। জিলহজ মাসের মধ্যে প্রথম ১০ দিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম দিন। প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা এ দিনগুলোর কসম পর্যন্ত করেছেন। দিনগুলোতে ইবাদত ও আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়।’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ-সংগ্রামও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ (বুখারি শরিফ)।

এ জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন করা, রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার গুরুত্ব রয়েছে। নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ, দরুদ পাঠ এবং তওবা-ইস্তিগফার, অতিরিক্ত দোয়া করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখা অন্যতম নেক আমল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই সাওয়াবের কাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়, প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো।’ তিরমিজি শরিফ।

জিলহজ মাসের ৯ তারিখকে আরাফার দিন বলা হয়। আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত রয়েছে। যা রসুল (সা.) থেকে প্রমাণিত। আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে তা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের পাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।’ মুসলিম শরিফ। মুসলিম শরিফে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের অন্য একটি আমলের কথা বলা হয়েছে। এ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে চুল, গোঁফ, নখ, বগল ও অন্যান্য স্থানের লোম বা পশম না কাটা। উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ জিলহজ মাসের অন্যতম একটি আমল হলো, ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখের আসরের নামাজ পর্যন্ত অর্থাৎ মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। তাকবিরে তাশরিক হলো- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ ফরজ নামাজের পর প্রত্যেকের ওপর অন্তত একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা কর্তব্য। ফাতাওয়ায়ে শামি, বাহরুর রায়েক। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে জিলহজ মাসের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমাদের সব ইবাদত কবুল করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর