রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআনের দোয়া

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআনের দোয়া

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ডাকা, প্রার্থনা করা, চাওয়া, বিনীত নিবেদন করা। সৃষ্টিকর্তার কাছে বান্দা বিনয়, নম্রতা, ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মনের বাসনা পূরণের আশা এবং নিজ দোষত্রুটি ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নামই হলো দোয়া। পবিত্র কোরআনে নবী-রসুলরা কীভাবে কায়মনোবাক্যে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করেছেন তা আমাদের জানা উচিত। তাহলে আমরাও সেভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়া ও জান্নাত লাভের আশায় সেভাবে দোয়া করতে পারি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ইব্রাহিম ও ইসমাইল যখন এই ঘরের ভিত্তি উঠাচ্ছিল, (তখন তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করল) হে আমাদের রব, আমরা যে উদ্দেশ্যে এ ঘর নির্মাণ করেছি তা তুমি আমাদের কাছ থেকে কবুল কর, অবশ্যই তুমি সবকিছু জানো ও শুনো।’ তারা আরও বলল, ‘হে আমাদের রব আমাদের উভয়কে তুমি তোমার অনুগত মুসলিম বান্দা বানিয়ে দাও, হে মালিক, তুমি ইবাদতের আনুষ্ঠানিক নিয়মনীতিসমূহ আমাদের দেখিয়ে দাও এবং তুমি আমাদের ওপর দয়াপরবশ হও, অবশ্যই তুমি তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৭-১২৮)।

সবচেয়ে সহজ ও কল্যাণকর দোয়া, হে আমাদের রব, তুমি দুনিয়ায় আমাদের কল্যাণ দাও, কল্যাণ দাও পরকালেও এবং তুমি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সুরা বাকারা, আয়াত ২০১)। রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানজনক কোনো জিনিস নেই। (তিরমিজি শরিফ)। কবুল হওয়ার আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কর। তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন- ১. রোজাদার ব্যক্তির ইফতার করার সময় দোয়া। ২. ন্যায়বান বিচারকের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া (তিরমিজি শরিফ)।

আমাদের জীবন গুনাহতে ভরা। তাই আমাদের উচিত হবে বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া করা। গুনাহ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে আকুতি ও কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করতে হবে। ইউসুফ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন এই বলে, ‘হে আমার রব, তুমি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছ, তুমি আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ, হে আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা, দুনিয়া এবং আখেরাতে তুমিই আমার একমাত্র অভিভাবক, একজন অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমার মৃত্যু দিও এবং পরকালে তুমি আমাকে নেককার মানুষের দলে শামিল কর।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০১)। আল্লাহর দরবারে পেশ করার জন্য দোয়া পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে আমাদের রব, তুমি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও, আমাদের আমলনামা থেকে আমাদের গুনাহসমূহ মুছে দাও, তোমার নেক লোকদের সঙ্গে তুমি আমাদের মৃত্যু দান কর। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯৩)। এ আয়াতটিতে তিনটি আবেদন করা হয়েছে। এক. আমরা প্রতিনিয়ত অপরাধ করছি, গুনাহ করছি তার জন্য ক্ষমার আবেদন করা হয়েছে। দুই. আমাদের আমলনামায় যত গুনাহ রেকর্ড করা আছে তা মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে এবং তিন. নেককার ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গে মৃত্যু দান করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ। পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, হে আমাদের রব, তুমি তোমার নবী-রসুলদের মাধ্যমে যেসব পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছ তা তুমি আমাদের দান কর এবং কেয়ামতের দিন তুমি আমাদের অপমানিত কর না, নিশ্চয়ই তুমি ওয়াদার বরখেলাপ কর না। (সুরা ইমরান, আয়াত ১৯৪)। রসুল (সা.) যখন কাফেরদের মৌখিকভাবে দাওয়াত ও ওয়াজ তাবলিগের মাধ্যমে হেদায়েতের আশা পরিত্যাগ করেন তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁকে ওহি হিসেবে কোরআনে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। হাসবি আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রব্বুল আরশিল আজিম (আল্লাহতায়ালাই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, সমস্যা সংকটে আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের একচ্ছত্র অধিপতি। (সুরা তওবা, আয়াত ১২৯)। নুহ (আ.)-কে তাঁর জাতি পাগল বলে আখ্যায়িত করল। তাঁকে ধমকও দেওয়া হলো। তখন তিনি আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করলেন, রাব্বি আন্নি মাগলুবুন ফান্তাসির (হে আল্লাহ আমি একান্ত অসহায়, তুমি এদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নাও। (সুরা কামার, আয়াত ১০)। নবী ইউনুস (আ.) তাঁর কওমের লোকদের দীনের পথে আনার চেষ্টা না করে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া জনপদ ত্যাগ করলে আল্লাহ তাঁর ওপর রুষ্ট হন এবং তাঁকে শাস্তি দেন। তাঁকে মাছের পেটে এবং সাগরের অতলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এই কঠিন বিপদের সময় তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করেন, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন। (হে আল্লাহ তুমি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তুমি পবিত্র মহান, অবশ্যই আমি গুনাহগার/অপরাধী। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭)। দয়াময় আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন এবং ঘোষণা দিলেন, অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করলাম। আর এভাবেই আমি আমার মোমেন বান্দাদের সব সময় উদ্ধার করি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৮)। সুবহানাল্লাহ। সুতরাং আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, এই জীবন চলার পথে বিপদ-আপদ আমাদের সঙ্গী। সুতরাং আমাদের প্রকৃত মোমেন হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। কায়মনোবাক্যে চাইতে হবে। তবেই আমরা তাঁর সাহায্য আশা করতে পারি। বিপদ যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ দোয়ায় কী চাইতে হবে তা সুরা বাকারার ২৮৬ নম্বর আয়াতে সুন্দরভাবে তাঁর বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন এবং এই আয়াতটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ দোয়া। সুতরাং আমরা কোরআনের দোয়াগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের দোয়া কবুল করে পার্থিব জীবনে বিপদমুক্ত রাখতে সাহায্য করবেন তেমনি পরকালের জীবনে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর